৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০৯:০৪

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে শত্রু খতমে ফের গুলি চালাতে চায় বিএসএফ

অনলাইন ডেস্ক

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে শত্রু খতমে ফের গুলি চালাতে চায় বিএসএফ

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে শত্রু খতমে গুলি চালাতে চায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এজন্য সীমান্তে জওয়ানদের হাতে ফের প্রাণঘাতী অস্ত্র তুলে দিতে চাইছে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স। শুধু দু'দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে তারা এ সিদ্ধান্ত নিতে বার বার পিছুপা হচ্ছে। এ কথা জানিয়েছেন বিএসএফের অন্যতম আধিকারিক কে কে শর্মা।

বিবিসিকে এক প্রশ্নের জবাবে শর্মা বলেন, প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ হওয়ার পর থেকেই তাদের ওপর 'হামলা' অনেক বেড়ে গেছে। চোরাকারবারিরাও দু:সাহসী হয়ে উঠেছে । দু'দেশের সুসম্পর্কের স্বার্থেই বিএসএফকে নন-লিথাল ওয়েপেন (প্রাণঘাতী নয়) ব্যবহার করে যেতে হচ্ছে।

সীমান্ত-হত্যার ঘটনা কেন শূন্যে নামানো যাচ্ছে না, তার জন্যও তিনি সীমান্তে মানুষের যাতায়াতের ধরণ ও চোরাকারবারকে দায়ী করছেন।

বিএসএফের মূল্যায়ন হল – চোরাকারবার নিয়ে সীমান্ত এলাকার মানুষজনের ভাবনাচিন্তা যতদিন না-বদলাবে ততদিন রক্তপাত হয়তো কখনওই পুরো বন্ধ করা যাবে না। তারপরও ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের স্বার্থেই নন-লিথাল ওয়েপন টিঁকিয়ে রাখা হচ্ছে, বলছেন বিএসএফের এই কর্তা।

 ''যেমন ধরুন গরু পাচারের ব্যাপারটা। আমরা বলি ‘গরু স্মাগলিং’, সীমান্ত এলাকার লোকজন বলেন ‘গরু ব্যবসা’। ফলে এর মধ্যে যে কোনও অপরাধ আছে সেটাই তারা মনে করেন না। এই স্মাগলারদের সঙ্গে সংঘাতেই আমাদের গুলিতে বহু লোক মারা যেতেন, তা নিয়ে কূটনৈতিক তিক্ততাও কম হয়নি। কিন্তু এখন একটা বন্ধু সরকার ঢাকায় ক্ষমতায় আছে, কাজেই আমাদেরও সীমান্তে প্রাণহানি কমানোর জন্য নন-লিথাল ওয়েপেন মেনে নিতে হয়েছে'', বলেন তিনি।

২০১১ সালে ইউপিএ জমানায় পি চিদম্বরম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সিদ্ধান্ত হয়েছিল সীমান্তে বাংলাদেশিদের প্রাণহানি ঠেকাতে বিএসএফ কেবলমাত্র নন-লিথাল ওয়েপেন ব্যবহার করবে। এর আগে বিএসএফের গুলিতে প্রতি বছর একশোরও বেশি বাংলাদেশি প্রাণ হারাতেন বলে বিএসএফ নিজেরাই স্বীকার করে। গত পাঁচ বছরে সেই সংখ্যাটা দশেরও নিচে নেমে এসেছে। কিন্তু একেবারে শূন্যে নামানো যায়নি।

বিএসএফের অন্যতম আধিকারিক কে কে শর্মা বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তটাই একটু ‘বিশেষ ধরনের’। এখানে সীমান্তের দুপারে যে মানুষজন আছেন তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, জাতিসত্ত্বা এমন কী ধর্মও অনেক ক্ষেত্রে একই। একটা কৃত্রিমভাবে টানা সীমান্ত থাকলেও নানাভাবে মানুষের যাতায়াত চলতেই থাকে। দিনমজুররাও আমাদের নজর এড়িয়ে ভারতে কাজ করে আবার ফিরে যান, ধরতে পারলে আমরা জেলে ঢোকাই। তিনি বলেন, ''আমাদের ম্যান্ডেট হল অবৈধ যাতায়াত ও সীমান্তে অপরাধ বন্ধ করা, সেটা করতে গিয়েই কখনও সখনও প্রাণহানিও ঘটে যায়। অনুপ্রবেশ পুরো বন্ধ হলে হয়তো সেটাও হত না, কিন্তু সীমান্তের যা পরিস্থিতি তাতে বিএসএফের পক্ষে মানুষের এই যাতায়াত ১০০ শতাংশ বন্ধ করা সম্ভব নয়।''

কে কে শর্মা বলেন, সীমান্তে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য তারা নন-লিথাল ওয়েপন ব্যবহার করছেন ঠিকই – কিন্তু এটা তেমন কার্যকরী হচ্ছে। বিএসএফ চট করে প্রাণঘাতী গুলি চালাবে না, এটা জানা থাকায় স্মাগলাররাও অনেক দু:সাহসী হয়ে উঠেছে। এই নন-লিথাল ওয়েপনের ব্যবহার শুরু হওয়ার পরই আমাদের বাহিনীর ওপর হামলা অনেকগুণ বেড়ে গেছে। ২০১৪ সালের পর থেকে এই ধরনের হামলায় আমাদের চারজন জওয়ান নিহত হয়েছেন, জখম হয়েছেন তিনশোরও বেশি।

বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর