৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৭:২৩

জানুয়ারিতে পদ্মা সেতুর পিলারে বসবে স্প্যান

একান্ত স্বাক্ষাৎকারে ওবায়দুল কাদের

লাবলু মোল্লা, মুন্সীগঞ্জ:

জানুয়ারিতে পদ্মা সেতুর পিলারে বসবে স্প্যান

শুক্রবার সকালে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় ঝটিকা পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, নদী শাসন, মুন্সীগঞ্জের মাওয়াস্থ সেতু প্রকল্পের কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ড্রাষ্ট হাউজে পদ্মাসেতুর মূল অবকাঠামো সুপার স্ট্রাকচার (স্প্যান) ফিটিংসসহ নানা কমকান্ড ঘুরে ঘুরে দেখেন। 

খোঁজ খবর নেন প্রকল্পে কর্মরত দেশী বিদেশী বিভিন্ন শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের। কাজের অগ্রগতি দেখে মন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পদ্মাসেতু নির্মানের পথে। ২০১৭ সালের নতুন বছরের শুরুতেই পদ্মাসেতু দৃশ্যমান হবে। মূল পিলারের উপর বসানো শুরু হবে স্প্যান। পদ্মা বহূমূখী সেতু প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ সিডিউল মাফিক দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এখানে প্রায় ২২ হাজার দেশী বিদেশী শ্রমিকরা অত্যান্ত দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। 

মন্ত্রী আরও বলেন, দুই পাশে সংযোগ সড়কের কাজ প্রায় শেষের পথে। মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ইতিমধ্যে ৩টি সুপারস্ট্রাকচার ফিটিংস এর কাজ সম্পন্নের পথে। এর মধ্যে ১টি সুপার স্ট্রাকচার (স্প্যান) ফিটিংস শেষে ভর সক্ষমতা যাচাইসহ পিলারের উপর বসানোর উপযোগি করা হয়েছে। সেটি এখন পিলারের উপর উঠার অপেক্ষায় রয়েছে। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে এটি মূল পিলারের উপর উঠে দাড়াবে। চোখে দেখার মত দৃশ্যমান হবে দেশবাসির স্বপ্নের পদ্মাসেতু। এরপর একে একে পুরো সেতু জুড়ে ৪২টি পিলারের উপর বসানো হবে ৪১টি স্প্যান। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুতে মোট ৪১টি সুপার স্ট্রাকচারের (স্প্যান) প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। তীব্র বায়ুপ্রবাহ ও ভূমিকম্পজনিত ধাক্কা মোকাবিলায় বেছে নেওয়া হয়েছে ওয়ারেন ট্রাস ফর্ম। এর আগে চীনের সাং হাই শহরের সিং হোয়াং দাও কারখানায় তৈরী ৩টি সুপার স্ট্রাকচার মাওয়ায় পৌঁছে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ১টি চীন থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে পৌঁছে আনলোডের অপেক্ষায় রয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে সেটাও আনলোড হয়ে মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। 

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া চীনের সাং হাই শহরের সিং হোয়ার দাং কারখানায় আরও ৭টি সুপার স্ট্রাকচার তৈরী সম্পন্ন হয়েছে। যে কোন দিন চীন থেকে সেটি বাংলাদের উদ্দেশ্যে জাহাজ যোগে রওয়ানা হবে বলেও তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান। 

মন্ত্রী জানান, ইতিমধ্যে ৩ হাজার ৬শ' মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন ক্রেন আনা হয়েছে যার সাহায্যে স্প্যানগুলি মূল পিলারের উপর বসানো হবে। এর আগে দুই হাজার পাচশ' টন ভারবাহি জার্মানী হ্যামার এবং পরে দুই হাজার টন ভারবাহি  হ্যামার নিয়ে দেশী বিদেশী শ্রমিকরা পদ্মা সেতুর কাজে দিনরাত শিফট ওয়াইজ কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া নদী শাসন, সার্ভিস এরিয়া টু এপ্রোচরোড মাওয়া প্রান্তে ও জাজিরা প্রান্তে কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক বলেও জানান তিনি। 

মন্ত্রী আরও জানান, অত্যান্ত দক্ষতার সাথে পদ্মা বহুমূখী সেতু প্রকল্পের নদী শাসনের জন্য দায়িত্বে রয়েছেন চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। মূল সেতুর নির্মাণ কাজের জন্য চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। সেতুর দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ, টোল প্লাজা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যৌথভাবে আব্দুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়ার হাইওয়ে কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে।

সবকছু মিলে প্রমত্ত পদ্মার বুকে বাংলাদেশের অহংকার হিসেবে জেগে উঠতে শুরু করেছে পদ্মা সেতুর পিলারের উপর সুপার স্ট্রাকচার। এটি বাংলাদেশের অহংকার এবং গর্বের প্রতীক। নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশের দক্ষিনবঙ্গের ২৩ জেলার মানুষের মাঝে আশার আলো ফুটে উঠেছে। সেতুর মূল অবকাঠামো পদ্মাসেতুর মূল পিলারের উপর বসানো হবে এমন খবরে পদ্মা পাড়ের মানুষের মাঝে উৎসবের আমেজ বইছে। শতবাধা আর বিপত্তি পার করে দেশবাসির স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হবেই এমন আশা এলাকাবাসীর।

 

বিডি প্রতিদিন/৯ ডিসেম্বর ২০১৬/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর