মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

সার্ক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ

সার্ক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ

সার্ক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তবে প্রথম স্থান দখল করেছে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় সার্ক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা প্রতিবেদন-২০১৩ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। এছাড়া আগামী ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব্য বলেও উল্লেখ করা হয়।

রবিবার পরিকল্পনা কমিশনে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। সভাপতিত্ব করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম ও ইউএনডিপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর নিহোলাস বেরিশফোর্ড।

১৩তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে সার্কভুক্ত দেশসমূহের সরকার প্রধানরা সার্ক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেন। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এতে চারটি ক্ষেত্রে ২২টি লক্ষ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- নবজাতক মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা হচ্ছে স্টার পারফরমার আর দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ, তৃতীয় নেপাল। গড় আয়ু লাভের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা স্টার পারফরমার, দ্বিতীয় বাংলাদেশ ও নেপাল, তৃতীয় অবস্থানে ভুটান। পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা স্টার পারফরমার, বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে এবং তৃতীয় অবস্থানে নেপাল। মাতৃমৃত্যু হার কমানোর ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা স্টার পারফরমার, দ্বিতীয় অবস্থানে নেপাল এবং তৃতীয় ভুটান। স্যানিটেশন উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্টার পারফরমার শ্রীলঙ্কা, দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ এবং তৃতীয় অবস্থানে পাকিস্তান। ফরটিলিটি রেটে বাংলাদেশ স্টার পারফরমার, দ্বিতীয় অবস্থানে শ্রীলঙ্কা ও ভুটান এবং তৃতীয় ভারত। নবজাতকের টিকাদানের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা স্টার পারফরমার, বাংলাদেশ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে ভুটান।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, গত ৬ বছর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা থাকা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিকভাবে এগুচ্ছে। আমাদের জিডিপি'র প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত স্থিতিশীল। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারও স্থির রয়েছে। আমাদের রপ্তানি আয়ের হার প্রতি বছর ২০-২২ ভাগ করে বেড়েছে। বাজেট ঘাটতি ৪ ভাগের কম। এছাড়া এ অর্থ বছরে জিডিপি'র প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি জ্ঞান নির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় পরিণত হবে। আমরা ভবিষ্যত নির্মাণের জন্যে বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করছি। শিক্ষা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র্য নিরসন করে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন করা একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সার্ক চেষ্টা করছে এ অঞ্চলের দারিদ্র্য কমানোর জন্য। বাংলাদেশ এমডিজি অর্জনে সফল হয়েছে। তবে সার্ক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিছুটা পিছিয়ে আছে। কিন্তু গত দুই দশকে দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। সামাজিক উন্নয়নও অনেক ভালো হয়েছে।

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সরকার দেশের উত্তর-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম এবং উপকূলীয় অঞ্চলে উন্নয়ন কার্যক্রমে উত্তরোত্তর বরাদ্দ বৃদ্ধি করছে। আমাদের বাজেট বরাদ্দ আরও যথাযথ হতে হবে। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, এ প্রতিবেদনটি সার্ক সচিবালয়ে পাঠানো হবে। তারপর সমন্বিত আকারে আর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা এগিয়েছে, কারণ তাদের বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ব্যাপক।

প্রতিবেদনে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নির্মূলকরণ অংশে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৬৬ শতাংশ কম ওজনের ছিল। ২০১১ সালে এসে এ হার ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শিশু ও মা পুষ্টি জরিপ অনুযায়ী কম ওজনের শিশু রয়েছে ৩৪ শতাংশ। নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি, হামের টিকা গ্রহণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া দারিদ্র্যের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিতকরণ ও খাদ্য তালিকার সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে- ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে সরকার হতদরিদ্র জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রকৃত আয় বাড়ানোর জন্য সম্পদ বণ্টনের ওপর মনোযোগ দিয়েছে।

 

 

 

সর্বশেষ খবর