বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত চেয়েছে ব্যাংকিং বিভাগ

৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার প্রস্তাব দুই ব্যাংকের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার প্রস্তাব দুই ব্যাংকের

সরকার মালিকানাধীন বেসিক ও রূপালী ব্যাংকের ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার প্রস্তাবের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সম্প্রতি এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্যাংকিং বিভাগের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক দুটির বন্ড ছাড়ার প্রস্তাবের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে মতামত দেবে সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে সরকার মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোরও আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতি অনুযায়ী ব্যাসেল-তিন গাইডলাইন পরিপালনে বাধ্যবাধকতা আছে। সে কারণে তাদের মূলধন বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনার জন্যও ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়ানো দরকার। জানা গেছে, বেসিক ব্যাংক ২ হাজার ৬০০ কোটি এবং রুপালী ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। বেসিক ব্যাংকের প্রস্তাবে বলা হয়েছে এই বন্ড হবে সুদমুক্ত। মেয়াদকাল হবে ১০ থেকে ২০ বছর। এরমধ্যে ১০ বছরের মেয়াদে ১ হাজার কোটি টাকার ১০টি বন্ড ছাড়া হবে। এ ছাড়া ১৫ বছর মেয়াদে ৮০০ কোটি টাকার ৮টি এবং ২০ বছর মেয়াদে ৮০০ কোটি টাকার আরও ৮টি বন্ড ছাড়া হবে। প্রতিটি বন্ডের অভিহিত মূল্য হবে ১০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা তুলতে ব্যাংকটি ২৬টি বন্ড ইস্যু করতে চায়। বন্ডটি হস্তান্তরযোগ্য নয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের এমডি খন্দকার মো. ইকবাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের কোনো তারল্যের সংকট নেই। বিনিয়োগ করার মতো প্রচুর তারল্য আছে আমাদের ব্যাংকে। কেবলমাত্র ব্যাসেল-তিন এর বাধ্যবাধকতা পূরণ করতেই মূলধন বাড়ানো দরকার। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, মূলধন বাড়াতে সারা বিশ্বেই বন্ড ছাড়ার রীতি রয়েছে। ভারতেও ব্যাংকগুলো সময় সময় বন্ড ছেড়ে মূলধন সংগ্রহ করে। প্রস্তাবিত অর্থ বন্ডের বিপরীতে পাওয়া গেলে আমাদের ব্যাংকের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে। সূত্রগুলো জানায়, বেসিক ব্যাংকের মতো রুপালী ব্যাংকও ব্যাসেল-তিন গাইডলাইন বাস্তবায়নে বন্ড ইস্যু করতে চায়। সম্প্রতি এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে ব্যাংকটি উল্লেখ করেছে, বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি প্রায় ৫৪৭ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাসেল-৩ গাইডলাইন বাস্তবায়নে ন্যূনতম মূলধন ১০ শতাংশ থেকে পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশনা রয়েছে। তাই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, রূপালী ব্যাংক যে বন্ড ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছে সেখানে তারা বলেছে, সেটি হবে সাব-অর্ডিনেট বন্ড। এতে সরকারের কোনো আর্থিক সংশ্লেষ থাকবে না। সরকার শুধু গ্যারান্টার হবে। তারা ১০ থেকে ১২ শতাংশ সুদে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্ড বিক্রি করে টাকা নেবে। সাত বছর মেয়াদ শেষে বন্ডের বিপরীতে নেওয়া অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ফেরত দেবে।

প্রসঙ্গত, রূপালী ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকার বন্ড চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রথম আবেদন করে ২০১৫ সালের জুনে। এ বিষয়ে সাড়া না পেয়ে নয় মাস পর চলতি বছরের মার্চে আবারও আবেদন করে। তাতেও কোনো সাড়া দেয়নি সরকার। ব্যাংকটি সম্প্রতি ফের একই আবেদন করেছে।

সর্বশেষ খবর