বুধবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে পাল্টে যাবে জুয়েলারি শিল্প

রুহুল আমিন রাসেল

অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে পাল্টে যাবে জুয়েলারি শিল্প

দেশে পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে পাল্টে যাবে বিকাশমান জুয়েলারি শিল্প। ঢাকার অদূরে এ শিল্পের উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ, অবকাঠামো নির্মাণ সহায়তা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা এবং সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ সুবিধা পেলে—দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও কোটি কোটি টাকার জুয়েলারি পণ্য রপ্তানি করতে পারবেন। তবে এর সঙ্গে চাই জুয়েলারি ব্যবসা-বান্ধব ও টেকসই স্বর্ণ-নীতিমালা। জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে ঢাকার অদূরে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে এই খাতের উদ্যোক্তা-মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস)।

এ প্রসঙ্গে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ সরকার খুবই ব্যবসা-বান্ধব। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে সরকার সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে পাল্টে যাবে এ খাতের চিত্র। বাজুসের তথ্যমতে, দেশে ১০ হাজারের বেশি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান আছে। যদিও সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক। এই খাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গড়ে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। তাতে সরকার মূল্য সংযোজন কর মূসক বা ভ্যাট পায় প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বর্তমানে জুয়েলারি শিল্পে প্রায় ২৮ লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশে বস্ত্র শিল্পের মতো জুয়েলারি শিল্প সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে, তা অর্থনীতিতে আরেকটি মাইলফলক হবে বলে মনে করেন এ খ্যাতের ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, বাংলাদেশে আছে দক্ষ ও সুলভ শ্রমবাজার। জুয়েলারি শিল্পে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তারপরও সরকারের প্রয়োজনীয় নীতি-সহায়তার অভাবে দেশের জুয়েলারি শিল্পের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই সংকট উত্তরণে জুয়েলারি শিল্পের জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা জরুরি। এতে জুয়েলারি শিল্পে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান এক ছাদের নিচে তাদের কারখানা স্থাপন করে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশি জুয়েলারি পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, দেশি-বিদেশি বাজারে স্বর্ণের মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, যুগোপযোগী স্বর্ণ-নীতিমালা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে জুয়েলারি শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেকে হচ্ছে বেকার। স্বর্ণ শিল্পীদের কেউ কেউ হয়ে পড়ছেন বেকার। ব্যবসা পরিচালনার জন্য মূলধনের অভাব এবং ডাকাতির ঘটনায় জুয়েলারি ব্যবসা হুমকিতে পড়েছে। জুয়েলারি ব্যবসার প্রধান কাঁচামাল স্বর্ণ। বাংলাদেশে স্বর্ণালঙ্কার তৈরি বর্তমানে দেশীয় রিসাইকেল স্বর্ণ ও রৌপ্যের ওপর নির্ভরশীল। তবে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। অন্যদিকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কেউ কেউ দেশে আসার সময় যে পরিমাণ স্বর্ণ নিয়ে আসেন, তার পরিমাণও অনেক কম। ফলে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকার কারণে আন্তর্জাতিক বাজার দরের চেয়েও বেশি মূল্যে স্বর্ণ ক্রয় করতে হয়। এর প্রভাব পড়ে মূল্য নির্ধারণেও। তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান অথবা গোল্ড এক্সচেঞ্জ বা গোল্ড ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জুয়েলারি ব্যবসার উন্নয়ন সম্ভব।

সর্বশেষ খবর