২৭ জুলাই, ২০১৭ ১৭:১৪

‘সরকারকে সহযোগিতা করার জন্যই ব্যর্থতা তুলে ধরতে চাই’ (ভিডিও)

অনলাইন ডেস্ক

‘সরকারকে সহযোগিতা করার জন্যই ব্যর্থতা তুলে ধরতে চাই’ (ভিডিও)

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেছেন, অনেক সময় গণমাধ্যমকে স্ব-আরোপিত নিয়ন্ত্রণে থাকতে হয়। মন্ত্রীরা বলেন, এই সরকার অনেক টিভি মিডিয়ার অনুমোদন দিয়েছে। প্রয়োজনে আরো দেবে। বক্তব্যটি গ্রহণযোগ্য নয়। অতীতের মতো এখনো গণমাধ্যমকে অনেক চাপ সইতে হয়। সোমবার বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনাভিত্তিক টক শো ‘বসুন্ধরা সিমেন্ট জনতন্ত্র গণতন্ত্র’ অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

সামিয়া রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক জানতে চান, বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনেকটা স্বাধীন—এটা বরাবরই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। আপনারা নিজ নিজ গণমাধ্যমের ব্যবস্থাপনায় আছেন। আপনারা বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

জবাবে মতিউর রহমান বলেন, ‘এ পর্যন্ত সারা দেশে আমার সাংবাদিক প্রতিনিধিদের নামে এক শরও বেশি মামলা হয়েছে। পৃথক ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছেন। সাংবাদিকদের যাঁরা পিটিয়েছেন, তাঁরা সরকারি দলের সদস্য। এই হলো একটা দিক। এখানে কিছু হলেই সাংবাদিকদের দোষারোপ করা হয়। আসলে সংখ্যা দিয়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রমাণ হয় না। ’ তিনি আরো বলেন, ‘আরেকটি দিক হলো সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন। আমার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া বিএনপি আমলে বন্ধ করা হয়েছিল। এবার আওয়ামী লীগও আবার বন্ধ করেছে। বেসরকারি বিজ্ঞাপনেও বাধা দিয়েছিল। আমরা বলেছি, এর মধ্যেই আমরা চলে যাব। করেছিও তা-ই। এর মধ্যেই আমাদের কাজ করতে হবে। ’ তিনি বলেন, ‘সারা দুনিয়ায় গণমাধ্যম এভাবেই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করে চলেছে। তবে আমাদের রাজনীতির কারণও এর জন্য কিছুটা দায়ী। কিছু আইন হচ্ছে। আইসিটি আইন হচ্ছে। ১৭-১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হবে। যে কেউ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। ’ তিনি বলেন, ‘ধন্যবাদ দিচ্ছি আইনমন্ত্রীকে, তিনি বলেছেন আইসিটি আইনে ৫৭ ধারা থাকছে না। তবে তথ্যমন্ত্রী আরো সহায়ক হলে ভালো হতো। ’

আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আপনারা তো অনেক বছর ধরে সংবাদপত্রের সঙ্গে কাজ করছেন। আপনারা যে সমাজের জন্য কাজ করছেন, এর পরিবর্তে আবার নির্যাতনের কথাও বলছেন। এর পেছনে দায় কতটুকু? এই যে মামলা-মোকদ্দমা হচ্ছে, এ দায় কি শুধু সরকারের, না আপনাদেরও?

জবাবে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের দায় কিছুটা তো রয়েছেই। তবে এবার রাজনীতি নিয়ে কিছু কথা বলতেই হবে। রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে চাই। যদি রাজনীতিবিদরা নির্বাচনে হেরে যান, তাহলে তাঁরা তা মেনে নিতে চান না। তাঁরা ভয়েস অব ডিসেন্ট বন্ধ করতে চান। সেই ডিসেন্ট আইনে দেখছি। ভয়েসে দেখছি। সত্যিকার অর্থে মনে হয় গণমাধ্যম একটা শত্রু। মনে হবে দেশে গণতন্ত্র নেই। ’

আলোচনার এ পর্যায়ে মতিউর রহমান বলেন, গণতন্ত্রের সহায়ক পরিবেশ নেই। রাজনীতিবিদরা নির্বাচনের আগেই ঠিক ভাবতে চান তাঁরা জয়ী হবেন কি হবেন না। কিন্তু গণতন্ত্র হলো, একজন জিতবে আরেকজন হারবে। তিনি বলেন, ‘আমি বলছি না গণতন্ত্র নেই, তবে যেটা নেই সেটা হলো গণতন্ত্রের সহায়ক পরিবেশ। ’

আলোচনার এ পর্যায়ে এ কে আজাদ বলেন, ‘দেখুন, আমি তো একটি-দুটি নয়, কয়েকটি মিডিয়া চালাচ্ছি। তাতে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেখেছি। আওয়ামী লীগ সরকার ও বিএনপিকেও দেখেছি। আমি বিএনপি আমলে সমকাল পত্রিকা বের করি। কিন্তু গোয়েন্দা রিপোর্ট আমার বিরুদ্ধে গেছে, আমি একটি বছর পত্রিকা প্রকাশ করতে পারিনি। তবে বসিয়ে বসিয়ে এক বছর সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করে গেছি। ’ তিনি বলেন, ‘যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তখন শাহেদ চৌধুরী নামে আমার এক সাংবাদিককে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে সারা রাত নির্যাতন করা হলো। বর্তমান সরকারের সময় আমার এক সাংবাদিক ৭১ নামে একটি পেজ বের করে। সেখানে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ায় একজন মন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে জেলে পাঠান। তাঁকে নির্যাতন করা হয়। অথচ সেই সাংবাদিক একজন পঙ্গু লোক। এ ছাড়া এবারই সিরাজগঞ্জে সমকালের এক সাংবাদিক একজন মেয়রের বন্দুকযুদ্ধের ছবি তুলছিলেন। তাঁকে সেখানেই মেরে ফেলা হলো। মেরাজ তাঁর নাম। আমরা সমকাল থেকে সাহায্য করেছি, কিন্তু মেরাজ তো আর ফিরে আসবে না। চট্টগ্রামে এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নিউজ করায় চেয়ারম্যান সাংবাদিককে এলাকাছাড়া করেন। পরে সমঝোতা করে তাঁকে এলাকায় ফিরতে হয়েছে। আমি একটি পত্রিকায় দেখেছি, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় এ পর্যন্ত  সাত শর বেশি মামলা হয়েছে। ’

বিস্তারিত দেখতে ভিডিওতে ক্লিক করুন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর