বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই বাজেট ঘাটতি মেটানোর পরিকল্পনা

মামলা নিষ্পত্তিতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রম জোরদার করতে পারলে রাজস্ব আহরণে ঘাটতিই থাকবে না বলে মনে করে এনবিআর

মানিক মুনতাসির

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই বাজেট ঘাটতি মেটানোর পরিকল্পনা

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটানোর পরিকল্পনা নিয়েছে অর্থ বিভাগ। এ জন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (্আইএমএফ) বাজেট সহায়তার কথা ভাবছে না সরকার। সংস্থা দুটি বাজেট সহায়তা না দিলেও অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই বাজেটের অর্থায়ন মেটানো সম্ভব বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। কর ফাঁকি রোধ করতে পারলে এবং করদাতারা ঠিকমতো কর দিলে রাজস্ব আদায়ে যে ঘাটতি রয়েছে সেটাও মেটানো সম্ভব বলে মনে করে এনবিআর। গত অর্থবছরের শুরুতে যে রাজস্ব ঘাটতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, বছর শেষে তা আর হয়নি। ফলে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হয় এনবিআর। ওই বছরের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণে এনবিআর সফল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন ভ্যাট আইন, ২০১২ কার্যকরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় রাজস্ব আদায়ে যে ঘাটতি হবে তা পুষিয়ে নিতে কাজ করছে এনবিআর। এনবিআর মনে করে, তাদের কৌশল অনুসারে রাজস্ব আদায় করা গেলে বছর শেষে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মতো ঘাটতি হতে পারে। রাজস্ব আহরণের কৌশলের মধ্যে সিগারেট ও বিড়ি খাত থেকে পাঁচ হাজার কোটি, আবগারি শুল্ক (ব্যাংক হিসাব ও বিমান টিকিট) হিসেবে ৫০০ কোটি এবং ফাস্টফুডের ওপর প্রযোজ্য ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক থেকে ১০০ কোটি টাকাসহ ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ সম্ভব। অন্যদিকে রাজস্ব আহরণে বছরের শুরু থেকেই মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া বাজেট বাস্তবায়নে সরকারও অর্থবছরের শুরু থেকেই মনিটরিং বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে অর্থের ব্যয় নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়গুলোকে পরিকল্পনা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় মন্ত্রণালয়গুলোকে প্রতি প্রান্তিকের বাজেট বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানাতে বলা হয়েছে। অর্থঋণ আদালতের মামলা নিষ্পত্তিতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মামলাগুলোর বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কার্যক্রম জোরদার করতে পারলে রাজস্ব আহরণে কোনো ঘাটতিই থাকবে না বলে মনে করে এনবিআর। এ জন্য এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদিকে ২০১১ সালে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে তিক্ততা সৃষ্টির পর বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আর কোনো বাজেট সহায়তা পায়নি সরকার। এমনকি কয়েক বছর ধরে সংস্থাটির কাছ থেকে বাজেট সহায়তা চায়নি সরকার। পাশাপাশি ২০১১ সালের পর থেকে আইএমএফের কাছ থেকেও কোনো ধরনের বাজেট সহায়তা পাওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ে ভ্যাট খাতেই বেশি জোর দিয়ে বাজেট তৈরি করা হয়েছিল। নতুন ভ্যাট আইনকে কেন্দ্র করে এ খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯১ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। কিন্তু নতুন ভ্যাট আইন স্থগিত করায় পুরনো আইনে ভ্যাট আদায় করছে এনবিআর। ফলে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুধু ভ্যাট

খাত থেকেই প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হবে চলতি বছর। তবে এনবিআর বলছে, অর্থবছর শেষে আগের কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বছর শেষে। ফলে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই রাজস্ব আদায় করবে সরকার।

সর্বশেষ খবর