২৬ জুলাই, ২০১৬ ২১:০৫

এখন থেকেই ভোটের প্রস্তুতি নিন: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

এখন থেকেই ভোটের প্রস্তুতি নিন: প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ছবি

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন । দলীয় এমপিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নির্বাচনের আর মাত্র দুই বছর তিন মাস বাকি আছে। এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য এলাকায় গিয়ে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরা ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোরও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে এমপিদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য দলীয় এমপিদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া এমপিদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি না করার নির্দেশও দেন প্রধানমন্ত্রী। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের জন্য কাজ করার তাগিদ দেন তিনি।

সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে একাধিক সংসদ সদস্যের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। 

বৈঠকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জঙ্গি হামলা প্রতিরোধে গণসচেতনতা তৈরী জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও জেলা পরিষদ নির্বাচনয় আলোচনায় উঠে আসে। সভায় জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক চিফ হুইপ উপাধক্ষ্য আব্দুস শহিদ, হুইপ আতিকুর রহমান আতিক, অধ্যাপক ডা, আব্দুল মান্নান, আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদ ড. হাছান মাহমুদ, সংসদ সদস্য বিএইচ হারুন, শামীম ওসমান, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা আলোচনায় অংশ নেন।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব এমপিকে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বির“দ্ধে এলাকার মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যোকের নির্বাচনী এলাকায় যেসব উন্নয়ন কাজ বাকি রয়েছে তা শেষ করতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের যেসব উন্নয়ন কাজ হয়েছে, আরও কী কী উন্নয়ন কাজ করা হবে সেগুলো ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে বলে এমপিদের নির্দেশনা দেন। নির্বাচনের তিন মাস আগে নির্বাচনের জন্য দলকে পুরোপুরি প্র¯—ুত রাখতে হবে। এজন্য এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহিলা আসনে যেসব এমপি আছেন, তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকা তৈরি করার দরকার নেই। তাদের আমি মনোনয়ন দেবো না। আপনাদের যেজন্য এমপি বানিয়েছি সেই সংগঠন গোছানোর কাজ কর“ন। নিজে নিজে এমপি প্রার্থী হওয়া যাবে না, মনোনয়ন দেবো আমি। কে মনোনয়ন পাবে সেটা আমি দেখবো। আপনারা সংগঠনের জন্য কাজ করুন।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে যেন শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে, মানুষের নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়-সে বিষয়ে কাজ করতে হবে। জনগণের সঙ্গে যত সম্পৃক্ততা বাড়ানো যাবে জঙ্গিবাদ তত দ্রুত প্রতিরোধ করা যাবে। এজন্য জঙ্গিবাদ বিরোধী যে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে বা হচ্ছে, সেই কমিটিগুলোর সঙ্গে প্রত্যেক এমপিকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। দেশের সব অঞ্চলে শুধু জঙ্গীবাদবিরোধী কমিটি গঠন করলেই চলবে না, এসব কমিটিগুলোকে কার্যকর করে নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গী-সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। সর্বত্র এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশ করারও নির্দেশ দেন তিনি। বলেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ তৎপরতায় নারীদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দলের নারী সংগঠন ও নারী এমপিদেরও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। 
 
সংসদীয় দলের একটি সূত্র জানায়, সভায় বগুড়ার সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান ও নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান মন্ত্রীদের বির“দ্ধে অভিযোগ করে বলেন, মন্ত্রীরা এমপিদের সঙ্গে ভালো আচারণ করেন না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে না জড়ানোর নির্দেশ দেন।

জানা যায়, বৈঠকে একজন সংসদ সদস্য বলেন, সব পুলিশ আমাদের আপন না। তাই আমাদের সর্তক থাকতে হবে। তার এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কল্যাণপুরের জঙ্গি দমন তো পুলিশই করেছে। তারা ভালোভাবেই অভিযান পরিচালনা করেছে এবং সফল হয়েছে। আমাদের বিশেষায়িত সোয়াত বাহিনী ও পুলিশকে আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম রাতে অভিযান না চালিয়ে দিনের বেলায় চালাতে, যাতে সাধারণ মানুষের কোনো সমস্যা না হয়।

এলাকায় গিয়ে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোরও নির্দেশ দেন তিনি। তিনি সজাগ ও সতর্ক থেকে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ বিরোধী জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে সারাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ কমিটি গঠনে দলীয় এমপিদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে সংসদ নেতা আরও বলেন, দেশের দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে এই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলতে হবে। এগুলোকে সত্যিকার অর্থেই কার্যকর করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িতদের পাশাপাশি এদের কারা মদদ দিচ্ছে, বিপথে চালিত করছে, অর্থ-অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে সেসব মূল হোতাদের আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের উৎস খুঁজে বের করে একে পুরোপুরি দমন করতে চায়। এজন্য অন্য সবার মতো এমপিদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।         

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক এমপি জানান, তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে যে অভিন্ন খুতবা দেয়া হয়েছে, সেটি সব মসজিদে সঠিকভাবে পাঠ করা হচ্ছে কী না- সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ‘বর্তমানে যে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ চলছে, সেটি প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা নয়’-  শোলাকিয়ার খতিব ফরিদ উদ্দিন মাসউদের নেতৃত্বে দেশের এক লাখ আলেমের যৌথ বিবৃতিও দেশজুড়ে প্রচার করতে হবে। এটি নিশ্চিত করতে এমপিদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কেউ আর যাতে ইসলামের নামে জঙ্গীবাদে যুক্ত না হয়, বিপথে না যায়- অভিভাবক ও শিক্ষকদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে এমপিদের কার্যকর ভূমিকা পালনেরও নির্দেশ দেন তিনি। 


বিডি-প্রতিদিন/ ২৬ জুলাই, ২০১৬/ আফরোজ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর