২৪ এপ্রিল, ২০১৭ ১৪:০৫
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি

স্বজন হারানোর এই আহাজারি থামার নয়

নাজমুল হুদা, সাভার

স্বজন হারানোর এই আহাজারি থামার নয়

একদিকে বৃষ্টি হচ্ছে, চলছে মিছিল-শ্লোগান। আর অন্যদিকে ভেসে আসছে বুক ভরা কান্নার শব্দ। রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের ছবি বুকে নিয়ে কান্না করছিলেন। আলী আহমেদ কাসেম ও তার স্ত্রী নার্গিস আক্তার তাদের ছেলে আফজালের ছবি বুকে নিয়ে রানা প্লাজার সামনে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন। তাদের  দুই ছেলে ও এক ছেলের বউ মারা গেছেন এই দুর্ঘটনায়। ছেলে উজ্জ্বল ও তার স্ত্রী খাদিজার লাশ পেয়েছেন। কিন্তু আফজালের লাশ এখনও পাননি।

সালমা বেগম তার ছেলের খোঁজে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে জানালা ভেঙে আসতে পারতো। কিন্তু সে বের হতে পারেনি।

সালমার ধারণা, তার ছেলের লাশ এখনও রানা প্লাজার মাটিতেই আছে। নিহতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রানা প্লাজার পাশের ভবনগুলো দেখিয়ে তিনি বলছিলেন, ওই ভবনগুলো তো ভাঙলো না। এই ভবন কেন ভাঙল? 

এরপর সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনার সুরে সালমা বলতে থাকেন, ‘ছেলেটাকে দুনিয়াতে তো সুখী হতে দিলা না, পরকালে তাকে যেন সুখী করো। 

জামালপুর থেকে এসেছেন খোরশেদা বেগম। তার ছেলে ছেলে আল-আমিনকে (শান্ত) দুর্ঘটনার প্রথম দিনই উদ্ধার করা হয়। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। ছেলের লাশ বাড়িতে পৌঁছালেও কিন্তু তিনি তার ছেলের কর্মস্থল দেখার জন্য রানা প্লাজার সামনে এসেছেন। বললেন, ছেলের লাশ দাফনের পর থেকে বাড়িতে থাকতে মন চায় না। তাই বৃষ্টি মধ্যে ছুটে এসেছি।

খোরশেদা বেগম ছেলের জন্য কাঁদছেন আর দোয়া করছেন। রানা প্লাজা দুঘর্টনায় নিহত স্বজনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা তাহমিনা বেগম। তিনি রানা প্লাজার আটতলার একটি কারখানার শ্রমিক ছিলেন। বললেন, ‘আমি তো বেঁচে আছি। কিন্তু আমার সহকর্মী সবাই মারা গেছেন। ’

রানা প্লাজায় সকাল থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশ গামেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন , টেক্সটাইল গামেন্টস ওর্য়াকার্স ফেডারেশন, জাগো বাংলাদেশ গামেন্টর্স শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ গামেন্টর্স এন্ড ইন্ড্রাষ্টিয়াল ওয়াকার্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ তৃণমুল গামেন্টর্স শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, স্বাধীন বাংলা গামেন্টর্স শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন। এসব সংগঠন একসাথে নিহত ১১৩৮ জন শ্রমিকের জন্য ১১৩৮টি ফুল দিয়ে শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। 

শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাপ), গার্মেন্টস-শ্রমিক ফেডারেশন, ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ল্যাম্প পোস্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, অশি ফাউন্ডেশন, শ্রমিক নিরাপত্তা সুরক্ষা ফোরাম, গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, বাংলাদেশ তৃণমূল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প-শ্রমিক ফেডারেশন। 

 

বিডি প্রতিদিন/২৪ এপ্রিল, ২০১৭/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর