বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

১০ খাতে ৭ বিলিয়ন ডলার সৌদি বিনিয়োগের সম্ভাবনা

রুহুল আমিন রাসেল

১০ খাতে ৭ বিলিয়ন ডলার সৌদি বিনিয়োগের সম্ভাবনা

মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজকীয় সফরে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে দুই দেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি-কূটনীতি ও সামরিক সম্পর্ক। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের বড় ১০ খাতে ৫ থেকে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ সৌদি বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই বিনিয়োগ বার্তা নিয়ে আগামী নভেম্বরে ঢাকা সফরে আসছে সৌদি ধনকুবের একটি বড় প্রতিনিধি দল। সরকারি-বেসরকারি খাতে এ বিনিয়োগ পেতে হোমওয়ার্ক শুরু করতে যাচ্ছে পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।  বিষয়টি নিশ্চিত করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় সৌদির সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন এ সরকারের সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ উচ্চতায় আসীন। তারই আলোকে বাংলাদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে চায় সৌদি আরব। আমাদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে সৌদি এখানে বিনিয়োগ নিয়ে আসছে। আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য সৌদিকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 

সৌদি বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন— এফবিসিসিআইর সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়াতে সৌদি অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে চায়। বাংলাদেশের দ্রুতিগতির উন্নয়ন তাদের নজর কেড়েছে। তাই বাংলাদেশের ১০টি অগ্রাধিকার খাতে সৌদি আরব কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি, বন্দর, বস্ত্র, চামড়া শিল্প, পাট, সিরামিক, পেট্রো-কেমিক্যাল, ফার্মাসিউটিক্যালস, শিপ বিল্ডিং, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল ও ইলেকট্রনিকস, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি, মেরিন ও অন্যান্য অবকাঠামো প্রকল্প, হাইটেক ম্যানুফেকচারিং এবং মাইক্রো প্রসেসরের মতো প্রকৌশল খাতগুলোর মধ্যে সরকারের অগ্রাধিকার ১০ খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন সৌদি ধনকুবেরা। এক্ষেত্রে সৌদি ব্যবসায়ীদের  সরকার যেসব সুবিধা দিতে পারে, তারমধ্যে রয়েছে— নিরাপত্তা প্রদান, কর অবকাশ সুবিধা, যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর রেয়াত, রয়্যালটির রেমিট্যান্স, শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগ, অনিয়ন্ত্রিত প্রত্যাহার নীতি, লভ্যাংশ ও পুঁজি দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুবিধা ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইর প্রথম সহসভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে সৌদির সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হয়েছে। আর কূটনীতিতে কখনো কখনো রাজনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় হলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক হয়। তবে সৌদি যে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তাতে আমাদের সফল হওয়ার ক্ষেত্রে বেজা, পিপিপি কর্তৃপক্ষ ও বিনিয়োগ বোর্ডকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

জানা গেছে, সৌদি সরকার তার বিশেষায়িত তহবিল থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে তারও একটি তালিকা ঢাকার কাছে চেয়েছে সৌদি। তবে বিনিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নভেম্বরে সৌদি ঢাকা সফর শেষে নেবে বলে সূত্র জানায়। বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর সৌদি সফরকালীন গত ৬ জুন জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ— জেসিসিআই আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সংগঠনটির ভাইস চেয়ারম্যান মাজেন এম ব্যাটারজি বলেন, সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশ ‘সেকেন্ড হোম’ হতে পারে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ পর্যাপ্ত নয়, এর পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির বিগত ২৫ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সৌদি আরবের সঙ্গে বাণিজ্যে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। প্রতিবছর বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, বিপরীতে রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। তবে প্রতিবছরই সৌদি থেকে বাংলাদেশের আমদানি যেমন বাড়ছে, তেমনি রপ্তানিও বাড়ছে।

সর্বশেষ খবর