বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
উদ্যোক্তাদের এখনো ভরসা ব্যাংক

জিডিপিতে কমছে পুঁজিবাজারের অবদান

আলী রিয়াজ

জিডিপিতে কমছে পুঁজিবাজারের অবদান

দেশের জিডিপি নিয়মিতভাবে বাড়লেও পুঁজিবাজারের মূলধন আগের অবস্থানেই রয়ে গেছে। বরং দেশের বর্তমান জিডিপির তুলনায় পুঁজিবাজারের মূলধন আরও কমছে। সাম্প্রতিক সময় নতুন শেয়ারের জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা ইনিশিয়াল পাবলিক অফার (আইপিও)-এর অনুমোদন কমে যাওয়া আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে শেয়ারবাজারে। শিল্প খাতে বিনিয়োগে ভূমিকা রাখতে পারছে না স্টক মার্কেট। উদ্যোক্তাদের এখনো ভরসা ব্যাংকিং খাত। শেয়ারবাজারের ভূমিকা কমায় চাপ পড়ছে ব্যাংকে, বাড়ছে খেলাপির পরিমাণ। ফলে জিডিপিতে শেয়ারবাজারে অবদান দিন দিন কমছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইপিও অনুমোদনের জন্য প্রযোজ্য শর্তের বাইরেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অহেতুক অনেক বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে। এতে করে আইপিও অনুমোদনে অনেক জট বেঁধে যাচ্ছে। ফলে আইপিও সংখ্যা কমছে শেয়ারবাজারে। এ ছাড়া বৃহৎ ও বহুজাতিক কোম্পানি শেয়ারবাজারে নিয়ে আসতে বিএসইসি কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না। জানা গেছে, গত ৬ বছরে (২০১০-১৬) বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বড় হয়েছে। এ সময়ে জিডিপির আকার বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। অন্যদিকে একই সময়ে জিডিপির অনুপাতে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে। ২০১০ সালে জিডিপির অনুপাতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল প্রায় ৫১ শতাংশ। তবে গত ৬ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে এ অনুপাত। যা ২০১৬ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশে। সে হিসাবে ৬ বছরে জিডিপিতে শেয়ারবাজারের অনুপাত কমেছে ৬১ শতাংশ। জিডিপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আইপিও অনুমোদন বাড়ানো প্রয়োজন হলেও তা কমেছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ১৭টি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে ৮টি বা ৪৭ শতাংশ কমে ৯টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। যা চলতি বছরে আরও নাজুক অবস্থা। এরই মধ্যে বছরের অর্ধেকের বেশি পার হয়ে গেলেও মাত্র ৪টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উদ্যোক্তারা শেয়ারবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ৩৯০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করেছেন। অপরদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ মূলধন সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৮৫৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে বছরের ব্যবধানে মূলধন সংগ্রহের পরিমাণ কমেছে ৫৫ শতাংশ। ধারাবাহিকভাবে দেখলে দেখা যায়, জিডিপির অনুপাতে ডিএসইর মূলধন ২০১০ সালে ছিল ৫১ শতাংশ, ২০১১ সালে ৩৩, ২০১২ সালে ২৬, ২০১৩ সালে ২৫, ২০১৪ সালে ২৪, ২০১৫ সালে ২০, ২০১৬ সালে ১৯ শতাংশে ঠেকেছে।  বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মির্জ্জা এ বি আজিজুল ইসলাম বলেন, একটি কোম্পানির আইপিও অনুমোদন পেতে ৩-৪ বছর সময় লাগা আমার কাছে বোধগম্য নয়। বিষয়গুলো বিএসইসির দেখা উচিত। দেশের শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ভালো কোম্পানি আনার লক্ষ্যে বিএসইসির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। একই সঙ্গে সরকারি বিভিন্ন কোম্পানি শেয়ারবাজারে আনার জন্য সরকারের দিক থেকে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়ালি-উল মারুফ মতিন বলেন, আইপিও অনুমোদনের পরিমাণ বাড়ানোর পরিবর্তে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কমানো হয়েছে। আইপিও অনুমোদন বাড়ানো না হলে সাপ্লাই ও ডিমান্ডের মধ্যে অসামঞ্জস্য তৈরি হবে। এতে বাজারে বাবল তৈরি হওয়ার সুযোগের সৃষ্টি হয়। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের     (ডিবিএ) সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী বলেন, বাজার সম্প্রসারণে আইপিও অনুমোদনের দরকার আছে। তবে নতুন আইপিও ইস্যু রুলস-২০১৫ এর কারণে গত অর্থবছরে আইপিও অনুমোদনে ধীরগতি এসেছে।

সর্বশেষ খবর