বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

জৌলুস হারাচ্ছে পুরান ঢাকার পাদুকা শিল্প

এসব কারখানাকে ঘিরে বংশালের মালিটোলা লেন, সুরিটোলা লেন, লুত্ফর রহমান লেন, আলুবাজারের নর্থসাউথ রোড ও ওসমানগণি লেনে পাওয়া যায় জুতা বানানোর নানা উপকরণ

মাহবুব মমতাজী

জৌলুস হারাচ্ছে পুরান ঢাকার পাদুকা শিল্প

মো. কামাল হোসেন। তার বাসা বংশালের লুত্ফর রহমান লেনে। প্রায় ৪৫ বছর ধরে পাদুকা শিল্পের সঙ্গে জড়িত তিনি। বছর তিনেক আগে কারখানার পাশাপাশি রাজধানী সুপার মার্কেটে তার একটি দোকানও ছিল। পরবর্তীতে মন্দার কারণে পুঁজি হারিয়ে ছোট পরিসরে জুতা বানানোর কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। দুই ছেলেমেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে তার পরিবার। পাদুকা শিল্পের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তি জানান, এ শিল্পে আগের মতো তেমন জৌলুস নেই। যার কারণে অনেকটা টানাটানির মধ্যে সংসার চালাতে হয় তাকে। কামাল হোসেন জানান, কাজ শেখার পর আমি নিজের কারখানায় তৈরি জুতা বিক্রির জন্য রাজধানী সুপার মার্কেটে একটি দোকানও নিয়েছিলাম। ব্যবসায় চরম মন্দা আসায় আমার কারখানা-দোকান উভয়ের পুঁজি শেষ হয়ে যায়। পরে ৪/৫ বর্গফুটের একটি ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে অর্ডার নেওয়া কিছু জুতা একাই তৈরি করে বিক্রি করি।

জানা গেছে, পুরান ঢাকায় প্রথমে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরই দক্ষিণ মৈশন্দিতে জুতা বানানোর কাজ শুরু করেছিল বিহারিরা। তাদের কাছ থেকে এ কাজ শেখার পর বংশাল, আলুবাজার, সিদ্দিকবাজার এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিভিন্ন ছোট-বড় কারখানা গড়ে তোলা হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, এসব কারখানাকে ঘিরে বংশালের মালিটোলা লেন, সুরিটোলা লেন, লুত্ফর রহমান লেন, আলুবাজারের নর্থসাউথ রোড ও ওসমানগণি লেনে পাওয়া যায় জুতা বানানোর নানা উপকরণ। জুতার জন্য কেমিক্যালের সলিউশন, দুধ গাম, লেদার, ফোম, রেকসিন, সোল ও কাঠের ফরমার পাইকারি দোকানও রয়েছে এখানে। ৩ নম্বর লুত্ফর রহমান লেনের এনআরবি মার্কেটের দোকানি রশিদ জানান, জুতার উপরের অংশের লেদারের প্রতি বর্গফুটের দাম ১২০-১৬০ টাকা করে। আবার নিচের অংশের শক্ত চামড়ার দাম একটু বেশি।  সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এ ক্ষুদ্র শিল্পের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ফলে দাম চাওয়া হয় বেশি। যে কারণে সাধারণ ক্রেতারা এর চেয়ে ভালো মানের পণ্য দেশের বাইরে থেকে পায়। আর ভারত ও চীন থেকে অনেক বেশি পরিমাণ জুতা আমদানি হওয়াতে দেশের এই খাতটি ধরা খেয়ে গেছে। বংশালের মালিটোলা এলাকার জুতা কারখানার কারিগর ওয়াকিল কাজীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ছোটকালে দক্ষিণ মৈশন্দিতে কাজ শেখার পর এ কাজই করছি ৩০ বছর ধরে। শুধু বংশাল এলাকায় ৫০টির বেশি ছোট-বড় জুতার কারখানা আছে। অন্য সব মিলে ৪০০ এর মতো কারখানা হবে। প্রত্যেকটিতে ১০-১২ জন কর্মচারী আছে। জুতা বানানোর ক্ষেত্রে প্রতি ১২ জোড়ায় মজুরি দেওয়া হয় ৩৫০-৪০০ টাকা করে। আর ১২ জোড়া জুতা বানাতে সময় লাগে অন্তত দুই দিন। পাঁচ বছর আগেও এ কাজে আয় ভালো ছিল। কিন্তু দেশে বিদেশি জুতার আমদানি বাড়ায় অবহেলায় পড়েছি আমরা। যার কারণে এখন আমরা ভালো মানের জুতাও বানাই না। অনেকেই এ কাজ ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজে জড়িয়ে পড়েছেন।আলুবাজারে জুতা কারখানার পাশাপাশি রয়েছে জুতার ফর্মা তৈরিরও কারখানা। এদের কাজটিই তুলনামূলক ভালো রয়েছে বলে জানান ইসাহাক কারিগর। তিনি  জানান, আমরা ওয়াইজঘাট থেকে কাঠ এনে হাতেই সাইজ মিলিয়ে বানাই। তবে কেউই তেমন গুরুত্ব দেয় না আমাদের। আর এক জোড়া ফর্মা তৈরির জন্য কারিগর পায় মাত্র ১০০ টাকা। তবে সিদ্দিকবাজারের করিম মার্কেট এবং তার পেছনের অংশে জুতার কারখানার সংখ্যা বেশি। সেখানে সব ধরনের জুতা বানানো হয়।

সর্বশেষ খবর