মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
সাত বছরে অতিরিক্ত গেছে ২ হাজার কোটি টাকা

লাগামছাড়া ব্যয় বীমা কোম্পানির

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

লাগামছাড়া ব্যয় বীমা কোম্পানির

ব্যবস্থাপনার নামে লাগামহীন খরচে মেতে উঠেছে দেশের বীমা কোম্পানিগুলো। তারা ব্যবসা বাড়াতে একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এজেন্টদের বেশি কমিশন দিচ্ছে। এতে করে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। গত সাত বছরে বীমা কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত ২ হাজার কোটি টাকা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে খরচ করেছে। ফলে সময়মতো বীমা দাবি পূরণ করতে পারছে না অনেক কোম্পানি। আবার বীমা কোম্পানির মুনাফার টাকা শেয়ারধারীদের মধ্যে বণ্টন হয়, যার মধ্যে সাধারণ শেয়ারধারীও রয়েছে। তবে সাধারণ ওই শেয়ারধারীদের ঠকানোর কৌশল হিসেবেও অনেক কোম্পানি অতিরিক্ত ব্যয় দেখাচ্ছে বলে জানা গেছে। গত ১৮ আগস্ট এক চিঠিতে সীমার অতিরিক্ত ব্যয় করার জন্য ৪৩টি বীমা কোম্পানিকে অভিযুক্ত করার বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। বীমা খাতের এই অব্যবস্থাপনা ও আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)। সংস্থাটি অন্তত ১৭টি বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও সীমার অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। তবে আর্থিক অনিয়মে জড়িত বীমাগুলোর পক্ষে কথা বলে দুদকের তদন্তের বিরোধিতা করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে নালিশ করেছেন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিইএ) প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন। গত ১১ আগস্ট এ বিষয়ে বিইএ’র প্রেসিডেন্ট অর্থমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখলে ওই চিঠিতে অর্থমন্ত্রী নোট লিখে দেন, ‘দুর্নীতি কমিশনের বিষয় আমাদের করার কিছু নেই’। ওই চিঠিতে শেখ কবির হোসেন অবশ্য বীমা কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত ব্যয়ের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বীমা আইন ২০১০ প্রবর্তন ও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠনের পূর্বে বীমা শিল্প বিলুপ্ত বীমা অধিদফতরের প্রধান বীমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হতো। বিগত সময় থেকে ১৯৫৮ সালের বীমা বিধির ৪০ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা ব্যয় পরিচালনা করা হত। তদানীন্তনকালে হয়তোবা ব্যবস্থাপনা ব্যয় বিধির নির্দেশানুযায়ী সিলিংয়ের মধ্যে মেটানো সম্ভব হতো। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, অফিস ভাড়া বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, সরকারি ভ্যাট ও অন্যান্য কর বৃদ্ধি, অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য খাতের ক্ষেত্রবিশেষ কয়েক গুণ ব্যয় বৃদ্ধি হলেও অদ্যাবধি উক্ত নিয়মানুযায়ী বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’ এছাড়া বীমা কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়টি মীমাংসিত বিষয় বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন বিইএ’র প্রেসিডেন্ট।

সূত্রগুলো জানায়, বীমা খাতের এই অরাজক পরিস্থিতিতে লাগাম টেনে ধরতে পারছে না বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। এ বিষয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে অভিযুক্ত বীমা কোম্পানিগুলোর কাছে অতিরিক্ত ব্যয়ের তথ্য চাওয়া হলেও তারা সঠিকভাবে ওই তথ্য দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে বীমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে কয়েক দফা চিঠিও দিয়েছে আইডিআরএ। তবে তাতেও তেমন কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ নিজেও বীমা কোম্পানিগুলোর এ ধরনের লাগামহীন খরচের বিষয়টি তুলে ধরে সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় তার প্রতিষ্ঠানের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন গণমাধ্যমে। চলতি বছরের এপ্রিলে ইনস্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরামের (আইআরএফ) সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এম শেফাক আহমেদ বলেন, দেশের বীমা কোম্পানিগুলো ব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত ব্যয় করছে। এসব ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাবে এ ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি আরও জানান, গত সাত বছরে বীমা কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত ২ হাজার কোটি টাকা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে খরচ করেছে। ফলে সময়মতো বীমা দাবি পূরণ করতে পারছে না কোম্পানিগুলো। একই অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, সাধারণ ও জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান মিলে দেশে ৭৭টির মতো বীমা কোম্পানি রয়েছে। এত প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে পরিমাণ লোকবল প্রয়োজন আইডিআরএ’র নেই। ফলে বীমা খাতের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি। ম্যাসেজ পাঠানোর পরও উত্তর দেননি। গত সপ্তাহে মতিঝিলে আইডিআরএ কার্যালয়ে গিয়েও তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ মেলেনি।

সর্বশেষ খবর