২২ আগস্ট, ২০১৭ ১৪:৩২
সাত খুন মামলা:

'বাবার খুনীদের ফাঁসির কাষ্ঠে দেখতে চাই'

অনলাইন ডেস্ক

'বাবার খুনীদের ফাঁসির কাষ্ঠে দেখতে চাই'

ফাইল ছবি

বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন মামলার আসামিদের নিম্ন আদালতের দেয়া দণ্ড বহাল থাকবে, নাকি পরিবর্তিত হবে সে সিদ্ধান্ত জানা যাবে ২২ আগস্ট মঙ্গলবার।

এর আগে ৭ খুনের মামলায় নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রধান আসামী নূর হোসেন, র‌্যাবের ৩জন কর্মকর্তা সহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও বাকি ৯জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২২ আগস্ট রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করা হয়। 

তবে এর আগে গত ১৬ জানুয়ারী দেওয়া নিম্ন আদালত বহাল রাখবে এমন প্রত্যাশা নিহত পরিবার ও স্বজনদের। তাঁরা বলছেন, তাদের প্রত্যাশা শুধু হাইকোর্ট রায় বহাল না সঙ্গে সঙ্গে নূর হোসেন সহ সকলের দণ্ড যেন দ্রুত কার্যকর হয়।

সাত খুনে নিহতেরা হলো, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, সহযোগী সিরাজুল ইসলাম লিটন, তাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান স্বপন ও গাড়ি চালক জাহাঙ্গীর এবং জৈষ্ঠ্য আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ি চালক ইব্রাহিম। 

নিহত ইব্রাহিমের ছেলে ইসমাইল হাসান রনি বলেন, বাবা আমাকে খুব আদর করতো। কখনো ধমক দিতো না। প্রায় সময় আমাকে বাবা গাড়ি চলাতে দিতো। বলতে আমি পাশে আছি তুমি চালাও। বাবার সঙ্গে ঘুরতে যেতাম, খেলা করেছি, এক সঙ্গে খেয়েছি সব কিছুই আজ স্মৃতি। আমি আমার বাবার খুনীদের ফাঁসির কাষ্ঠে দেখতে চাই।

ইব্রাহিমের স্ত্রী হুনফা বেগম বলেন, স্বামীরে মারা সঙ্গে সঙ্গে আমার তিনটা সন্তানের ভবিষ্যতকেও মেরে ফেলছে। এতো ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কি করবো। কোন কাজ করতে পারি না। বাবা টাকা দেয় সেই টাকা দিয়ে সংসার চলে। ওদের বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করবো। পড়ালেখা করাবে। কিন্তু সব স্বপ্ন শেষ। অপর স্ত্রী মাহমুদা ও হুনফা বেগম দুইজনেই বলেন, যারা আমাদের সংসার শেষ করছে। আমাদের সন্তানদের এতিম করছে। তাদের যেন ফাঁসি হয়।

ইব্রাহিমের মা নূর জাহান বেগম বলেন,আমার ছেলেরে যারা মারছে তাদের জন্য ফাঁসি হয়। আর কিছু চাই না।

সাত খুনে নিহত নজরুল ইসলামের গাড়ী চালক জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সামছুন্নাহার নুপুর বলেন, মাত্র ১০ মাস আগে আমাদের বিয়ে হয়। তার ২ মাস চারদিন পর একমাত্র মেয়ে রোজা জন্মগ্রহণ করে। এর মধ্যে নির্মম ভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করে। আমি তাদের ফাঁসি চাই। 

নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বলেন, ছেলেকে আর ফিরে পাবো না। কিন্তু যারা আমার ছেলে সহ সাতজনকে মেরেছে তাদের যেন ফাঁসি দেখে যেতে পারি। উচ্চ আদালতেও যেন তাদের ফাঁসি বহাল থাকে। এটাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি।

নিহত কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, যারা মেরেছে তাদের সঠিক বিচার দাবি করছি। এখন আমার প্রত্যাশা যে রায় হয়েছে সেটিই যেন বহাল থাকে। প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে বলেছেন যারা হত্যার সাথে জড়িত সবারই বিচার হবে। আগে কিছুটা প্রেসার ছিলো এখন সবকিছু সঠিক। নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই মিজানুর রহমান রিপন বলেন, আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আমরা চাই উচ্চ আদালতেও যাতে রায়টি বহাল থাকে এবং রায়টি দ্রুত কার্যকর হয়।

প্রসঙ্গত নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেন, র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা লেফটেন‌্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, লেফটেন‌্যান্ট কমান্ডার এম এম রানা ও মেজর আরিফ হোসেনসহ ২৬ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। বাকি ৯ জনকে সাত থেকে ১০ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। ১৬জানুয়ারী সোমবার সকাল ১০টা ৪মিনিট হতে ১০টা ৯ মিনিট পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন ওই রায় ঘোষণা করেন। আসামীদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় দিয়েছেন আদালত।

বিডি প্রতিদিন/ ২২ আগস্ট, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর