বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
পুঁজি-বিনিয়োগ চুক্তির প্রস্তাব

মিয়ানমারই এখন বাংলাদেশকে চাইছে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

মিয়ানমারই এখন বাংলাদেশকে চাইছে

গত দুই দশক ধরে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। পার্শ্ববর্তী ওই দেশটির পক্ষ থেকে তেমন কোনো সাড়া মিলেনি। তবে এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। উল্টো মিয়ানমারই এখন চাইছে বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগ নিতে। এজন্য দেশটি দ্বিপক্ষীয় পুঁজি বিনিয়োগ, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ চুক্তি করতে চাইছে। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত খসড়াও পাঠিয়েছে দেশটি। সরকারি সূত্রগুলো জানায়, দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক তৈরি করতে ২০১১ সাল থেকে দ্বিপক্ষীয় পুঁজি-বিনিয়োগ চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। বেশ কয়েকবার খসড়ার আদান-প্রদান শেষে ২০১৩র সালের পর এ নিয়ে আর তেমন কোনো কাজ হয়নি। সম্প্রতি মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ওই খসড়া চুক্তির একটি সংশোধনী পাঠানো হয়েছে। গত ৯ মে দেশটি কিছু সংশোধনী এনে খসড়াটি বাংলাদেশে পাঠায়। পরে ওই খসড়ার বিষয়ে মতামত গত মাসে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে শিল্প মন্ত্রণালয়। মতামতের জন্য মিয়ানমারের দেওয়া খসড়ার কপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দ্বিপক্ষীয় পুঁজি বিনিয়োগ চুক্তির বিষয়ে মিয়ানমারের একটি খসড়া আমাদের হাতে এসেছে। আমরা সেটি পর্যালোচনা করে দেখছি। দ্বিপক্ষীয় এই চুক্তি হলে দুদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ খসড়াটি বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত খসড়ার প্রায় অনুরূপ। শুধুমাত্র দু-একটি শব্দ সংযোজন বিয়োজন করা হয়েছে, যা দ্বারা চুক্তির মৌলিক কোনো বিষয়বস্তু পরিবর্তন হয়নি। এরই মধ্যদিয়ে চুক্তির ব্যাপারে পার্শ্ববর্তী দেশটির ইতিবাচক মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা আরও জানান, দুদেশের মধ্যে ১৯৯৪ সাল থেকে চুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্যিক সম্পর্ক শুরু হলেও ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের তেমন কোনো বিকাশ ঘটেনি দুদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কও মিয়ানমারের অনকূলে। বাংলাদেশে সেখানে যা রপ্তানি করে আমদানি করে তার চেয়ে অনেক বেশি। ক্রমবর্ধমান এই বাণিজ্য বৈষম্য কমাতে হলে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তির প্রয়োজন রয়েছে।

এছাড়া নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির গণতন্ত্রীপন্থি নেতা অং সান সূচির দল ক্ষমতায় আসার পর ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে দেশটির নীতিরও পরিবর্তন ঘটেছে। পশ্চিমা দেশগুলোও মিয়ানমারে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। গ্যাস ও শিল্পের কাঁচামাল সহজলভ্য হওয়ায় বাংলাদেশের অনেক শিল্পোদ্যোক্তাও পার্শ্ববর্তী দেশটিতে বিনিয়োগ করতে চাইছেন। তবে দুই দেশের মধ্যে পুঁজির আদান-প্রদান এবং কোনো ধরনের বিনিয়োগ চুক্তি না থাকায় অবাধে সেই সুযোগ নিতে পারছে না বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তারা। এ বিষয়টি মিয়ানমারের বাণিজ্য কর্তৃপক্ষেরও নজরে এসেছে। ফলে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির পাশাপাশি দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর জন্য  এখন  মিয়ানমারই এগিয়ে এসেছে।

সর্বশেষ খবর