২৫ আগস্ট, ২০১৬ ২৩:০২

ধর্মঘটে ৩২ মাদার ভ্যাসেলে পণ্য খালাস বন্ধ, দৈনিক গচ্ছা ৩ কোটি

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম:

ধর্মঘটে ৩২ মাদার ভ্যাসেলে পণ্য খালাস বন্ধ, দৈনিক গচ্ছা ৩ কোটি

নৌযান ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বত্রিশটি বিদেশি মাদার ভ্যাসেলের পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা জাহাজগুলোতে আছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন পণ্য। পণ্য খালাস বন্ধ হলেও ফিক্সড অপারেটিং কস্ট (এফওসি) বাবদ এই বত্রিশ জাহাজকে দৈনিক গড়ে প্রায় তিন কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে।
অপরদিকে আকস্মিকভাবে লাগাতার ধর্মঘট শুরু হওয়ায় পণ্য বোঝাই ছয় শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ দেশের বিভিন্ন ঘাটে আটকা পড়ে আছে। বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামালসহ আট লাখ টনেরও বেশি পণ্য রয়েছে জাহাজগুলোতে। কর্ণফুলী নদীতেও দেড় শতাধিক খালি লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে আছে বলে জানিয়েছে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল। সারাদেশের নৌ পথে পণ্য পরিবহন মুখ থুবড়ে পড়ায় বিভিন্ন শিল্প কারখানায় উৎপাদন সংকট এবং বাজার পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। সর্বনিম্ন বেতন দশ হাজার টাকা নির্ধারণসহ চার দফা দাবিতে গত সোমবার মধ্যরাত থেকে নৌযান শ্রমিকেরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করে।
 
এদিকে মাদার ভ্যাসেলে পণ্য খালাসের পাশাপাশি দেশব্যাপী নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঈদুল আযহার আগে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বৃহস্পতিবার সাড়ে পাঁচ লাখ টন সার, গম, লবণ, ক্লিংকার, জিপসাম, স্ক্র্যাপসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে ৩২টি মাদার ভ্যাসেল অবস্থান করছে। সোমবার মধ্যরাত থেকে নৌ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের নৌ ধর্মঘট শুরু হলে জাহাজগুলোতে পণ্য উঠানামার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে বিভিন্ন কারখানার জন্য আনা কাঁচামাল খালাস হচ্ছে না।
 
চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) জাফর আলম বলেন, নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে মাদার ভ্যাসেলে পণ্য উঠানামা হচ্ছে না ঠিকই। কিন্ত বন্দরের জেটি থেকে আগের খালাস করা কনটেইনার বের হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনারও আসছে। বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে কাজ হচ্ছে নিয়মিত। সমস্যা হচ্ছে কিছু মাদার ভ্যাসেলে সিমেন্ট ক্লিংকার, স্ক্র্যাপ ও গমজাতীয় খাদ্যপণ্য খালাস হচ্ছে না। প্রাইভেট লাইটারেজের কারণে ভোজ্যতেলও খালাস হচ্ছে। তবে জাহাজ জট বা কনটেইনার জটের তেমন আশঙ্কা আমরা করছি না। কারণ ধর্মঘট প্রত্যাহার হলে যখন কাজ চলবে তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে দ্রুতই।

এদিকে প্রতিটি জাহাজের পেছনে দৈনিক দশ থেকে পনের হাজার ডলার এফওসি রয়েছে। আমদানিকারককে এই টাকার যোগান দিতে হচ্ছে। ৩২ জাহাজের পেছনে আমদানিকারকদের দৈনিক কমপক্ষে তিন কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে বলে আমদানিকারকদের সূত্রে জানা গেছে। আবার ধর্মঘটের কারণে মাদার ভ্যাসেলগুলোতে রফতানি পণ্য নিয়েও বহির্নোঙরে যাওয়া যাচ্ছে না। সময়মতো পণ্য খালাস না হওয়ায় বন্দরে আবারো জাহাজ জট হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ নিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুল আলম পটলের সঙ্গে কথা বলে ঈদের আগে ধর্মঘট থেকে সরে আসার আহ্বান জনিয়েছেন।
 
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, নৌ শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে বহির্নোঙরে কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এপ্রিলের আন্দোলনের সময় সৃষ্ট জাহাজ জটের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন করে অচলাবস্থা বন্দরকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলবে। বিষয়টি দ্রুত সুরাহা হওয়া দরকার বলে মনে করেন বন্দর কর্মকর্তারা।


বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর