বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আর্থিক খাতে জোরালো সংস্কার চায় বিশ্বব্যাংক আইএমএফ

মানিক মুনতাসির

আর্থিক খাতে জোরালো সংস্কার চায় বিশ্বব্যাংক আইএমএফ

দেশের আর্থিক খাতে জোরালো সংস্কার চায় বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বিশেষ করে বাজেট ব্যবস্থাপনা, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা এবং পাবলিক এক্সপেনডেচার খাতে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে এমন দাবি আনা হয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে অর্থমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। অন্যদিকে আইএমএফের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক ঢাকা সফর করেন। এ দুই সফরে পরস্পরের মধ্যে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সংস্কার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সংস্থা দুটির দাবি অনুযায়ী এ সংস্কার আনা হলে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে উন্নয়নের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করবে। অন্যদিকে ব্যাংক খাতের সংস্কার আনতে কোনো প্রকল্প নিলে তাতে তারা অর্থায়ন করতেও সম্মতি দিয়েছে। পাশাপাশি ব্যালান্স অব পেমেন্টের বিষয়ে কোনো সমস্যা হলে তা সমাধানে আইএমএফ এগিয়ে আসবে বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে জানানো হয়েছে। সূত্র জানায়, আর্থিক খাতের সংস্কারের জন্য তারা একটি কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান সিপিডিও সম্প্রতি আর্থিক খাতের সংস্কারে একটি কমিশন গঠনের সুপারিশ করে। তবে সরকার এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধস নামার পর প্রায় ৪০ লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করে এখনো শেষ করতে পারেনি সরকার। পুঁজিবাজার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কমিটিকে পৃথক করার পরও এর সুফল বিনিয়োগকারীরা পাচ্ছেন না বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও সিপিডি। আর্থিক খাতে সুশাসন ও জবাবদিহির ঘাটতি থাকায় বিনিয়োগকারীদের আস্থাও ফেরানো যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, ব্যাংক খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে না পারায় আর্থিক খাত সুশাসন থেকে এখনো অনেক দূরে। ফলে প্রায় প্রতিদিনই ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমানে ব্যাংক খাতে ৬৭ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বোঝা রয়েছে। গত তিন মাসে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে; যা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতিও বাড়ছে সমানতালে। যদিও প্রতি বছর বাজেটে মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য পৃথক বরাদ্দ রাখছেন অর্থমন্ত্রী। এদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাও আর্থিক খাতে এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে দেশের ব্যাংক খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো চক্র জড়িত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব দুর্বলতা রয়েছে তা সমাধানে এখনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে এখনো কোনো ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার বা বরখাস্ত করা হয়নি। ফিলিপাইন অবশ্য ছয় ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ ধরনের একটি ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়াটাও সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায় বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, পুরো আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য আর্থিক খাতে সংস্কার আনাও জরুরি।

সর্বশেষ খবর