বুধবার, ২৪ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাজেটে ক্রমেই কমছে ভর্তুকির চাপ

মানিক মুনতাসির

বাজেটে ক্রমেই কমছে ভর্তুকির চাপ

বাজেটে ভর্তুকির চাপ প্রতিনিয়তই কমছে। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি খাতে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চলতি ২০১৬-১৭ বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ২৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে চলতি বাজেটের তুলনায় ভর্তুকি খাতে পাঁচশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ কমছে। অর্থবিভাগের তথ্য মতে, আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকিতে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের যে প্রস্তাব আছে তা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ। পাঁচ বছর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভর্তুকিতে বরাদ্দ ছিল সাড়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ওই বছর পুরো অর্থই খরচ হয়েছে। এ ব্যয় ওই অর্থবছরের জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ ছিল। এরপর থেকেই ভর্তুকি কমতে শুরু করে। সে হিসেবে পাঁচ বছরে বাজেট ভর্তুকি কমেছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০১৬-১৭ সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকি কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ২৩ হাজার কোটি টাকা। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৭-১৮ বাজেটে ভর্তুকি খাতে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাখা হলেও সংশোধনের সময় তা ২০ হাজার কোটিতে নেমে আসবে। অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের মধ্যে ভর্তুকি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। ২০২১ সালের পর শুধু কৃষি খাতে ভর্তুকি দেওয়া হতে পারে। সেটাও আবার সরাসরি অর্থ না দিয়ে কৃষকদের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে কৃষি সরঞ্জাম সরবরাহ করার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সূত্র জানায়, মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অব্যাহতভাবে কমতে থাকায় এ খাতে সরকারের ভর্তুকি বন্ধ হয়েছে। বরং গত প্রায় তিন বছর ধরে জ্বালানি তেল আমদানি ও বিক্রি করে লাভ করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। পাশাপাশি অন্য সব খাতেও ভর্তুকি কমে এসেছে। ফলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছে সরকার। গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ সময়ে ভর্তুকিতে বরাদ্দ কমেছে শতকরা ৩৫ ভাগ, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যৌক্তিক খাতে ভর্তুকি থাকতে হবে। তবে ভর্তুকি বরাদ্দের অর্থ সঠিক খাতে ব্যয় হচ্ছে কি-না সে ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষকে সহায়তা দিতে এবং কৃষকদের সহায়তায় ভর্তুকি রাখা খুবই যৌক্তিক বলে তিনি মনে করেন। অর্থবিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে উল্লেখযোগ্য ছয় থেকে সাতটি খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ, কৃষি, রপ্তানি, খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে আরও কিছু খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। তবে এসব খাতে বরাদ্দ খুব কম থাকে। যেমন গরিব জনগণকে সাশ্রয়ী দামে খাওয়ানোর জন্য খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রি করে সরকার। এ জন্য চাল-আটাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর