শিরোনাম
৩ মে, ২০১৬ ১৮:৫৪
পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প

ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে নানামুখী ছলচাতুরি

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর:

ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে নানামুখী ছলচাতুরি

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে প্রাথমিক অবস্থাতেই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিবচর উপজেলার বিভিন্ন মৌজার অধিগ্রহণ করা জমিতে বেশি দাম পেতে জমির মালিকরা রাতারাতি ঘরবাড়ি-দোকান তৈরি করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে উঠেপড়ে লেগেছে। একদিনের মধ্যে ফসলি জমি হয়ে যাচ্ছে বসবাসের স্থান। এই জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের কোটি-কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত করেছে একটি চক্র। এ প্রক্রিয়ায় পেছনে থেকে মদত দিচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী নেতা ও প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারি। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসবের কোন সুযোগ নেই, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ভিডিও দেখে।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রেল লাইনের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চলতি বছর ১৩ জানুয়ারি মন্ত্রনালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে শিবচর উপজেলার বিভিন্ন মৌজার জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারণ করা হয়। জমি অধিগ্রহণের জন্য নোটিশ প্রদান করা হয় সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার উপর দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের পদ্মাসেতু সংযোগ প্রকল্পে রেলপথ নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্প এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ঘর-বাড়ি। এসব কৌশল শিখিয়ে দিচ্ছে এল.এ শাখায় কর্মরত জহিরসহ রেলপথ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোথাও মাস তিনেক আগে ফসলি জমি ছিল সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে কাঁচাবাড়ি, আবার কোথাও দালান, কোথাও টিনশেড বাড়ি। ফসলি জমিতে পুকুর কেটে তৈরি করা হয়েছে মৎস খামার। চোখে পড়ে মৎস খামারের সাইনবোর্ড। অথচ মাছের খামারে নেই কোন প্রজাতির মাছ, এমনি পুকুরে পানিও নেই। আবার কোথাও নতুন ঘর তৈরি করে মুরগির খামারের সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দিলেও খামারে নেই কোন মুরগি। শিবচর উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের ৯৫ নং বড়কেশবপুর মৌজার মৃত রশিদ মাতুব্বরের ছেলে সেলিম মাতুব্বর একটি টিনসেড ঘর তুলেছেন। মাস কয়েক আগেও এখানে ছিল ফসলি জমি। একই মৌজার মৃত করিম বেপারীর ছেলে নুর ইসলাম বেপারী দুইটি টিনসেট ঘর তুলেছেন। পাশে একটি মাছের খামারও তৈরি করেছেন। অথচ পুকুরে নেই পানি। খামারে নেই মাছ। পাশে ঝুলে আছে মাছের খামারের সাইনবোর্ড। এছাড়াও একই মৌজার আব্দুল হক বেপারী তিনটি ঘর তুলেছেন। নান্নু মোল্লা তিনটি, ইব্রাহিম মোল্লা পাঁচটি, আলি মোড়ল পাঁচটি, আক্তার শিকদার চারটি টিনসেড ঘর তুলেছেন। শিকদার কান্দি চররঘুনাথপুর এলাকার শাহজাহান মিয়া চারটি টিনসেড ঘর তৈরি করেছেন। এভাবেই বিভিন্ন এলাকায় মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কিছু অসাধু সার্ভেয়ার ও কর্মকর্তার যোগসাজসে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন ঘর-বাড়ি তৈরির কাজ চলছে।

অভিযোগে জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে অধিগ্রহণ করার নির্ধারিত ফসলি ও জলাবদ্ধ পতিত জমি শ্রেণি পরিবর্তন করে ভিটা, আবার কাঁচা বাড়ি-ঘরকে পাকা বাড়ি-ঘরে কিংবা টিনশেড বিল্ডিংকে বদলে পাঁচতলা ফাউন্ডেশন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ''অফিসের স্যারেরা কইছে তোমরা নতুন ঘর উঠাও। নতুন ঘরের বিল যা পাবা অর্ধেক আমাগো দিবা অর্ধেক তোমরা পাবা। তাই আমরা নতুন ঘর উটাইচি। আমাগো কি? স্যারেগো কতা না হুনলে আমরা কিচুই পামু না। আমরা বাপ-দাদার জমি দিতাচি কিচু লাভ না হলে দিমু ক্যান?''  একই কথা শোনা যায় আরও অনেকের মুখে।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ''৩ ধারা নোটিশের পর যদি তারা ৪০ তলা বিল্ডিংও করে তাহলে তারা ক্ষতিপূরণ পাবে না। ৩ ধারা নোটিশের পূর্বে আমরা ভিডিও করে রেখেছি। ওই ভিডিও অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবে।''

পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এস.কে চক্রবর্তীর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ''চলতি বছর ১৩ জানুয়ারির পরে ৩ ধারা নোটিশের পূর্বে অধিগ্রহণকৃত জায়গার ভিডিও করে রাখা হয়েছে। তা দেখেই ক্ষতিপূরণ বিল পরিশোধ করা হবে। অযৌক্তিক কোন ধরণের দাবি গ্রহণ করা হবে না।''


বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর