বুধবার, ২ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

রেমিট্যান্স বাড়াতে ক্রাশ প্রোগ্রাম

আলী রিয়াজ

রেমিট্যান্স বাড়াতে ক্রাশ প্রোগ্রাম

রেমিট্যান্স বাড়াতে এবার ক্রাশ প্রোগ্রাম নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে প্রবাসীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা এ জন্য রেমিট্যান্স আসার শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোতে সফর করছেন। প্রবাসীদের জন্য একগুচ্ছ সুবিধা দিয়ে বেশকিছু পদক্ষেপেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো খতিয়ে দেখতে ও প্রবাসীদের জন্য সুবিধা বাড়াতে কাজ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ১৫৩১ কোটি ডলার বা এক লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ সালে ১৪৯৩ কোটি ডলার বা এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা আরও কমে এসেছে মাত্র ১২৭৬ কোটি ডলার বা এক লাখ কোটি টাকা।

ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স কমায় উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংক। অভিযোগ উঠেছে, হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসীরা টাকা পাঠাচ্ছেন। বিশেষ করে কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আসছে। তা ছাড়া রেমিট্যান্স পাঠানোর অতিরিক্ত ব্যাংকিং ফি, গ্রাহকদের হয়রানির অভিযোগও রয়েছে।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হুন্ডির অভিযোগ ওঠার পর নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুটি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়ে লেনদেন খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়। নির্ধারণ করে দেওয়া হয় লেনদেন সীমা। কিন্তু এতেও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি না পাওয়ায় নেওয়া হলো নতুন উদ্যোগ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ড. হাবিবুর রহমানকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটি চারটি টিম করে বিভিন্ন দেশ সফর করছে। এখনো তারা দেশের বাইরে। যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, কাতার, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফর শেষ। কর্মকর্তারা সেখানে বাংলাদেশ মিশন কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তা ও প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে অনুযায়ী বেশকিছু পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, প্রবাসীদের সুবিধা দিতে দেশের সব ব্যাংক শাখায় আলাদা ডেস্ক স্থাপন, যেখানে শুধু রেমিট্যান্স গ্রাহকদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। অর্থ উত্তোলন, তাদের অভিযোগ গ্রহণ করতে ব্যাংকগুলোকে আন্তরিক হওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে রেমিট্যান্সের অর্থ বহনে সহায়তা করতে হবে। প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগ বিশেষ করে বাড়ি নির্মাণে ব্যাংক ঋণের হার বাড়ানো হয়েছে। ভোক্তা ঋণ নীতিমালার আওতায় এখন নিজস্ব অর্থায়নের অনুপাত ৭৫ : ২৫। অর্থাৎ ২৫ লাখ টাকা নিজস্ব অর্থায়নে প্রবাসীরা ৭৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। রেমিট্যান্স পাঠাতে ফি কমানো এবং তাদের পাঠানো ডলারের মূল্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে বিশেষ সুবিধার কথাও বলা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবু তাহের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রেমিট্যান্স বাড়াতে গভর্নরের নির্দেশে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিছু সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। রেমিট্যান্স আসে এমন কয়েকটি দেশ সফরের পর প্রবাসীদের সমস্যা চিহ্নিত করে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘রেমিট্যান্স কমার বিষয়ে আমরা কাজ করছি। বেশকিছু সমস্যা চিহ্নিত। বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করেছে।’

সর্বশেষ খবর