বৃহস্পতিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

মামলা হচ্ছে কৃষকের নামে বেচে যাচ্ছে রাঘব বোয়াল

মামলা হচ্ছে কৃষকের নামে বেচে যাচ্ছে রাঘব বোয়াল

ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকার ঋণ নিয়ে ফেরত না দিয়েও বেঁচে যাচ্ছেন রাঘববোয়ালরা। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিলেও ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকের নামে মামলা করছে ব্যাংকগুলো। ৫৭০ কোটি টাকার জন্য দুই লাখ কৃষকের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংক। মাত্র ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় এ ধরনের মামলার জালে জড়িয়ে পড়ছেন কৃষক। গত ২০ বছরে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে এমন কৃষকের নামেই এ মামলা হয়েছে। গত এক বছরেই ১০ হাজার কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পারোয়ানা জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ১০ হাজার টাকার জন্য একজন কৃষককে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু শত কোটি টাকা নিয়ে যারা ফেরত দেয় না, তাদের কিছুই হয় না।

জানা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে অনেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না। গত পাঁচ বছরেই কয়েকটি গ্রুপ সরকারের একাধিক ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি লুট করে নিয়ে গেছে। এ ছাড়া এলটিআর, ভুয়া এলসি জালিয়াতির মাধ্যমে এ সময় ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি লোপাট হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ১৯৯১ সাল থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৫ হাজার ৩৭২ জন কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংক। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এই মামলাগুলো দায়ের করে। কৃষকের কাছে এসব ব্যাংকের বকেয়া অর্থের পরিমাণ ৫৭০ কোটি টাকা। গড়ে প্রতি কৃষকের কাছে পাওনা সাড়ে ২৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে গত বছরের জুলাই পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৫৪৫ জন কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছেন আদালত। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষকের কাছে সবচেয়ে বেশি বকেয়া আছে বিকেবির। এ পর্যন্ত ব্যাংকটির কৃষি ঋণখেলাপির পরিমাণ ২৬৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ জন্য ব্যাংকটি মামলা করেছে ৯১ হাজার ৮৭২ জন কৃষকের বিরুদ্ধে। গড়ে প্রতি কৃষকের কাছে ব্যাংকটির সুদসহ পাওনার পরিমাণ ২৯ হাজার ৩৩৭ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটি ৫৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকার জন্য মামলা করেছে সাড়ে ৩৪ হাজার কৃষকের বিরুদ্ধে। প্রতি কৃষকের কাছে গড়ে ব্যাংকটির সুদসহ পাওনা ১৫ হাজার ৫৭১ টাকা। ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা পাওনা আদায়ে ২১ হাজার ৭০৭ জন কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সোনালী ব্যাংক। এ ব্যাংকের সুদসহ প্রতি কৃষকের কাছে তাদের পাওনা ২৪ হাজার ৬৫১ টাকা। ৪৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা আদায়ের জন্য জনতা ব্যাংক মামলা করেছে ২০ হাজার ৪৮৭ জন কৃষকের বিরুদ্ধে। সুদসহ ব্যাংকটির প্রতি কৃষকের কাছে পাওনা ২৩ হাজার ৩৪ টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক মামলা করেছে ৪৫ হাজার ১৩৭ কৃষকের বিরুদ্ধে। তাদের কাছে পাওনা ১৪২ কোটি ২০ লাখ টাকা। রূপালী ব্যাংকের পাওনা ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলো ঋণ পেতে একজন কৃষককে নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। আদায়ের ক্ষেত্রে তাদের হয়রানির মাত্রা আরও বেশি। ব্যাংকগুলো প্রথাগত পদ্ধতিতে কৃষকের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে। এ জন্য এই মামলাগুলো করে। এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। টাকা নিয়ে কোনো কারণ ছাড়া ফেরত দেয় না এমন কৃষকের সংখ্যা কম। যারা একেবারেই খেলাপি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তাই বলে ঢালাওভাবে মামলা করা কোনো সমাধান নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, মামলা দিয়ে টাকা আদায় করা যায় না। তাতে দীর্ঘসূত্রতা আরও বেড়ে যায়। সময় দিয়ে কৃষকের কাছ থেকে টাকা আদায় করা সহজ।

 

 

সর্বশেষ খবর