১৭ আগস্ট, ২০১৭ ১৮:৩৪

রাখাইনে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ, বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

শফিক আজাদ, উখিয়া প্রতিনিধি:

রাখাইনে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ, বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত মংডু, বুচিদং ও রাচিডং জেলায় গত কয়েক দিন ধরে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ ঘটাচ্ছে মিয়ানমার। এ ধরনের সৈন্য সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার ও নজরদারি বাড়িয়েছে।

নতুনভাবে রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার, নির্যাতনের আশংকায় এসব এলাকা থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের আবারো বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছে স্থানীয় লোকজন। গত ৩ দিনে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রায় ৩শতাধিক পরিবারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং-এ আশ্রয় নিয়েছে।

টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল হাসান আরিফুল ইসলাম জানান, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার সীমান্তে সেখানকার শান্তি শৃঙ্খলা বহাল রাখতে অতিরিক্ত সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে। এ কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কার বিষয়টি অনুধাবন করে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবির সতর্কতামূলক নজরদারি ও টহল জোরদার করা হয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের মতো যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি সম্পূর্ণরূপে সীমান্তে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। 

কক্সবাজার বিজিবি অধিনায়ক মনজুরুল হাসান খান বলেন, বৃহস্পতিবারও ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বিজিপি যৌথভাবে সীমান্তে টহল দিয়েছে।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গা বস্তিতে দেখা গেছে, গত ৩ দিনে প্রায় ৩’শ পরিবারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে তাদের নিকটাত্মীয়দের নিকট আশ্রয় নিয়েছে। মংডুর কিয়াংমং এলাকা থেকে মঙ্গলবার আসা কয়েক পরিবারের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী জহির আলম জানায়, তাদের গ্রামে গত শুক্রবার থেকে অতিরিক্ত সৈন্য বাহিনী গ্রামে ঘরবাড়ি তল্লাশির নামে তছনছ করছে ও রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশুদের মারধর করছে। আতঙ্কে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ ধরনের আরো অনেক পরিবার পালিয়ে আশ্রয় নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে রোহিঙ্গারা জানান। 

বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা লালু মাঝি বলেন, গত ৩ দিনে বালুখালীতে প্রায় ২শতাধিক পরিবারের মতো রোহিঙ্গা নতুনভাবে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তৎমধ্যে মংডুর কিয়াংমং থেকে শতাধিক পরিবার, বুছিদং এর তামি এলাকা থেকে ৭৫ পরিবার ও লাছিদং এর পাথরীকিল্লা এলাকা থেকে  বৃহস্পতিবার ৫ পরিবার পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে। লালু মাঝি জানান, এসব রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নাফ নদী পেরিয়ে রাতের অন্ধকারে অনুপ্রবেশ করছে। 

কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী মোহাম্মদ নুর জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কুতুপালং-এ মংডু ও বুছিদং এলাকা থেকে প্রায় শতাধিক পরিবারের মতো রোহিঙ্গা নতুনভাবে অনুপ্রবেশ করে শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। এ ধরনের বিচ্ছিন্নভাবে আরো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকা করেছে রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং এলাকার ইউপি সদস্য বখতেয়ার আহমদ।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক মনজুরুল হাসান খান বলেন, কক্সবাজার বিজিবির আওতাধীন সীমান্ত এলাকা দিয়ে কোন রোহিঙ্গা গত ৫ দিনে অনুপ্রবেশ করেনি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে অনাকাঙ্খিতভাবে কয়েকজন রোহিঙ্গা গোপনে চুরি করে সীমান্তে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা প্রতিহত করা হচ্ছে বলে টেকনাফ বিজিবি অধিনায়ক জানান। 

উল্লেখ্য, গত ৩ আগস্ট মংডুর ময়্যু পর্বতমালার পাদদেশে সেদেশের ম্রো উপজাতির ৭ জনের গুলিবিদ্ধ ও ছুরিকাঘাত লাশ উদ্ধার করা হয়। ইতোপূর্বে ২৯ সেপ্টেম্বর রাছিদং জেলার একটি নদীতে গলাকাটা একই পরিবারের পিতা, পুত্র ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। 

চলতি বছরের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত রাখাইনের বিভিন্ন এলাকায় ৫৫ জন নিহত ও ৩৪ জন নিঁখোজের তথ্য প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর অং সান সুচি’র অফিস থেকে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে আরকান প্রাদেশিক পরিষদের ৯ জন এমপি গত সপ্তাহে মিয়ানমারের সেনা প্রধানের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। 

উক্ত বৈঠকের একদিন পর প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিমানে করে রেঙ্গুন থেকে আরকান প্রদেশের রাজধানী সিটুয়ে বিমানবন্দরে অতিরিক্ত প্রায় ৫ শতাধিক পদাতিক সৈন্য প্রেরণ করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বিশেষ করে পূর্বে অবস্থিত কয়েক ডিভিশনের পাশাপাশি রাখাইনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনের মংডু, বুছিদং ও রাছিদং জেলায় এসব অতিরিক্ত পদাতিক সৈন্য মোতায়েক করেছে বলে রয়টার্স ও এএফপি’র খবরে জানানো হয়েছে।

ইতোমধ্যে নিয়োজিত অতিরিক্ত সৈন্যরা বুছিদং ও রাছিদং জেলার ময়্যু পর্বতমালা সংলগ্ন রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে মৌখিকভাবে কারফিউ জারি করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকার লোকজনদের ভুলেও ময়্যু পর্বতমালার দিকে অগ্রসর না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে রোহিঙ্গা আতঙ্কিত হয়ে নতুনভাবে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বিডিপ্রতিদিন/ ১৭ আগস্ট, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর