১৮ জানুয়ারি, ২০১৮ ২৩:৫৪

ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ক্রুটিমুক্ত নয় : অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ক্রুটিমুক্ত নয় : অর্থমন্ত্রী

ফাইল ছবি

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংকিং খাতকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে পরিচালনার বিবরণ দিয়েও বলেছেন, "ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ক্রুটি মুক্ত নয়। আমি স্বীকার করি ব্যাকিংখাতকে পূর্ণাঙ্গভাবে ত্রুটিমুক্ত করা যায়নি। তবে আমাদের চেষ্টার কমতি আছে বলে মনে করি না। এগুলো কার্যকর করতে একটু সময় লাগে।"

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদেও শীতকালীন অধিবেশনে আজ বৃহস্পতিবারের  বৈঠকে সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন। 

সংসদের কার্য প্রণালী বিধির ১৩৭ ধারা বলে উত্থাপিত সিদ্ধান্ত প্রস্তাবে ‘ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনিয়ম ও ত্রুটিমুক্তভাবে পরিচালিত করার জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক’। বেসরকারি সদস্যদেও কার্য দিবসে সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন সরকার দলীয় সদস্য মো: ইসরাফিল আলম (নওগাঁ-৬)। আরো ১০ জন এমপি প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়ে অবিলম্বে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে সংশোধনী প্রস্তাব আনেন। 

নোটিশের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, মাননীয় সদস্য যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেখানে তিনি যা চেয়েছেন, সেটি হচ্ছে এসব কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক। দেশের ব্যাংকসমূহের অনিয়ম ও ত্রুটি বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে শুরু হয় এবং এক সময় মারাত্মক আকার ধারণ করে। 

এসময় তিনি আর্থিক খাত বিশেষ করে ব্যাংকিংখাতের সুশাসন নিশ্চিতে সরকারের গৃহীত কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, একসময় ডিফল্ট ঋণ হয়ে ছিল ৪০ শতাশং। এখন আছে-১১/১২ শতাংশ। ২০১৩ সালে সরকার ব্যাংকিং আইন সংশোধন করে। এটা একটা চলামান প্রসেস। দু‘দিন আগে আরেকটি সংশোধনী পাস করেছি। এসময় অর্থমন্ত্রী ইসরাফিল আলমের প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান। পরে স্পিকার ১৩৮ বিধি মোতাবেক তা প্রত্যাহারের আহবান জানালে তিনি তা প্রত্যাহার করে নেন।

এর আগে ইসরাফিল আলম বলেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে যে উন্নয়ন হয়েছে ইতিপূর্বে বাংলাদেশ নয় তৃতীয় বিশ্বের কোন দেশেই এত দ্রুত এত উন্নয়ন করতে পারেনি। এজন্য গৌরব বোধ করি। কিন্তু আমাদের আর্থিক ও ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে সবসময় কোন না কোন বিতর্ক সমস্যা এবং সমালোচনা আমাদেরকে প্রায়ই বিব্রত করে। আমাদেরকে বাকরুদ্ধ করে, হতাশ করে। যারা এসব আইন প্রয়োগের দায়িত্বে আছে, প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছে তাদের ব্যর্থতার জন্য আর্থিক সেক্টর বিপর্যয়ের মুখে বিপন্নতার মুখে পতিত হয়েছে। আর তার দায়িত্ব সরকার ও সংসদকে গ্রহণ করতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগকেও বহন করতে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক সাফল্য অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে ব্যাংক খাতের কিছু কিছু বিশৃঙ্খলার কারণে। এ খাতে শুদ্ধাচার প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে দেশের অগ্রগতি বাধা পড়বে। ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্কট দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। বিদায়ী বছরে ব্যাংক খাত নড়বড়ে অবস্থায় পড়েছে। ৫৭টির মধ্যে ২০টির মত আর্থিক অবস্থা ছিলো দৃশ্যমানভাবে খারাপ। 

সরকার দলীয় নওগার এমপি আরো বলেন, খেলাপি ঋণ মারাত্মক ভাবে বৃদ্ধি পায়, কমবেশি সব ব্যাংকেই সুশাসনের অভাব ছিলো। নামে-বেনামে ইচ্ছামতো ঋণ নেওয়ার হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালক, নির্বাহী বড় কর্মকর্তারা এসব কাজের সাথে জড়িত ছিলো- এরজন্য তদন্ত করার দরকার নেই। খোলা চোখে মানুষ দেখেছে, জেনেছে। মন্ত্রণালয়, সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে থেকে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই।  ব্যাংক খাতের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রন ও তদারকি বৃদ্ধি পাওয়ার চেয়ে দুর্বল হয়েছে। কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যা জোড়াতালি দেওয়ার মত। যা প্রয়োজনের তুলনায় যথার্থ ছিলো না। 

তিনি আরও বলেন, "রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমান আশঙ্কাজনকজভাবে বেড়েছে। লুটপাটের পরেও সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা মূলধনের যোগান দিতে হচ্ছে। যে টাকা জনগণের ট্যাক্সের টাকা, সাধারণ মানুষের ঘাম ঝরানো টাকা। নতুন ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। তারপরও নতুন নতুন লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ হয়নি। সাধারণ মানুষ ব্যাংকে টাকা রেখে ফেরত পায় না। এত সফলতা, এত অহঙ্কার, এত গৌরব ম্লান করে দিয়েছে ব্যাংকিং খাতের ব্যর্থতা।  সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাংক নিয়ে চরম সন্দেহ-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।" 

ইসরাফিল বলেন, যেসব ব্যাংক টাকা আত্মসাৎ করে সেসব ব্যাংক টিকিয়ে রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই। যারা শর্ত পূরণ করতে পারে না, তাদের লাইসেন্স নবায়ন না করে কেন বাতিল করা হচ্ছে না। কেন তাদের সনদ নবায়ন করা হচ্ছে তাও জানতে চান তিনি।

 

বিডি-প্রতিদিন/ আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর