শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

রপ্তানি লক্ষ্য অর্জনে সরকারের অ্যাকশন প্ল্যান

রুহুল আমিন রাসেল

রপ্তানি লক্ষ্য অর্জনে সরকারের অ্যাকশন প্ল্যান

জঙ্গি ঝুঁকি আর ব্রেক্সিটের প্রভাব থেকে দেশের রপ্তানি খাতকে মুক্ত রাখতে অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। পোশাক রপ্তানিতে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে ভারতীয় সরকারের বিশেষ প্যাকেজ অনুমোদন হওয়ায় উন্নত বিশ্বে বাজার হারানোর যে আশঙ্কা ব্যবসায়ীরা করছেন, তাও পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। সরকারের সূত্রগুলো জানায়, রপ্তানি বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য করণীয় ঠিক হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা জানান, গুলশানে জঙ্গি হামলা আর ব্রেক্সিটের (ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া)  চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর ভরসা করে এবার ৩৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এটি সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে অর্জিত রপ্তানি আয়ের চেয়ে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ বেশি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রপ্তানি আয়ের এই লক্ষ্য অর্জনে নতুন কৌশলের দিকে ঝুঁকছে সরকার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। বছর শেষে এই খাতে আয় দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২ শতাংশ বেশি। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় এটি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে জঙ্গি হামলার পাশাপাশি  ব্রেক্সিট ইস্যু ও রপ্তানি খাতে ভারতের নতুন প্রণোদনার বিষয়টি দেশের পোশাক রপ্তানিকে প্রতিযোগিতার মুখে ঠেলে দেবে কিনা এ বিষয়গুলো নিয়েই এখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের যেভাবে সরকার মোকাবিলা করেছে, এটি পশ্চিমা বিশ্বে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সরকারের অবস্থানকে স্পষ্ট করেছে। সরকারের এই শক্ত অবস্থানের কারণে বিশ্বে ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে না বাংলাদেশ। এ ছাড়া তৈরি পোশাকে বাংলাদেশ আগে থেকেই প্রতিযোগিতা করে বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশের জায়গা করে নিয়েছে। এ জায়গা থেকে সহজে বাংলাদেশকে সরানো যাবে না। তবে রপ্তানি আয় বাড়াতে নতুন বাজার অনুসন্ধান ছাড়াও নতুন নতুন পণ্যের রপ্তানি সম্প্রসারণে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। পোশাকশিল্প উদ্যোক্তা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্রেক্সিট ইস্যুতে ইতিমধ্যে পুরো ইউরোপের অর্থনীতিতে ছড়িয়ে পড়েছে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা। এটি যদি চলমান থাকে তবে সেখানে চাহিদা কিছুটা কমবে যা আমাদের রপ্তানি খাতে প্রভাব ফেলতে পারে। তার দাবি, গুলশান হামলার পর রপ্তানি শিল্প হিসেবে পোশাক খাতেও কিছুটা নেতিবাচ প্রভাব পড়বে। এক্ষেত্রে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য অর্জনে সরকারের উচিত হবে নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জহির উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, রপ্তানি আয় নিয়ে ব্যবসায়ীরা কিছু ঝুঁকির কথা বলেছেন, আমরা সেগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের রপ্তানি আয় মূলত তৈরি পোশাক নির্ভর। কোনো সংকট হলেই এ খাত নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। সে কারণে আমরা রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং নতুন বাজার অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। কর্মকর্তারা জানান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কিছু দেশে আমাদের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। বাংলাদেশের তৈরি এসব পণ্য তুলনামূলক সস্তা। এর ফলে আফ্রিকার যে দেশগুলো রয়েছে সেই দেশগুলোতে আমাদের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের বাজার ধরা সহজ হবে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাফরুহা সুলতানা বলেন, বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরে যে টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে সেটিও যাতে অর্জন করা যায় সে লক্ষ্যে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ভারতে পোশাকশিল্পে বিশেষ প্রণোদনা এবং গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের হামলা রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্বে রপ্তানি বাণিজ্যের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজারে ভারতের প্রণোদনা বাংলাদেশি পোশাকশিল্পে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

সর্বশেষ খবর