বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ করলে অতিরিক্ত ৮০০ কোটি টাকা রাজস্ব

জিডিপির ৩ শতাংশ ক্ষতি তামাক ব্যবহারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

জিডিপির ৩ শতাংশ ক্ষতি তামাক ব্যবহারে

বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। এটি ২০০৪ সালে অর্জিত জিডিপির ৩ শতাংশের বেশি। এরমধ্যে ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে ধূমপানজনিত রোগের চিকিৎসায়। আর ধূমপানজনিত অসুস্থতার কারণে জাতীয় উৎপাদনশীলতার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা প্রজ্ঞার এক সেমিনারে এসব তথ্য দেওয়া হয়। সোমবার রাজধানীর বাংলামোটরের প্ল্যানার্স টাওয়ারে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, জিডিপির অনুপাতে তামাক ব্যবহারে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধূমপানের কারণে স্বাস্থ্য খাতে যে ব্যয় বাড়ছে সেটিও বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বাজেটের এই চাপ মোকাবিলা করা উচিত তামাক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ট্যাক্স বাড়িয়ে। তিনি বলেন, প্রতিবছর আমরা দেখি তামাক কোম্পানিগুলোর ওপর ঘোষণা দিয়ে ট্যাক্স বাড়ানো হচ্ছে। তবে ভিত্তিমূল্য কারসাজির কারণে সিগারেটের দাম সামান্যই বেড়েছে। সহজলভ্য হওয়ায় বাংলাদেশে ধূমপায়ী ও তামাকসেবীর সংখ্যাও বাড়ছে। প্রজ্ঞার কো-অর্ডিনেটর মো. হাসান শাহরিয়ার জানান, তামাকের ব্যবহার কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাকপণ্যের মূল্য বাড়ানো। বাজেটে সিগারেটের ট্যাক্স বাড়ানোর পাশাপাশি সিগারেটের ভিত্তিমূল্য বাড়ানোর সুপারিশ করে তিনি বলেন, প্রতিটি দশ শলাকার নিম্নস্তরের সিগারেটের প্যাকেটের দাম যদি ২৫ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা, উচ্চস্তরের প্যাকেটের মূল্য ৪৫ টাকার স্থলে ৭০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরের প্রতি প্যাকেটের দাম ৭০ টাকার স্থলে ১২০ টাকা বাড়ানো হয় তাহলে সরকারের কমপক্ষে ৫২০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। প্রজ্ঞার কো-অর্ডিনেটর আরও জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে তামাককর কাঠামো পরিবর্তন করে সিগারেটের খুচরা মূল্যের ৭০ শতাংশ, বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের খুচরামূল্যের ৫০ শতাংশ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ করলে সরকার অতিরিক্ত আরও প্রায় ৮০০ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে এই খাত থেকে। প্রজ্ঞার সেমিনারে বলা হয়, পৃথিবীতে যেসব দেশে সিগারেটের মূল্য অত্যন্ত কম বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। বিড়ি এখানে আরও সস্তা। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন: দুধ, ডিম এবং চালের তুলনায় তামাকপণ্যের দাম কম থাকায় এদেশে মানুষ ধূমপানে বেশি আসক্ত হচ্ছে। সরকার ঘোষিত সর্বশেষ বাজেটে (২০১৬-১৭) সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাটসহ সিগারেটে সর্বনিম্ন ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ কর ধার্য রয়েছে। তবে ভিত্তিমূল্য কারসাজির কারণে তামাক কোম্পানিগুলো সিগারেটের মূল্য খুব সামান্যই বাড়িয়েছে। জর্দা ও গুলের ওপর সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাটসহ ১১৫ শতাংশ কর ধার্য থাকলেও ভিত্তিমূল্য অত্যন্ত কম হওয়ায় জর্দা ও গুলের দাম বাড়েনি বললেই চলে। অপরদিকে বিড়ির ওপর সম্পূরক শুল্কহার এবং ভিত্তিমূল্য অত্যন্ত কম। ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির প্যাকেটে সম্পূরক শুল্ক মাত্র ৩০ শতাংশ।

সর্বশেষ খবর