২১ অক্টোবর, ২০১৬ ২০:০৮

রাজশাহীর প্রকৌশলী নফিস নব্য জেএমবির সদস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীর প্রকৌশলী নফিস নব্য জেএমবির সদস্য

প্রকৌশলী নফিস

রাজশাহী গণপূর্ত অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নফিস আহমেদ নয়ন তার আত্মীয় এর কাছ থেকেই নব্য জেএমবির ‘আদর্শে’ উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রকৌশলী নফিসের মতো আর্থিকভাবে স্বচ্ছল আত্মীয়দেরই নব্য জেএমবির সদস্যরা তাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন। অর্থের যোগান পেতে নানাভাবে তাদের ‘মগজ ধোলাই’ করা হয়। আর এ ফাঁদেই পড়েছেন প্রকৌশলী নফিস।

গত ১১ অক্টোবর রাজশাহী গণপূর্ত অধিদফতরের কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রকৌশলী নফিসকে একটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, তাকে তার অফিসের সামনে থেকে অপহরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি মামলাও হয়। পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীরা গত ১৩ অক্টোবর মানববন্ধন করে প্রকৌশলী নফিসের উদ্ধার দাবি করেন।

তবে আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় র‌্যাব সদর দফতরের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানিয়েছেন, "প্রকৌশলী নফিস ও হাসিবুল হাসান নামে এক জঙ্গিকে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিল থেকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছে ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। তারা নব্য জেএমবির অর্থদাতা। প্রকৌশলী নফিস নব্য জেএমবির তহবিলে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন। আরও পাঁচ লাখ টাকা তার দেওয়ার কথা ছিল বলে প্রমাণ পেয়েছে র‌্যাব।"
    
নফিসের ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমান উল্লাহ জানান, "প্রকৌশলী নফিস অপহৃত হয়েছেন, এ অভিযোগে তার থানায় মামলা হলে বিষয়টি নিয়ে তিনি অনুসন্ধান শুরু করেন। এক পর্যায়ে জানতে পারেন, নব্য জেএমবির অর্থদাতা নিখোঁজ ডা. রোকনউদ্দিন তার আত্মীয়।  ডা. রোকন নব্য জেএমবির তহবিলে ৬০ লাখ টাকা দিয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে আছেন। তার সঙ্গে স্ত্রী নাইমা আক্তার, তাদের দুই মেয়ে রেজওয়ানা রোকন ও রামিতা রোকন এবং রেজওয়ানার স্বামী সাদ কায়েসও আছেন। রেজওয়ানা ও তার স্বামী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। বড় মেয়ে ও জামাতার মাধ্যমেই ডা. রোকন উগ্রপন্থায় জড়ান বলে ধারনা করা হয়। আর ডা. রোকনের মাধ্যমে প্রকৌশলী নফিস জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে তথ্য পেয়েছিলেন তারা।"

পুলিশের আরেকটি সূত্র বলছে, "গত ৮ অক্টোবর ঢাকার আশুলিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে নিহত আবদুর রহমানও প্রকৌশলী নফিসের দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই। আবদুর রহমানের প্রকৃত নাম সারোয়ার জাহান। তিনি ছিলেন নব্য জেএমবির প্রধান। তার সাংগঠনিক নাম শাইখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার খুমরিভুজা গ্রামে। সারোয়ার জাহান ও ডা. রোকনের মাধ্যমেই নব্য জেএমবিতে উদ্বুদ্ধ হন প্রকৌশলী নফিস আহমেদ।"
    
রাজশাহী মহানগরীর বালিয়াপুকুর ছোট বটতলা এলাকায় ৯২ নম্বর দোতলা বাড়িটি প্রকৌশলী নফিসের। মায়ের নাম অনুসারে লাল রঙা এ বাড়িটির নাম ‘নার্গিস কুঞ্জ’। এই বাড়িতে মা-বাবা ও স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে থাকতেন তিনি। তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে শুক্রবার বিকেলে এ বাড়িটিতে যাওয়া হয়। বাড়ির প্রধান ফটকের কলিংবেলে চাপ দিলে দোতলার বেলকোনিতে প্রায় ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এসে পরিচয় জানতে চান। তাকে পরিচয় দিলে তিনি অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর প্রায় ৩০ বছর বয়সী একজন নারী এসে ফের পরিচয় জানতে চান। তাকে পরিচয় জানালে তিনি কথা বলতে চাননি।

প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নফিসের বাবা আবদুল মান্নানও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের একজন প্রকৌশলী। তিনি বাসায় তেমন একটা থাকেন না। নফিসের একমাত্র বোনের বিয়ে হয়েছে সিরাজগঞ্জে। এ বাসায় নফিস, তার মা নার্গিস বেগম, স্ত্রী শামিমা আক্তার ও তাদের এক সন্তান থাকেন। মাঝে মাঝেই অচেনা মানুষের যাতায়াত ছিল বাসাটিতে। নফিস ‘অপহৃত’ হওয়ার পর থেকে সেটা বন্ধ হয়ে যায়।

আরএমপির মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, "নফিসকে আটকের বিষয়টি র‌্যাবের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়নি। তারপরেও খবর পেয়ে তারা তার পরিবার সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে পরিবারের কাউকে আটক কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।"

র‌্যাব-৫ এর স্কোয়াড্রন লীডার কেবিএম মোবাশ্বের রহিমও বলেছেন, "প্রকৌশলী নফিসকে আটকের বিষয়টি ঢাকা থেকে তাদের জানানো হয়নি। রাজশাহীর প্রকৌশলী নফিসই ঢাকায় আটক ব্যক্তি কী না তাও তিনি জানেন না।"

তবে ঢাকায় আটক ব্যক্তিই প্রকৌশলী নফিস বলে নিশ্চিত হয়েছেন গণপূর্ত অধিদফতরের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, "নফিস যে দিন থেকে অফিসে আসেন না, সেদিনই বিষয়টি প্রধান কার্যালয়কে জানানো হয়েছে। এখন তিনি আটক হয়েছেন, এ বিষয়টিও রবিবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলে তারাই নেবে।"

 

বিডি-প্রতিদিন/২১ অক্টোবর, ২০১৬/তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর