২৬ মে, ২০১৬ ১৩:১৭

শ্যামল কান্তির অডিও ক্লিপ নিয়ে নানা প্রশ্ন, সতর্ক সরকার

অনলাইন ডেস্ক

শ্যামল কান্তির অডিও ক্লিপ নিয়ে নানা প্রশ্ন, সতর্ক সরকার

নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় কোন পক্ষ যাতে সুযোগ নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে না পারে সেজন্য ব্যাপক সতর্ক অবস্থান নিয়েছে সরকার। বিভিন্ন সংস্থা এ বিষয়ের উপর সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। একদিকে এমপি সেলিম ওসমানকে সমর্থনকারী হেফাজতে ইসলাম, অন্যদিকে প্রগতিশীল মানুষের অবস্থান যাতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখছে সরকার।

এদিকে সরকারের সাতজন মন্ত্রী-নেতা সেলিম ওসমানের বিপক্ষে বক্তব্য রাখলেও নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠন বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। তারা সেলিম ওসমানের পক্ষে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে বলছেন, এমপি ওই শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে গণবিক্ষোভ থেকে রক্ষা করেছেন। এদিকে এমপি'র কাছে ওই শিক্ষক নিজেকে কন্যাদায়গ্রস্থ বলে কোটি টাকা চেয়েছেন- এমন অডিও বিভিন্ন অনলাইন ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। ওইসব প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত নিজেকে কন্যাদায়গ্রস্থ দাবি করে সেলিম ওসমানের প্রেস সচিবের সঙ্গে টাকা নিয়ে আলাপ করেন। এ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন।

সেলিম ওসমানের প্রেস সচিব বিশ্বজিত্ দাস বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিত্সাধীন অবস্থায় গত ২১ মে শ্যামল কান্তি (০১৭১২০৮০৫৮২ নম্বর) তাকে সকাল ৮টা ৫৪ মিনিটে ফোন করেন। এই বলে তিনি গণমাধ্যমের কাছে ওই ফোনালাপের অডিও রেকর্ড তুলে দেন। নিচে তার চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো-

শ্যামল কান্তি: কি বলবো ‘বাবা’ আমি তো ফ্যাসাদ গণ্ডগোল মণ্ডগোল চাই না। স্যারে কি করবে কি করবে না আমি জানি না। স্যারের সাথে একটু আলাপ করে দেখতে পারেন।

বিশ্বজিত্: কি আলাপ করবো স্যার?

শ্যামল কান্তি: উনি তো আমাকে সহানুভূতি জানিয়ে ছিলেন যে আমার তিনটি মেয়ে, একটি প্রতিবন্ধী। তিনটি মেয়েই তো বিবাহযোগ্য। আমাদের হিন্দুদের মধ্যে বিয়ে দিতে গেলে তো ত্রিশের (৩০) নিচে হয় না। তো তিন ত্রিশে ৯০ আর ওর চিকিত্সার জন্য ১০। এটা হিসাব কইরা আমি চাচ্ছিলাম। আমি তখন বুঝাইয়া বলতে পারি নাই। এখন স্যারকে যদি বুঝাইয়া বলতে পারেন। আমি খুব নিডি মানুষ, এখন ফয়সালা করে দিতে বলেন একেবারে।

বিশ্বজিত্: মানে ৩ মেয়ের বিয়ের জন্য ৩ ত্রিশে ৯০ লাখ আর চিকিত্সার জন্য ১০ লাখ এই ১ কোটি টাকার কথাই তো আগে বলেছিলেন?

শ্যামল কান্তি: হ্যাঁ; হ্যাঁ।

বিশ্বজিত্: ও স্যার, আপনিও আগে বুঝাইয়া বলতে পারেন নাই। আমিও বুঝি নাই।

এ দিকে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ও তার স্ত্রী সবিতা রানীর সঙ্গে এমপি সেলিম ওসমানের কথোপকথনের একটি ৩০ মিনিটের অডিও রেকর্ড গণমাধ্যমের কাছে এসেছে। এটিও সরবরাহ করেন সেলিম ওসমানের প্রেস সচিব বিশ্বজিত্ দাস। সেই কথোপকথনের চুম্বক অংশ:

শ্যামল কান্তি ভক্ত: স্যার, আপনি যাওয়ার পূর্বে আমাকে বেদম মারধর করে। আমি দেখেছিলাম দরজা আটকানো অবস্থায় ওরা ধাক্কাধাক্কি করছিল এই বলে যে হেড মাস্টারের লাশ চাই, নয়তো পদত্যাগ চাই।

সেলিম ওসমান: এখন তো একটা তদন্ত কমিটি হইছে। তদন্ত কমিটি দেখছে। আমিও একটা তদন্ত কমিটি বানিয়ে আসছিলাম। আপনি তো আমার কাছে একটা আবেদনও করেছেন। দাদা, আপনার পাপের যত বোঝা আছে এখন আমার কান্ধে দিয়ে দিছেন।

শ্যামল কান্তি: আমাকে একটু বলতে দেন স্যার। আপনাকে যেভাবে পাপী বলা হয়েছে সেভাবে আমার মুখ থেকে একবারও এক সেকেন্ডের জন্য এ কথা বেরোয়নি। এখন পর্যন্ত কেউ বের করাতে পারে নাই।

সেলিম ওসমান: সেটা কথা না দাদা। আমি যেটা করছি সেটাতো আপনাকে সেখান থেকে উদ্ধার করার জন্য করেছি দাদা। আপনাকে অপমান করার জন্য না। আমি যাওয়ার পর যখন ভেতরে গেছি আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি, তখন তো আপনি উল্টাপাল্টা বলছেন, আপনার কথায় কোনো ব্যালেন্স ছিল না।

কথোপকথনের একপর্যায়ে  সেলিম ওসমানের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী সবিতা রানী। তিনি বলেন, আমার স্বামী বলেছে আপনি (সেলিম ওসমান) না আসলে বাঁচতো না। আর ৫ মিনিট পরে আসলে মারাই যাইতো। এই কথাও বলছে।

এদিকে এমপি সেলিম ওসমানের কাছে অর্থ দাবির অডিও কথোপকথন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্যামল কান্তি ভক্ত ফোনে বলেন, ' এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। বিশ্বজিত্ দাস নামের কোন ব্যক্তিকে আমি চিনি না।'

প্রসঙ্গত, ছাত্রকে মারধর ও ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে গত শুক্রবার স্থানীয় পিয়ার সাত্তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে এমপি সেলিম ওসমানের সামনে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। এ ঘটনায় দেশে ব্যাপক প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়। পরে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি ধর্মীয় কটূক্তি করার অভিযোগের কোন প্রমাণ পায়নি।

বিডি-প্রতিদিন/ এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর