২৯ মে, ২০১৭ ২১:৪৬

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’: উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

শফিক আজাদ, উখিয়া প্রতিনিধি:

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’: উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

কক্সবাজারে উখিয়ার উপকূলীয় এলাকাসহ জেলার উপকূলে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়, ‘মোরা’র প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। 

উপকূলবাসীকে সতর্ক থেকে প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শও দিয়েছে তারা। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই বৃষ্টি থাকতে পারে টানা কয়েকদিন। এই ‘মোরা’ আতংকে ভুগছে উখিয়ার উপকূলীয় এলাকার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ সহ কুতুপালং ও বালুখালী বস্তিতে অবস্থানকারী লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোরা প্রভাবে পাঁচ ছয়দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বেশ কয়েকদিনের টানা গরমে ঝড়টি প্রথমে নিম্নচাপে রূপ নিলেও এখন সেটি ঘনীভূত হয়ে ঝড়ে রূপ নিয়েছে।

সারাদেশে ভারী বৃষ্টি হলে মোরার প্রভাব কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলে কী হবে? এমন প্রশ্নে জবাবে আবহাওয়াবিদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি কেন্দ্রের কাছের গতি ঘন্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে ওঠানামা করছে। এটি যতই সামনে আসবে এর গতি আরও বেশি হবে। যেহেতু এটি একটি মাঝারি থেকে মধ্য বড় আকারের ঘূর্ণিঝড় সেহেতু এটির আঘাতে উপকূলে বেশ বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কা করছি আমরা ।’

তিনি আরো বলেন, ক্ষয়ক্ষতি বলতে বন্দরের আশেপাশের বাড়িঘর, গাছপালা পশু-পাখি ও প্রাণী সম্পদের ক্ষতি হতে পারে। যেহেতু আঘাত বন্দরে হানবে সেহেতু বন্দরের আশেপাশে ক্ষতিটা একটু বেশি হবে। তবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় স্বাভাবিকভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। যা স্বাভাবিক থেকে দুই থেকে আড়াইফুট বেশি উচ্চতার হতে পারে।

‘ঝড়টি আঘাত হানবে মঙ্গলবার সকালে সেই হিসেবে এখন থেকে ঝড় মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে রাখা প্রয়োজন। এই জন্য হাতের কাছে শুকনো খাবার অর্থাৎ চিড়া, মুড়ি, গুড় সংরক্ষণ করে রাখতে হবে’-বলছেন আরিফুর রহমান।

মঙ্গলবার অপ্রয়োজনে বাসার বাইরে যেতে বারণ করেছেন আবহাওয়া কর্মকর্তারা। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল ঝড়ের সাথে তীব্র ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে। যার ফলে গাছের ডাল, বৈদ্যুতিক তার ছিটকে গায়ের উপর পড়তে পারে।’ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কক্সবাজার  ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর এবং মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় মোরা এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ভোলা, বরিশাল জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয় ঘূর্ণিঝড় মোরা অতিক্রমকালে উখিয়ার উপকূলসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুণা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর জেলাসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ৬২ থেখে ৮৮ কিলোমিটার গতিতে দমকা হাওয়া থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উখিয়ার উপকূলীয় জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রে মতে ঘূর্ণিঝড়ের বেশির প্রভাব পড়বে আমার জালিয়াপালং ইউনিয়নে যেহেতু আমার ইউনিয়নটি সমুদ্র উপকূলীয়। তিনি নিন্মচাপ অথবা জলোচ্ছাসের আতঙ্কে রয়েছেন ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। 

অপরদিকে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থানকারী প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। কারণ এসব বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল হচ্ছে ঝুপড়ি ঘরটি। অল্প বাতাসেই এসব ঝুপড়ি মাটির সাথে বিলিন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। 

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোরার কারণে ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ হল রুমে কট্টোল রুম চালু হয়েছে। উপজেলা মাইকিং করে ঝুকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে যেতে বলা হয়েছে। 

বিডি প্রতিদিন/ ২৯ মে, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর