বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রতিনিধি দলের পরামর্শ

কৃষিতে ভর্তুকি চায় না আইএমএফ

কৃষি সরঞ্জাম ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আইএমএফ। এ ছাড়া বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে দিতে বলেছে

মানিক মুনতাসির

কৃষিতে ভর্তুকি চায় না আইএমএফ

কৃষি বহির্ভূত খাতে ভর্তুকির বরাদ্দ শূন্যে নামিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলেছে, ভর্তুকি শুধু বাজেটেই চাপ সৃষ্টি করে না, সামষ্টিক অর্থনীতিকেও চাপে ফেলে। আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক ভর্তুকি কমিয়ে আনতে পারলে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি চাপমুক্ত থাকবে। এজন্য আগামী বাজেটে কৃষি বহির্ভূত অন্য খাতে ভর্তুকির পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। সম্প্রতি আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে এসে অর্থবিভাগকে এ পরামর্শ দিয়ে গেছে। অর্থবিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, প্রতি বছর বাম্পার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে কৃষি খাতে ভর্তুকি দেয় সরকার। তবে গত কয়েক বছর ধরে নগদ অর্থের পরিবর্তে কৃষি সরঞ্জাম ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আইএমএফ। এদিকে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে দিতে বলেছে সংস্থাটি। অবশ্য জ্বালানি তেল আমদানি, বিক্রি ও বিপণন খাতে সরকার ইতিমধ্যে মুনাফা করতে শুরু করেছে। গ্যাস-বিদ্যুতে সামান্য ভর্তুকি দিয়ে আসছে। মূল্য সমন্বয়ের মাধ্যমে এ ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে দিতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে আবাসিক খাতে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিরও প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এদিকে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটেও ভর্তুকি কমানো হয়েছে অতীতের তুলনায়। রপ্তানি খাতে প্রণোদনাসহ চলতি বাজেটে ভর্তুকি বাবদ রাখা হচ্ছে ২২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা কম। এরমধ্যে কৃষি খাতের ভর্তুকিই ১১ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিবছরই একটু একটু করে ভর্তুকি কমিয়ে আনছে সরকার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয় ২৫ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। আর সর্বশেষ চলতি বছর তা ২২ হাজার ৯০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ আরও কমিয়ে আনা হবে বলে আভাস দিয়েছে অর্থবিভাগ।

আগামী অর্থবছরের মোট ভর্তুকির মধ্যে কৃষি, বিদ্যুৎ ও রপ্তানি প্রণোদনা হিসাবেই ৮০ শতাংশ টাকা বরাদ্দ রাখা হবে। আর ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের শিল্প, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন, চামড়াজাত ও পাটজাত দ্রব্যে রপ্তানি ও প্রণোদনা থাকতে পারে। তবে আইএমএফ বলেছে একমাত্র কৃষি ব্যতীত সব খাতেই ভর্তুকি তুলে দেওয়া উচিত। চলতি বাজেট উপস্থাপনের সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য সারের মূল্য কৃষকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কৃষিখাতে প্রণোদনাসহ বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য গুদামের ধারণক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ সহায়তা ও অন্যান্য প্রণোদনা সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ৪৯৯টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রে এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ৭২৭টি কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থান বাংলাদেশের ভাসমান সবজি চাষ পদ্ধতিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে। আগামী অর্থবছরে এসব কার্যক্রম আরও প্রসারিত করা হবে বলে জানিয়েছে অর্থবিভাগ।

 

সর্বশেষ খবর