১৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ১৭:৫৬

ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবনে শুরু হচ্ছে বাঘ গণনা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা:

ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবনে শুরু হচ্ছে বাঘ গণনা

প্রতীকী ছবি

এই প্রথমবারের মতো ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবনে শুরু হচ্ছে বাঘ গণনা। আগামী মার্চ মাস থেকেই শুরু হবে এই গণনা। সোমবার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সজনেখালির ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারিতে এক কর্মশালা শুরু হয়েছে যা চলবে আগামী বুধবার পর্যন্ত। 

কর্মশালায় যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা, ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সটিটিউশান অফ ইন্ডিয়ার বিশিষ্ট বিজ্ঞানী কামার কুরেশি, ব্যাঘ্র প্রকল্প দফতরের ফিল্ড ডিইরেক্টর নিলাঞ্জন মল্লিক, দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগের ডিএফও তৃপ্তি শাহ। বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত ছিলেন বন অধিদফতরের ৪ জন ডিভিশনাল ফরস্টে অফিসার (ডিএফও)। এরা হলেন বসিরুল আল মামুন, মাহবুর রহমান, মদিনুল হাসান ও মামুদুল হাসান। প্রশিক্ষণ শিবির শেষে বন কর্মীদের নিয়ে সুধন্যখালি, পীরখালি-২ জঙ্গলে গিয়ে কীভাবে গণনা করা হবে তা হাতে কলমে বোঝানো হয়। 

বিশাল এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে রয়েছে। কিন্তু জঙ্গল এলাকায় দুই দেশের মধ্যে কোনও নির্দিষ্ট সীমারেখা না থাকার কারণে বাঘের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছিল। সেই সমস্যা মেটাতেই এবার যৌথউদ্যোগে বাঘ গণনা শুরু করছে দুই দেশ। 

জানা গেছে, মূলত বনকর্মীরাই বাঘ গণনা করবেন। এবং সেই বনকর্মীদের যারা প্রশিক্ষণ দেবেন-সেই সব কর্মকর্তাদেরকেই এই কর্মশালাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মোট তিনটি পর্যায়ে এই গণনা করা হবে। জঙ্গলকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে ৪০ টি দল গঠন করা হবে। যার এক-একটি দলে ৪-৫ জন সদস্য থাকবেন। 

এতদিন সুন্দরবনে বাঘ গণনা করা হত সাধারণত বাঘের পায়ের ছাপ দেখে, গলায় রেড়িও কলার লাগিয়ে অথবা জঙ্গলে ক্যামেরা ট্র্যাপের মাধ্যমে। কিন্তু এবার সেই পদ্ধতিতে বেশ কিছুটা বদল আনা হচ্ছে। এছাড়া সর্বাধুনিক ইনফারেড রশ্মি চালিত স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরার মাধ্যমেও নজরদারি চালানো হবে। এজন্য তিনটি পর্যায়ে প্রায় ১৪১০ টি অত্যাধুনিক ক্যামেরা লাগানো হবে। 

এব্যাপারে রাজ্যের মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা জানান, ‘সর্বভারতীয় স্তরে প্রতি চার বছর পর পর বাঘ গণনা করা হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর গণনা করা হয় এই পদ্ধতিতে। এবার বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাঘ গণনা করা হবে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড সহ বিভিন্ন এনজিও একাজে যুক্ত থাকবে। গোটা জঙ্গলকে বিভিন্ন গ্রীডে ভাগ করে ক্যামেরা বসানো হবে। বাঘের শরীরের দু-দিকের ছবি ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে তা পর্যবেক্ষণ করে ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সটিটিউশানে পাঠানো হবে’। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনটি পর্যায়ে এই গণনা চলবে বলেও জানান তিনি।

ওয়াইল্ড লাইফের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী কামার কুরেশি জানান, ‘শুধু বাঘ নয়, সুন্দরবনে কোথায় কোথায় হরিণ, শূকর আছে তাও দেখা হবে। ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে প্রায় ২০০ বাঘ আছে। দুই দেশ একসঙ্গে গণনা করলে বাঘের সংখ্যাটি ঠিকমতো পাওয়া যাবে। তাছাড়া বাঘের পায়ের ছাপ দেখে গণনাতে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যেত না। তাই এই পদ্ধতি বদল আনা হয়েছে’। 

অন্যদিকে বাংলাদেশের ডিএফও সাদিনুল হাসান বলেন, ‘২০১৫-১৬ সালে আমাদের দেশে প্রথম বাঘ গণনা করা হয়। আমরা ১০৬ টি বাঘের সন্ধান পেয়েছি। আগে এক একটি জায়গায় এক এক পদ্ধতিতে গণনা করা হত। যার জন্য সঠিক তথ্য পাওয়া যেত না। এবার যৌথ উদ্যোগে একই পদ্ধতিতে গণনা করা হচ্ছে’।


বিডি প্রতিদিন/১৬ জানুয়ারি ২০১৮/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর