১২ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১২:০২
প্রবাসীদের ধিক্কার

নিউইয়র্কে হামলাকারী কে এই ‘বাংলাদেশি’ আকায়েদ উল্লাহ?

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে:

নিউইয়র্কে হামলাকারী কে এই ‘বাংলাদেশি’ আকায়েদ উল্লাহ?

নিজের হাতে তৈরী করা বিস্ফোরকের সাহায্যে অসহায় মানুষ হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে হাতেনাতে গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশি আকায়েদ উল্লাহ (২৭)’র প্রতি প্রবাসীরা ধিক্কার দিচ্ছেন। আকায়েদের সন্ত্রাসী কর্মের দায় জাতিগতভাবে বাংলাদেশিরা কখনোই নিতে পারে না। সন্ত্রাসীর কোন জাত, ধর্ম বা গোষ্ঠী পরিচয় নেই। ওরা সন্ত্রাসী, মানবতা ও সভ্যতার শত্রু’-এমন মন্তব্য করেছেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য পার্লামেন্টের সদস্য (এ্যাসেম্বলীম্যান) ডেভিড ওয়েপ্রিন।

কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট ডেমক্র্যাটিক পার্টির লিডার অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেছেন, ‘আকায়েদ উল্লাহ প্রতি সংঘবদ্ধভাবে ঘৃণা প্রদর্শন করতে হবে। ওরা বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। ওরা মানবতার দুশমন হিসেবে চিহ্নিত হয়েই থাকবে’।
বিশ্বখ্যাত টাইমস স্কোয়ার এবং পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালের মধ্যে পাতাল পথে ১১ ডিসেম্বর সোমবার সকালে পাইপ বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অসহায় মানুষদের ক্ষতিসাধনের চেষ্টাকালে নিজের হাতে তৈরী বোমা বিস্ফোরণে আকায়েদ উল্লাহও আহত হয়ে গ্রেফতার হয়েছে।
২০১১ সালে পারিবারিক কোটায় অভিবাসনের ভিসায় মা-বাবা-ভাই-বোনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে আগত সন্দ্বীপের সন্তান আকায়েদ উল্লাহ এর কারণে সকল মিডিয়ায় ‘বাংলাদেশ’ উচ্চারিত হচ্ছে। এর ফলে অসহায় প্রবাসীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার ঘটেছে। এমনি অবস্থায় এদিন অপরাহ্নে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কর্মরত ৩ শতাধিক বাংলাদেশি অফিসারের সংগঠন ‘বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশন’ তথা বাপার উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে বাপার প্রেসিডেন্ট লে. শামসুল হক সর্বসাধারণের প্রতি আহবান জানান, ‘সকল ধর্ম, বর্ণ এবং জাতিগোষ্ঠির মধ্যেই কিছু দুষ্ট লোক রয়েছে। সেজন্যে ওই সম্প্রদায়ের সকলকে ‘দুষ্ট’ হিসেবে মনে করার কোন কারণ থাকতে পারে না। তাই সকলে যেন সতর্কতার সাথে স্বাভাবিক জীবন-যাপন অব্যাহত রাখেন।’
বাপার সেক্রোরি হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘আকায়েদ উল্লাহ দোষ করে থাকলে নিশ্চয়ই তার কঠোর শাস্তি হবে প্রচলিত আইন অনুযায়ী। আকায়েদের মত দুষ্ট লোকদের সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে সাথে সাথে যেন নিকটস্থ পুলিশ স্টেশন অথবা সিটির হটলাইনে জানানো হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউইয়র্কের সভাপতি কামাল আহমেদ বলেন, ‘এমন আচরণে লিপ্ত কোন ব্যক্তি আমাদের সমর্থন কখনো পাবে না। আমরা সব সময় ওদের প্রত্যাখান করেছি। আকায়েদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, সে যদি সত্যিকার অর্থেই অপরাধী হয় তাহলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই আমরা সকলেই।
 সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো ছিলেন ব্যারিস্টার ইশরাত সামী, মাজেদা এ উদ্দিন, রুহুল আমিন সিদ্দিক, ময়নুল ইসলাম, তারেক হাসান খান, আব্দুর রহিম হওলাদার, আব্দুল হাই জিয়া, কামাল ভূইয়া, সিটি মেয়রের প্রতিনিধি ড. সারা সাঈদ, যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ প্রমুখ।
এদিকে এহেন সন্ত্রাসী কান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সদর দফতরের উদ্ধৃতি দিয়ে কম্যুনিটি লিডার কাজী আজম এ সংবাদদাতাকে জানান, ‘আকায়েদ উল্লাহ এর আচরণের পরিপেক্ষিতে কেউ যদি কোন বাংলাদেশির সাথে অশোভন আচরণ কিংবা কোন গাল-মন্দ করে তাহলে সাথে সাথে যেন হট লাইনে ফোন করে জানানো হয়। পুলিশের হটলাইন : ১-৮০০-৬৯২-৭২৩৩।

কে এই আকায়েদ উল্লাহ?
সন্দ্বীপের মুছাপুর ইউনিয়নের ভূটান তালুকদার বাড়ির সন্তান আকায়েদ উল্লাহ'র বাবা মো: সানাউল্লাহ রাজধানী ঢাকার হাজারিবাগে বসবাস করতেন। চামড়ার ব্যবসা ছিল। সে সুবাদে আকায়েদ উল্লাহও হাজারিবাগেই বড় হয়েছে। সেখানকার ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাথে জড়িত ছিল। শিবিরের বিভিন্ন সাংগঠনিক তৎপরতায় তার সরব উপস্থিতিও ছিল। অভিবাসন ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর এখানে জামাত-শিবিরের সমর্থকদের সমন্বয়ে গঠিত মুসলিম উম্মাহ কিংবা একই শ্রেণির প্রবাসীদের নিয়ে কর্মরত কোন সংগঠনের সাথে আকায়েদ উল্লাহকে দেখা যেত না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আকায়েদ উল্লাহ পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত এক প্রবাসী এসব তথ্য জানিয়েছেন।

আকায়েদ উল্লাহ বরাবরই নিজের মধ্যেই নিবিষ্ট থাকতো। মাঝেমধ্যে মসজিদে গেলেও কারো সাথে কথা বলতো না।
ব্রুকলীনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত চার্চ-ম্যাকডোনাল্ডে সন্দ্বীপ প্রবাসীদের কোন কর্মকান্ডেও তার উপস্থিতি ঘটেনি কখনো। এলাকাবাসী জানান, নিউইয়র্কে এক বাংলাদেশি নির্মাণ ঠিকাদারের অধীনে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করতো আকায়েদ। পাশাপাশি তার ট্যাক্সি ড্রাইভিংয়ের লাইসেন্সও ছিল। তার সাথে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে (পেশাগতভাবে) তারাও বিস্ময়ে হতবাক হয়েছেন সন্ত্রাসে লিপ্ত হবার সংবাদে। বাংলাদেশি ওই নির্মাণ ঠিকাদার বর্তমানে দুবাইতে অবস্থান করায় আকায়েদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। প্রবাসীরা আরো জানিয়েছেন, দু’বছর আগে তার বাবা সানাউল্লাহ এই নিউইয়র্কেই ইন্তেকাল করেন। আকায়েদের এক ভাই, বোন এবং মা রয়েছেন নিউইয়র্কে। তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের জবানবন্দি নিয়েছেন সোমবার অপরাহ্নে।
আহত আকায়েদকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ম্যানহাটানের বেলভিউ হাসপাতালে। সেখানে তার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্কের পুলিশ কমিশনার জেমস ও’নীল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষোভে সে নাকি আমেরিকানদের হত্যায় প্রবৃত্ত হয়েছিল।’
আকায়েদের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ এবং প্রচলিত আইনে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রবাসীরা।
‘এলায়েন্স অব সাউথ-এশিয়ান আমেরিকান লেবার’ তথা এসালের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট মাফ মিসবাহ, মার্কিন আইটি সেক্টরে চাকরির উপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সারা আমেরিকায় বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা অর্জনকারি ‘পিপুলএনটেক’র নির্বাহী প্রধান ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিফ, শিকাগোস্থ বাংলাদেশের অনরারি কন্সাল জেনারেল মনির চৌধুরী, প্রখ্যাত মানবাধিকার আইনজীবী অশোক কর্মকার, শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের নেতা ড. পার্থ ব্যানার্জি, ডেমক্র্যাটিক পার্টির সংগঠক ও মূলধারার ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বাদল, ফোবানার নির্বাহী চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব জাকারিয়া চৌধুরী, বাংলাদেশি-আমেরিকান ডেমক্র্যাটিক লীগের প্রেসিডেন্ট খোরশেদ খন্দকার, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা ও নির্মাণ ব্যবসায়ী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সেক্রেটারি রেজাউল বারি এবং যুগ্ম সম্পাদক ও নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো: আব্দুল কাদের মিয়া, মহানগর আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট এডভোকেট মোর্শেদা জামান, কম্যুনিটি লিডার ও ডেমক্র্যাটিক পার্টির সংগঠক মোহাম্মদ এন মজুমদার, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির নেতা ও ডেমক্র্যাট ওসমান চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথকভাবে আকায়েদ উল্লাহ এর আচরণের নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশিরা সব সময়ই সন্ত্রাসবাদকে ঘৃণা করে। ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাস করে তারা আসলে মানুষ নয়, শয়তান।’

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর