৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ২০:০২

ডাক্তারদের শাসন করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডাক্তারদের শাসন করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ফাইল ছবি

নিজ নিজ এলাকার সরকারি হাসপাতাল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করার জন্য এমপিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেছেন, অনেক ডাক্তার হাসপাতালে থাকেন না, ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছেন, আমাদের কাছে খবর আছে। আপনারা হাসপাতাল পরিদর্শনে যান, ডাক্তারদের শাসন করুন।  
জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে বৃহস্পতিবার প্রশ্নোত্তর পর্বে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের (সুনামগঞ্জ-১) সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী সংসদে এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্যরা স্থানীয় সরকার প্রধান। আপনারা নিয়মিত সরকারি হাসপাতালগুলো পর্যবেক্ষণ করুন। যেহেতু এমপিরা হাসপাতালগুলোতে গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান, তাই আপনাদের পর্যবেক্ষণ করা উচিত। অনেক ডাক্তার হাসপাতালে থাকেন না, তারা ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে রোগীরা ভুক্তভোগী হচ্ছেন। মনে রাখতে হবে প্রতিটি রোগী আপনাদের ভোটার।

ধুমপান করলে 'এমবিবিএস' না
কোন ধুমপায়ীকে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ দেওয়া হবে না বলে সংসদকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এমপি কাজী রোজীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করলেই শুধু চলবে না, যদি কোন প্রার্থী ধুমপান করে, সে যদি 'ধুমপান ভবিষ্যতে আর করবো না' এমন অঙ্গিকারপত্র না দেয়, তাহলে সে যত ভালো ছাত্র-ছাত্রীই হোক তাকে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি নেওয়া হবে না। তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোন ধুমপায়ী বা নেশা করে এমন ছাত্র-ছাত্রীকে ডাক্তারী (এমবিবিএস) পড়তে দেওয়া হবে না। এছাড়া হাসপাতালগুলোকে ধুমপানমুক্ত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বিনামূল্যে ক্যান্সরের চিকিৎসা
নারী এমপি কাজী রোজীর অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ক্যান্সারের চিকিৎসা দিচ্ছে। অসচেতনতার কারণেই মা-বোনেরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। ব্রেস্ট ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সারসহ নানাবিধ ক্যান্সারে মা-বোনেরা আক্রান্ত হচ্ছেন। মা-বোনদের লজ্জা ভেঙে এগিয়ে আসতে হবে, তাহলেই ক্যান্সার মুক্ত করা সম্ভব। মোহাম্মদ নাসিম আরও বলেন, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আমরা বিনামূল্যে ক্যান্সার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। তখন রাজধানীর মহাখালীস্থ জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১৯৯ জন দরিদ্র মহিলা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এসেছিলেন। এদের মধ্যে ১৬৩ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হয়েছে। তাদেরকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ব্রেস্ট ক্যান্সার, জরায়ুমখে ক্যান্সার, গলায় বা মুখে ক্যান্সার, ফুসফুস, ব্লাড ক্যান্সার সহ সব ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য আমরা কয়েকটি হাসপাতালে ডাক্তারসহ অবকাঠামো বাড়িয়েছি। প্রয়োজনীয় অষুধপত্রর সরবরাহ করছি। ভবিষ্যতে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য আর কাউকে বাইরে যেতে হবে না।

দেশে মুড়ি মুড়কির মত ক্লিনিক গজিয়ে উঠেছে
হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জাহিরের অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে মুড়ি মুড়কির মত ক্লিনিক গজিয়ে উঠেছে। এগুলো হাসপাতাল নয়। তাদের অনেকেই নীতিমালা না মেনে এসব চালু করেছেন। তবে এদের মধ্যে যারা মানসম্মত নয় বা নীতিমালা মেনে করেনি তাদের বন্ধ করে দেওয়া হবে। অনেকে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রোগীদের ঠকাচ্ছে।
 
বেগম নুর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ২৪৩ টি সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট নয় হাজার ১৯২ টি আসন রয়েছে। এ আসন সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে। এরমধ্যে ৩১টি সরকারি মেডিকেল কলেজে তিন হাজার ২১২টি আসন এবং ৬৬টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৫ হাজার ৯৮০ টি আসন রয়েছে। আসন সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ভেজাল ও অবৈধ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ৫৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা জরিমানা এবং ১১জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও ১০টি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করাসহ বিপুল পরিমাণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়াও জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত ৫টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও মান বহির্ভূত ওষুধ উৎপাদনের কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সর্বমোট ৬৩টি পদের রেজিস্ট্রেশন সাময়িক বাতিল করা হয়েছে এবং ৯টি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সকল মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা
রাজবাড়ি-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রতিটি সরকারী হাসপাতালে শুধু অসহায় দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা নয়, সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারবর্গের জন্য সকল সরকারী ও আধাসরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য এসব হাসপাতালে বিনামূল্যে একটি কেবিন বা সিট সংরক্ষিত আছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

বিডি-প্রতিদিন/০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর