২৮ মে, ২০১৭ ১৩:২২

‌'এবারের অর্জন পরবর্তী সামিটকে তরান্বিত করবে'

শামছুল হক রাসেল

‌'এবারের অর্জন পরবর্তী সামিটকে তরান্বিত করবে'

'দেশে ফেরার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি মনে হচ্ছে যেন এভারেস্ট জয় করে এসেছি। আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় সেই লক্ষ্য অর্জন সফল হয়নি। তবুও এটা ভেবে আনন্দিত যে, মেডিকেলের ছাত্রী এবং সর্ব কনিষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্টের প্রায় ২২ হাজার ফুট উচ্চতায় পায়ের ছাপ রেখে এসেছি। পরবর্তী সামিটে এটা টনিক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করি।' রবিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এভারেস্ট যাত্রা নিয়ে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মৃদুলা।  

শনিবার বিকেলে কাঠমান্ডু থেকে দেশে ফিরেন এই অভিযাত্রী। বিমানবন্দরে তাকে জানানো হয় উষ্ণ অভ্যর্থনা। বেসক্যাম্প পর্যন্ত সব কিছু ঠিক ছিল মৃদুলার এই যাত্রার। কিন্তু এরপরই তুষার ধসসহ নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় সে ও তার অন্যান্য সহযাত্রীর।

এমনকি গুরুতর আহত হওয়ায় শেরপাসহ বেশ কয়েকজন অভিযাত্রীকে হেলিকপ্টারে করে বেসক্যাম্প থেকে কাঠমান্ডু ফেরানো হয়।

বিগত যে কোনো বছরের তুলনায় এবার আবহাওয়া চরম প্রতিকূল ছিল বলে জানিয়েছে পর্বতরোহী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এবারের সামিটে এ পর্যন্ত ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। এতো কিছুর পরও থেমে থাকেনি মৃদুলা। এরই মাঝে বেশ কয়েকবার শীর্ষ চূড়ার দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন মৃদুলা। ১৭ হাজার উচ্চতায় বেসক্যাম্প থেকে নানা বাধা পেরিয়ে প্রায় ২২ হাজার ফুট উচ্চতায় নিয়ে যান নিজেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের ছোট পল্পের মতো 'শেষ হইয়াও হইল না শেষ' অবস্থা হয়ে দাঁড়ায় তার এই অভিযানের। 
  
ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মৃদুলা আমাতুন নূর। জন্ম ঢাকায় হলেও শেকড় ফেনীর পরশুরাম উপজেলার গুথুমা গ্রামে। বাবা আবু হেনা ও মা ফরিদা আক্তারের এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে মৃদুলাই বড়। বাবা-মা অবশ্য শুরুতে মেয়ের এই ডান পিটেপনা আবদার মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু মেয়ের আগ্রহ আর অদম্য বাসনার কাছে হার মেনেছেন শেষ পর্যন্ত।

ছোটবেলা থেকেই অজানাকে জানা ইচ্ছা ছিল তার। স্কুলজীবন থেকে বিএনসিসির সদস্য ছিল মৃদুলা। এর ধারাবাহিকতায় যোগ দেন বেশ কিছু ক্যাম্পেইন এবং চ্যালেঞ্জিং অভিযানে। এছাড়া স্কুবা ডাইভিং তার অন্যতম নেশা। সময় পেলে প্রায়ই সমুদ্রে গা ভাসান  স্কুবা ডাইভিং করতে। এছাড়া ক্সকবাজারে বড় বড় ঢ়েউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে করতে পারেন সার্ফিং। এমনকী নেপালের উচু পাহাড়ের কোলে দক্ষতার ছাপ রেখেছেন প্যারাগ্লাইডিং করে। মূলত নেপাল ও ভারতে বেশ কিছু পর্বতারোহী বন্ধুর কাছে পর্বতারোহণের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। গত বছর অক্টোবরে হিমালয়ের শীতিধার চূড়ায় আরোহণের পর থেকেই মৃদুলার স্বপ্ন মাউন্ট এভারেস্ট জয় করা। 

এদিকে, গত বছর সেপ্টেম্বরে হিমাচল প্রদেশের মানালির অটল বিহারি বাজপেয়ি ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মৃদুলা। প্রতিষ্ঠানটি তাকে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করে। বাংলাদেশ থেকে একাই ছিলেন তিনি। ছিলেন ৮০ জনের গ্রুপে সবচেয়ে কম বয়সী। 

১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় তার টানা ২৬ দিনের বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স। হিমালয়ের শীতিধার চূড়া জয়ের জন্য মৃদুলা রওনা দিয়েছিলেন ৭ অক্টোবর। চূড়াটি পর্বতের ১৫ হাজার ৫০০ ফুট ওপরে। ১৬ অক্টোবর সেখানে তিনি বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান। এই শৃঙ্গ জয় করা তিনিই সবচেয়ে কম বয়সী মেয়ে। ২৫ অক্টোবর ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ক্যাপ্টেন রণধীর সিং তাকে ওই চূড়া জয়ের ব্যাজ পরান। মৃদুলা আশা করছেন এবারের এই এভারেস্টের অর্জন পরবর্তী সামিটকে তরান্বিত করবে।

বিডি প্রতিদিন/ ২৮ মে ২০১৭/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর