বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশাল সম্ভাবনা

অস্ট্রেলিয়ার পাইকারি ক্রেতারাও বাংলাদেশ থেকে চামড়াজাত পণ্য নিচ্ছেন। বিশ্বে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার এখন ২১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের। বাংলাদেশ বিশ্ববাজারের মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে

রুহুল আমিন রাসেল

মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশাল সম্ভাবনা

চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব-ইউরোপ ও রাশিয়াসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশাল সম্ভাবনা দেখছেন উদ্যোক্তারা। সরকারও কাঁচা চামড়ার পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত চামড়ায় তৈরি পণ্য রপ্তানিতে অধিক নজর দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে পরিবেশবান্ধব চামড়ার কদর থাকায় ব্যবসায়ীদের আশাবাদ— আগামীতে চামড়া শিল্পে অভাবনীয় সাফল্য আসবে। বর্তমানে রপ্তানির শীর্ষ দশে রয়েছে জুতা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো—ইপিবি সূত্র জানায়, দেশীয় চামড়া শিল্প উদ্যোক্তারা সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ ৫০ কোটি ডলারের জুতা শিল্পকে আগামী পাঁচ বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে পারবেন। এ খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। বাংলাদেশ থেকে এখন চামড়াজাত পণ্য হিসেবে জুতা, ট্রাভেল ব্যাগ, বেল্ট, মানিব্যাগ, জ্যাকেট, চাবির রিং, কার্ড হোল্ডার রপ্তানি হচ্ছে। এর সঙ্গে আরও নতুন পণ্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে অ্যাপেক্স ট্যানারি, আকিজ ট্যানারি তাদের কারখানাকে আরও সম্প্রসারণ করেছে। তারা চামড়ার ওপর শৌখিন কাজ করে আরও মূল্য সংযোজন করছে। এসব বেশি মূল্যের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে জাপান, অস্ট্রেলিয়ায়। পর্যটকপ্রধান দেশগুলোতেও এসব পণ্যের কদর বেশি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন—বিটিএ সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি মন্থর হওয়াতে সম্প্রতি বাজার একটু খারাপ যাচ্ছে। তবে মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব-ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশি চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে রাশিয়া ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও ভালো বাজার তৈরি হয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে রপ্তানি বাড়াতে বিভিন্ন দেশে আমাদের দূতাবাসগুলোর সক্রিয় উদ্যোগ প্রয়োজন।  ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বড় বাজার ইতালি। এর পরই রয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, স্পেন, ফ্রান্স। এর বাইরে জাপান, জার্মানি, সুইডেন, সুইজারল্যান্ডে সীমিত আকারে রপ্তানি হচ্ছে। এখন ভারত, নেপাল, চীন, অস্ট্রেলিয়ার পাইকারি ক্রেতারাও বাংলাদেশ থেকে চামড়াজাত পণ্য নিচ্ছেন। বিশ্বে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার এখন ২১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের। বাংলাদেশ বিশ্ববাজারের মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে। বেশির ভাগই করছে চীন। জানা গেছে, দেশের অর্থনীতিতে চামড়া শিল্পের অবদান দিন দিনই বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জুতাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি বাড়ছে। এ শিল্পের অধীনে আছে ২২০টি ট্যানারি। রয়েছে অসংখ্য জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ও দর্শনীয় সরঞ্জামাদি তৈরির কারখানা। এ শিল্পে প্রত্যক্ষ কর্মরত প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার জন। রপ্তানি আয়ে এ খাতের অবদান ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। জানা গেছে, চীনের বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের ফলে এখন বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। চীনের ছেড়ে দেওয়া বিশ্বের জুতার বাজারের ওই অংশটিই ধরতে চাইছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্পনগরী সাভারে স্থানান্তরের কারণে চামড়া শিল্প আগের চেয়ে বেশি সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। চামড়ার মান ভালো হওয়াতে বিশ্ববাজারে চাহিদাও বেশি। সস্তা শ্রম ও নিজস্ব চামড়ার কারণে দেশে তৈরি চামড়ার পণ্যও অল্প দিনেই বিদেশি ক্রেতাদের নজর কাড়ে। বাংলাদেশি চামড়া পণ্যের মধ্যে ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থানে আছে জুতা পণ্য। ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ব্র্যান্ডের জুতার শোরুমেও আছে বাংলাদেশের তৈরি জুতা। দেশে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর জুতা তৈরি হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে রপ্তানি।

সর্বশেষ খবর