রাশিয়ায় চলমান ১৩৭তম আইপিইউ সম্মেলন থেকে অবিলম্বে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধ এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অস্থায়ী নিরাপদ অঞ্চল গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্বের সংসদীয় দলের প্রতিনিধিরা মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের জাতিগত নিধনেরও নিন্দা জানানোর পাশাপাশি মিয়ানমার সরকারের প্রতি অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ এবং রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নিজ বসতি থেকে উচ্ছেদ বন্ধ করার আহবান জানানো হয়।
একইসঙ্গে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য প্রধান হুমকি উল্লেখ করা হয়। রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার হরণের জন্য নিন্দা জানানো হয়।
সংসদ সচিবালয় জানায়, রাশিয়ার সেন্টপিটাসবার্গে চলমান ইন্টারপার্লামেন্টারী ইউনিয়নের ১৩৭তম সম্মেলনের তৃতীয় দিনে আজ এ নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়। গত রবিবার সম্মেলনের প্রথম দিনে “মায়ানমারে মানবিক সংকট এবং রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধের প্রচষ্টা বৃদ্ধি” বিষয়ে বাংলাদেশের আনীত একটি প্রস্তাব সম্মেলনের জরুরী প্রস্তাবনা হিসেবে আলোচনার জন্য গৃহীত হয়। সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্বের সংসদীয় প্রতিনিধিদের দলের মধ্যে বাংলাদেশের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ১ হাজার ২৭ জন। মিয়ানমারের পক্ষে ভোট পড়ে ৪৭টি। পরে বিষয়টি সম্মেলনের জরুরী এজেন্ডা হিসেবে গৃহীত হয় এবং আলোচনা শেষে এ বিষয়ে একটি রেজুলেশন তৈরীর সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য বাংলাদেশ, ইরান ও জাপানের প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। গতকাল সেই এজেন্ডাটি গৃহীত হয়। প্রস্তাবনায় মিয়ানমারের সরকার ও সংসদকেও সহিংসতা বন্ধ করার এবং এই দুঃখজনক অবস্থার অবসান ঘটানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টার আহ্বান জানানো হয়।
এজেন্ডা বলে গৃহীত প্রস্তাবনায় বলা হয়, মিয়ানমার থেকে এক মিলিয়নেরও বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আসার ফলে সৃষ্ট মানবিক সমস্যা ও বাংলাদেশেসহ আঞ্চলিক দেশসমুহের জন্য সৃষ্ট সম্ভাব্য নিরাপত্তার পরিণতি সম্পর্কে বিশ্বের সংসদীয় দলের প্রতিনিধিরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। একটি বিদ্রোহী আক্রমণকে কেন্দ্র করে বিশাল সামরিক প্রতিক্রিয়ার ফলে রোহিঙ্গা পালাতে শুরু করে বলেও প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়।
আইপিইউ সভাপতি সাবের চৌধুরী বলেন, এই রেজুলেশনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সংসদীয় সম্প্রদায় রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের জাতিগত শুদ্ধির অবসান ঘটাতে এবং আরো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসানে দৃঢ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তিনি বলেন, সহিংসতা এবং নিপীড়নের শিকার এক মিলিয়ন মানুষের অসহায়ত্ব আমরা নিরব দর্শকের মতো দেখে যেতে পারিনি। কারণ এই সঙ্কট আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যও একটি বড় প্রধান হুমকি।
প্রস্তাবনায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অস্থায়ী নিরাপদ অঞ্চল গঠনের দৃঢ়ভাবে সুপারিশ করা হয়েছে। যাতে ধর্ম ও জাতি নির্বিশেষে সব নাগরিককেই সুরক্ষা পেতে পারে। এছাড়া মিয়ানমারের সংসদকেও সহিংসতা বন্ধ করার এবং এই দুঃখজনক অবস্থার অবসান ঘটানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রস্তাব গ্রহণের পর অধিবেশনের সভাপতি ভ্যালেনটিনা মাতভিয়েনকো বলেন, বিশ্বব্যাপী সংসদ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে এই সম্মেলনের জরুরী আইটেম হিসেবে গৃহীত এই প্রস্তাবটি মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সমগ্র বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগকেই প্রতিফলিত করেছে। আমি বিশ্বাস করি যে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ এই সংকেত তাদের সংসদীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে শুনতে পাবেন এবং একটি বৃহৎ মানবিক দুর্যোগ এড়ানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন