২৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:৩১

সিলেটে বোমা বিস্ফোরণে পুলিশ পরিদর্শকসহ নিহত ৪, আহত ২০

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে বোমা বিস্ফোরণে পুলিশ পরিদর্শকসহ নিহত ৪, আহত ২০

সংগৃহীত ছবি

সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় আধঘণ্টার ব্যবধানে জঙ্গিদের দু'টি বোমায় পুলিশের এক কর্মকর্তাসহ চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজনকে আত্মঘাতী বলে ধারণা করছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশের এক পরিদর্শক, ওসি ও এক র‌্যাব কর্মকর্তাসহ আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা ও ৭টায় দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকর দাখিল মাদ্রাসার সামনে বোমা দুইটির বিস্ফোরণ ঘটে। এর প্রায় আড়াইশত গজ দূরে শিববাড়িস্থ আতিয়া মহল নামক ভবনে অবস্থান করছে জঙ্গি সদস্যরা। তাদেরকে আটক করতে শনিবার দিনভর সেখানে অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোর সদস্যরা। তবে ভবনটিতে আটকা পড়া ৭৮ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন তারা।

নিহত পুলিশ কর্মকর্তরা হলেন সিলেট মহানগর পুলিশের পরিদর্শক আবু কাওসার। অন্য নিহতরা হলেন- নগরীর দক্ষিণ সুরমার চাঁদনীঘাটের সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আওলাদ হোসেনের ছেলে ও ছাত্রলীগ কর্মী ওয়াহিদুল ইসলাম অপু এবং দাড়িয়াপাড়ার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম। অপর নিহত ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। দুইদফা বিস্ফোরণে চারজন নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জেদান আল মূসা। আহতদের মধ্যে রয়েছেন মহানগর পুলিশের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম, দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি হারুনুর রশীদ, র‌্যাব কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ও স্থানীয় দৈনিক সিলেটের মানচিত্রের আলোকচিত্রি আজমল আলী। এর মধ্যে শনিবার রাতেই র‌্যাব কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আতিয়া মহলে অভিযান নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে সেনাবাহিনী। আধঘণ্টার মধ্যে শেষ হয় ব্রিফিং। এর কয়েক মিনিট পর পার্শ্ববর্তী গোটাটিকর দাখিল মাদ্রাসার সামনের রাস্তায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজন নিহত হন। আহত হন আরও অন্তত ১৫ জন। নিহতদের  একজন আত্মঘাতী হতে পারে এমন ধারণার কথা জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জেদান আল মূসা। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা এই মোটরসাইকেল ব্যবহার করে বোমা হামলাটি চালানো হয়ে থাকতে পারে।

তিনি আরও জানান, বিস্ফোরণের খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান সিলেট আদালত পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী আবু কাওসার, পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ও দক্ষিণ সুরমার ওসি হারুনুর রশীদসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দল। এসময় ওই স্থানে অবিস্ফোরিত একটি বোমার বিস্ফোরণে মারা যান আদালত পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী আবু কাওসার ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। গুরুতর আহত হন পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম, দক্ষিণ সুরমার ওসি হারুনুর রশীদ ও র‌্যাব কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। এদের মধ্যে মনিরুল ও আবুল কালামের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়াও ওই বিস্ফোরণে আরও অন্তত ৫ জন আহত হন। এর আগে আতিয়া ভবনে জঙ্গি বিরোধী অভিযান চলাকালে ভবনের পেছনের মন্দির এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন শিবলু মালাকার নামের স্থানীয় এক যুবক। ধারণা করা হচ্ছে পাঁচতলা ভবনটি থেকে গুলি ছোঁড়া হয়েছে।

এদিকে, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা শিববাড়ি পাঠানপাড়াস্থ ‘আতিয়া মহলে’ জঙ্গিদের সাথে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোদের লড়াই চলছে। কমান্ডো ও সাধারণ মানুষদের লক্ষ্য করে দফায় দফায় বোমা ও গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জঙ্গিরা। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ ব্যক্তি। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অভিযানে জঙ্গিদের অবস্থান করা পাঁচতলা ওই ভবনের ২৯টি ফ্ল্যাট  থেকে ৭৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে উদ্ধার করেছে কমান্ডোরা। আতিয়া মহল নামের ওই ভবনের নীচতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকা জঙ্গিরা শক্তিশালী ও সংগঠিত বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

এদিকে, দু’দফায় পুলিশসহ তিন জন নিহত হওয়ার পর এবং একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনায় সিলেটজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। বোমা বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হওয়ার আগে আতিয়া মহল ঘিরে ছিল সাধারণ মানুষের ভিড়। তবে এ ঘটনার পরই আতিয়া মহলের চারপাশ একেবারেই ফাঁকা হয়ে পড়ে। এছাড়া পুরো নগরীও দ্রুত ফাঁকা হয়ে যায়। তড়িগড়ি করে ঘরে ফিরেন নগরবাসী। এদিকে, এ ঘটনার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আতিয়া মহলের আশপাশে কঠোর সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা। এছাড়া সোয়াত, পুলিশ, র‌্যাব, এসবি, পিবিআইসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আছেন সতর্কবস্থানে। বোমা হামলার ঘটনাস্থল গোটাটিকর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা এলাকায় সার্চ লাইট লাগানো হয়েছে। এ এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জোরদার করা হয়েছে টহল। তবে পরিস্থিতি এখন থমথমে। উদ্বেগ আর আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার মানুষ।

সেনাবাহিনীর ব্রিফিং: শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে প্রেস ব্রিফিং করে সেনাবাহিনী। ব্রিফিংয়ে সেনা সদর দপ্তরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, ‘আতিয়া মহলে অভিযান এখনও চলছে। গত পরশু রাতে পুলিশের কাছে তথ্য আসে, এ ভবনে জঙ্গি আছে। এরপরই ভবনটি কর্ডন করে রাখে পুলিশ। ভেতরে যেসব জঙ্গি আছে, তারা সংগঠিত ও শক্তিশালী। এ জন্য পুলিশ সোয়াতের সাহায্য চায়। সোয়াত নিজেদের পদ্ধতিতে অভিযান চালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ভেতরে থাকা জঙ্গিরা শক্তিশালী ও ভবনে অনেক লোক আটকা পড়া অবস্থায় থাকায় তারা অভিযান না করে সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়। অভিযানের ডাক পেয়ে শুক্রবার রাতে একটি টিম পর্যবেক্ষণে আসে। শনিবার সকাল ৮টার দিকে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো টিম অভিযান শুরু করে। বেলা ২টা পর্যন্ত অভিযানে ২৯টি ফ্ল্যাট থেকে ৭৮ জনকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৩০ জন পুরুষ, ২৭ জন নারী ও ২১ জন শিশু ছিল। ভবনের প্রায় দেড়শ রুম ছিল সার্চ করে নিরাপদে তাদের উদ্ধার করা হয়।’ 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল যাতে ভবনে আটকা পড়া লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়। অভিযানকারী দল সে নির্দেশ সফলতার সাথে পালন করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভবনের ছাদের ঘর থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরক ছড়িয়ে রাখে জঙ্গিরা। এজন্য উদ্ধারে সময় বেশি লাগে। জঙ্গিরা ভেতরে আছে, তবে কয়জন আছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত ১০-১২টি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারা।’

বিডি-প্রতিদিন/২৬ মার্চ, ২০১৭/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর