২৯ মার্চ, ২০১৭ ০১:২৫

আতিয়া মহলের ‘মরজিনা’ নাম নয়, জঙ্গি নেটওয়ার্কের কোড!

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

আতিয়া মহলের ‘মরজিনা’ নাম নয়, জঙ্গি নেটওয়ার্কের কোড!

ফাইল ছবি

জঙ্গি আস্তানার কারণে ‘আতিয়া মহল’ এখন দেশ-বিদেশে আলোচিত। জঙ্গিদের দুর্গম এই আস্তানায় ‘মরজিনা’ নামের এক নারীকে নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। গত জানুয়ারির শুরুর দিকে কাওছার নামক এক ব্যক্তির সাথে আতিয়া মহলে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন মরজিনা।

তবে ‘মরজিনা’ কোনো নাম নয়, বরং এটি একটি জঙ্গিদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের ‘কোড নেম’, এমনটাই ধারণা করছেন গোয়েন্দারা।

উচ্চ পর্যায়ের গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি পাঠানপাড়াস্থ আতিয়া মহলের নিচ তলার একটি ফ্ল্যাটে কাওছার নামক ব্যক্তির সাথে মরজিনা নামের যে নারী থাকতেন, তা আসলে ওই নারীর আসল নাম নয়। বরং ‘মরজিনা’ জঙ্গিদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের একটি কোড নেম।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ‘মরজিনা’ শব্দটির সাথে নব্য জেএমবির নেতা মাঈনুল ইসলাম মুসা, রাজীব গান্ধী, শীর্ষ জঙ্গি জিয়া (সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া) ও নাজমুল হকের সম্পর্ক থাকতে পারে। এ শব্দটি এসব মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গিদের নামই নির্দেশ করছে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ‘মরজিনা’র ম দিয়ে মাঈনুল, র দিয়ে রাজীব গান্ধী, জি দিয়ে জিয়া এবং না দিয়ে নাজমুলকে বোঝানো হতে পারে। এ চার জনই দেশের শীর্ষ জঙ্গি।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের তথ্য মতে, মাঈনুল ইসলাম মুসাই এখন নব্য জেএমবির প্রধান। ঢাকার আজিমপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে মুসা সম্পর্কে তথ্য পায় পুলিশ। তাকে গ্রেফতারে বেশ কয়েকবার অভিযান হয়েছে। মুসার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। ১৯৮৮ সালে জন্ম নেওয়া নিউ গভর্মেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন ঢাকা কলেজ থেকে ইরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, নব্য জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা গ্রেফতার ও নিহত হওয়ার পর থেকেই মুসা নিজের মতো করে সংগঠন গোছাতে শুরু করেন। নব্য জেএমবির নাশকতার পরিকল্পনা, আত্মঘাতী স্কোয়াড পরিচালনা, অস্ত্র-বিস্ফোরক সংগ্রহ এবং অর্থ লেনদেনসহ সব বিষয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুসা। ঢাকার আশকোনার জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে অল্পের জন্য ফসকে যান মুসা।

ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী রাজীব গান্ধী। ২০১৪ সালে জেএমবিতে নিজের ‘গুরুকে’ হত্যা করে কিলিং মিশন শুরু করেন রাজীব। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যানুসারে, পুরনো জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমানের জামাতা আবদুল আওয়ালের একান্ত সহকারী ছিলেন রাজীব। আওয়ালের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর রাজীব ধীরে ধীরে জেএমবির হাল ধরার চেষ্টা করেন। পরে নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়ে তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ট হয়ে ওঠেন রাজীব। উত্তরাঞ্চলে নব্য জেএমবির অন্যতম সামরিক কমান্ডার ছিলেন তিনি। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইল থেকে গ্রেফতার হন রাজীব গান্ধী।

মেজর জিয়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, যা পরে আনসার আল ইসলাম নামে আত্মপ্রকাশ করে, সে সংগঠনের শীর্ষ নেতা। সেনা বাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া এই জিয়া বর্তমানে পলাতক। তাকে গ্রেফতারে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

নাজমুল হক অন্যতম শীর্ষ জঙ্গি, নব্য জেএমবির অর্থদাতা। গত বছরের অক্টোবরে আশুলিয়ার র‌্যাবের অভিযানে পালাতে গিয়ে পাঁচ তলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন নাজমুল। তার ফ্ল্যাট থেকে বিস্ফোরক, মোবাইল জ্যামার, পিস্তল ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাভারে একটি হাসপাতালে মারা যান নাজমুল। তার লাশ গত ২৩ নভেম্বর আঞ্জুমানে মফিদুলের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ‘মরজিনা’ নামে জঙ্গিদের যে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক, তার মধ্যে একমাত্র নাজমুল হক মারা গেছেন। আতিয়া মহলে মাঈনুল ইসলাম মুসা এবং মেজর জিয়ার মারা গেছেন বলে গুজব রয়েছে। তবে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। যদি সত্যিই মুসা বা জিয়া মারা গিয়ে থাকেন, তবে জঙ্গিদের ‘মরজিনা’ নেটওয়ার্ক আরো দুর্বল হবে।

তবে গোয়েন্দা সূত্র আরও বলছে, আতিয়া মহলের কথিত ‘মরজিনা’ ও জঙ্গিদের নেটওয়ার্কের ‘মরজিনা’ একই নাও হতে পারে। এ ব্যাপারে নিবিড়ভাবে তদন্ত কার্যক্রম চলছে।

 


বিডি-প্রতিদিন/ ২৯ আগস্ট, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-৩

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর