সোমবার, ২৭ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

বেসরকারি পেনশন বাস্তবায়ন প্রশ্নে রশি টানাটানি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বেসরকারি পেনশন বাস্তবায়ন প্রশ্নে রশি টানাটানি

বেসরকারি কর্মজীবীদের জন্য পেনশন চালুর আগেই কে তা বাস্তবায়ন করবে তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বলছে, তারা যেহেতু সরকারি পেনশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত তাই কাজটি তাদের মাধ্যমেই হওয়া উচিত। একই মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বলছে, বেসরকারি খাতের পেনশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের সঙ্গে বীমা খাত জড়িত থাকবে। তাই ব্যাংক-বীমার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে পেনশন বাস্তবায়ন কার্যক্রম তাদের হাতেই থাকা উচিত। এ পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। চিঠিতে পেনশন বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে মতামত চাওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী পেনশন বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্থ বিভাগের। বেসরকারি খাতের পেনশন প্রক্রিয়াটিও অর্থ বিভাগের মাধ্যমেই হবে। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। কিছুটা সময় লাগবে। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত এনএসএসএসে (জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল) সরকারি পেনশন বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্থ বিভাগকে এবং বেসরকারি পেনশন বাস্তবায়নের দায়িত্ব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজটি ব্যাংকিং বিভাগই বাস্তবায়ন করার কথা।

 

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল— বেসরকারি খাতে পেনশন দেওয়া। সরকারের এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগকে বেসরকারি খাতের জন্য পেনশন স্কিম চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। বেসরকারি পেনশন বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি প্রকল্প ব্যাংকিং বিভাগ হাতে নিয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রায় ৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এরই মধ্যে তা অনুমোদন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকেও ওই প্রকল্পের ডিপিপি চাওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এ পেনশন কর্মসূচি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পেনশন সুবিধা ভোগ করছেন। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি সংগঠিত খাতের প্রায় ৩০ লাখ কর্মজীবী পেনশন সুবিধার আওতায় আসবেন। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সাধারণ ভবিষ্য তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটির পাশাপাশি পেনশনও চালু রয়েছে, যার পুরোটাই সরকার দেয়। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি রয়েছে। গ্র্যাচুইটি বহাল রেখে কীভাবে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বেসরকারি পেনশন চালু করা যায়, সেটাই এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এজন্য ‘প্রাইভেট পেনশন রেকর্ড কোম্পানি’ ও ‘প্রাইভেট পেনশন ট্রাস্ট’ গঠন করে বেসরকারি খাতকে পেনশন স্কিমের আওতায় আনার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি খাতের পেনশন কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে গত নভেম্বরে অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যান্ড প্রাইভেট পেনশন মার্কেট ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় সামাজিক বীমা ও বেসরকারি খাতে পেনশন স্কিম ডেভেলপমেন্টের কাজ চলছে।

সর্বশেষ খবর