বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

কর জটিলতায় আটকে গেছে জাপানের অনুদান

রুকনুজ্জামান অঞ্জন


কর জটিলতায় আটকে গেছে

জাপানের অনুদান

আয়কর পরিশোধ নিয়ে দুইপক্ষের জটিলতায় জাপানের অনুদানে গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। রানা প্লাজা ধসের পর দেশের পোশাক কারখানার সংস্কারে ৪ হাজার ২৪০ মিলিয়ন ইয়েনের অনুদান ঘোষণা করে জাপান। ওই অনুদানে তৈরি পোশাক কারখানা সংস্কারে ‘আরবান বিল্ডিং সেফটি প্রজেক্ট’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে খসড়া চুক্তিও করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সমস্যা দেখা দিয়েছে আয়কর পরিশোধ নিয়ে। এনবিআর বলছে, প্রকল্প ব্যয়ের ওপর আরোপিত আয়কর পরিশোধ করবে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি অনুদান ব্যবহারের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে জাইকার যে চুক্তি হয়েছে সেটি এনবিআরের মতামতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কর নিয়ে এ জটিলতা নিরসন না হওয়ায় এখন প্রকল্পটি ভেস্তে যেতে বসেছে। এ অবস্থায় সরকারের সঙ্গে করা জাইকার চুক্তি অনুসারে আয়কর পরিশোধের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। গত ২৬ জুলাই এ চিঠিটি পাঠানো হয় এনবিআরে। ওই চিঠির অনুলিপি অর্থ মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, চুক্তি অনুযায়ী অনুদানের অর্থের ওপর আরোপিত ট্যাক্স পরিশোধ করবে বাংলাদেশ সরকার। সে অনুযায়ী এনবিআরের কাছে অনাপত্তি চাওয়া হয়। কিন্তু এনবিআর বলছে, ওই ট্যাক্স প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করতে হবে।

ওই কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে এত দীর্ঘসূত্রতা করা ঠিক হচ্ছে না। সরকারের চুক্তি মেনেই এর ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স দেওয়া উচিত এনবিআরের। অনুদানের অর্থ ব্যবহারে জটিলতায় দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর সৃষ্ট জটিলতায় দেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়ে। পোশাক খাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে জাইকার আর্থিক সহায়তায় জাপানিজ ৪ হাজার ২৪০ মিলিয়ন ইয়েনের একটি তহবিল গঠন করা হয়। আরবান বিল্ডিং সেফটি প্রজেক্ট শীর্ষক প্রকল্পে ওই অর্থ ব্যয়ের জন্য ২০১৫ সালে জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাপানের পেডাকো কোম্পানি লি. এবং বাংলাদেশের ই জেন কনসালটেন্ট লি. নামে দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে গত বছরের ৩১ অক্টোবর খসড়া চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই খসড়া চুক্তি এনবিআরে পাঠালে সংস্থাটি আয়করের টাকা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার মতামত জানায়। এনবিআর চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, আয়কর বিষয়ে আপনাদের মতামত জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সম্পাদিত ঋণ চুক্তির এক্সচেঞ্জ অব নোটসের অনুচ্ছেদ ১০-এ বর্ণিত তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরে জটিলতা দেখা দেয়। প্রকল্পের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে আপনাদের দেওয়া মতামত ঋণ চুক্তি অনুযায়ী পুনর্বিবেচনা করার জন্য চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০ মার্চ, ২ এপ্রিল ও ১১ মে চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ জানানো হয়। গভর্নর আরও বলেন, বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে বেশ কয়েকটি বহুপক্ষীয় সভা হয়। ওইসব সভায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে এনবিআর আয়করের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে বলে সিদ্ধান্ত হয় এবং চিঠির মাধ্যমে তা এনবিআরকে জানানো হয়। এরপরও বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় আর্থিক      প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান প্রস্তাবিত খসড়া চুক্তির ওপর জরুরিভিত্তিতে অনাপত্তি দিতে গত ৭ জুন একটি আধা সরকারি (ডিও) পত্র দেন। কিন্তু      তারপরও বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর