২১ জানুয়ারি, ২০১৮ ০৮:৩৪

দ্বিতীয় পর্বে আখেরি মোনাজাত আজ

মোস্তফা কাজল, খায়রুল ইসলাম ও মো. আফজাল, টঙ্গী থেকে

দ্বিতীয় পর্বে আখেরি মোনাজাত আজ

আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আয়োজন। ১৯ জানুয়ারি আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। এর আগে ১২ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল প্রথম পর্ব। ১৪ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা।

গতকালও কনকনে বাতাস উপেক্ষা করে লাখ লাখ মুসল্লির ঢল ছিল তুরাগতীরের বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে। মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ধর্মীয় মহাসমাবেশের দ্বিতীয় পর্বের আজ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন কাকরাইল জামে মসজিদের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা মোহাম্মদ যোবায়েরুল হাসান। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে যে কোনো সময় শুরু হবে আখেরি মোনাজাত। আখেরি মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি, ঐক্য, অগ্রগতি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করা হবে।

মোনাজাত উর্দু ও আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হবে। এ পর্বে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আখেরি মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত ৩১ দেশের কয়েক হাজার মুসল্লি ইজতেমা মাঠে পৌঁছছেন।

আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আজ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুর জেলা ও সব উপজেলা এবং ঢাকা জেলার সাভার ও ধামরাই উপজেলার সব চিকিৎসকের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। এসব চিকিৎসককে ইজতেমায় আগতদের স্বাস্থ্যসেবায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আজও কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও আখেরি মোনাজাত সরাসরি সম্প্রচার করবে। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে দেশের ১৩ জেলার মুসল্লি ট্রেন, বাস, নৌকায় ও হেঁটে ইজতেমায় যোগ দিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই মাঠের শামিয়ানার নিচে কোনো জায়গা খালি নেই। মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার কলকারখানায় কর্তৃপক্ষ আজ ছুটি ঘোষণা করেছে।

মোনাজাত উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। এমনটাই জানালেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি। তিনি বলেন, প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও থাকছে একই ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা। এ ছাড়া যে কোনো ধরনের নাশকতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আকাশে টহল দেবে র‌্যাবের হেলিকপ্টার।

গতকাল ফজরের নামাজের জামাত আদায়ের পর আগত মুসল্লিরা বয়ান, তসবি-তাহলিলে মশগুল থাকেন। এ পর্বেও অংশ নেওয়া দুজন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জের মুসল্লি মো. শহীদুল্লাহ (৬৫) গতকাল সকালে মারা যান। এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাতে মহর আলী (৬০) নামে আরও এক মুসল্লির মৃত্যু হয়। তার বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরে। এ নিয়ে বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে যোগ দেওয়া দুই বিদেশি নাগরিকসহ মোট ছয়জনের মৃত্যু হলো।

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে গতকাল দিনভর লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশে সকাল থেকে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে বাংলা ভাষায় বয়ান চলে। বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোহম্মদ হোসেন। এর মধ্যে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। মোনাজাতে শরিক হতে এখনো আসছেন মুসল্লিরা। মোনাজাতের আগ পর্যন্ত এ ঢল অব্যাহত থাকবে। দুই দিন ধরে সার্বক্ষণিক ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রয়েছেন মুসল্লিরা।

গত দুই দিন ফজর থেকে ইশা পর্যন্ত ইমান, আমল, আখলাক ও দীনের পথে মেহনতের ওপর বয়ান হয়েছে। তাবলিগের ছয় উসুলের (মৌলিক বিষয়ে) ওপর বাদ ফজর বাংলাদেশের মাওলানা মোহম্মদ যোবায়েরুল হাসানের বয়ানের মধ্য দিয়ে গতকাল দ্বিতীয় দিনের বয়ান শুরু হয়। বাদ জোহর সোমালিয়ার মাওলানা শেখ ইসমাইল, বাদ আসর বাংলাদেশের মাওলানা রবিউল হক ও বাদ মাগরিব বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ হোসেন বয়ান করেন।

তাবলিগের ছয় উসুল কলমা, নামাজ, ইলম-জিকির, একরামুন মুসলিমিন, সহি নিয়ত ও তাবলিগ নিয়ে বিশ্ব ইজতেমার দেশি-বিদেশি শীর্ষ মুরব্বিরা ময়দানে সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান করেন। এসব বয়ান সঙ্গে সঙ্গে বাংলা, মালয়, হিন্দি, আরবি, উর্দু, ফারসিসহ বিভিন্ন ভাষায় তরজমা করা হয়। আজ আখেরি মোনাজাতের শেষ দিনে ময়দানের মূল মঞ্চ থেকে হেদায়েতি বয়ান অনুষ্ঠিত হবে।

সকাল ১০টার পর একটানা হেদায়েতি বয়ান শুরু হবে এবং আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত বয়ান চলবে। মোনাজাতে মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৪টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

গতকাল ইজতেমা মাঠের ওপর দিয়ে একটি হেলিকপ্টার টহল দিতে দেখা গেছে। সমগ্র ইজতেমা ময়দানে র‌্যাব ও পুলিশের নজরবন্দি রয়েছে। গতকাল বিকাল থেকে বিজিবি, আর্মড পুলিশ ও এপিবিএনের সদস্যরা মাঠের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নেন। এ ছাড়া ৬০টি সিসিটিভি, ওয়াচ টাওয়ার, নদীতে স্পিডবোট, সাদা পোশাকে এবং ১টি হেলিকপ্টার দিয়ে র‌্যাব সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। র‌্যাব জানায়, তাদের ১২ শতাধিক সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। প্রয়োজনে আখেরি মোনাজাতের আগে আরও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হবে। ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের বাস-ট্রাকগুলো রাখার জন্য উত্তরা জোনে ৮টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব বাস-ট্রাকের নিরাপত্তায় শতাধিক ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্ট সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছেন।

তাশকিল : ইজতেমা প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিমে তাশকিলের কামরা স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি খিত্তায় তাশকিলের জন্য বিশেষ স্থান রাখা হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে আল্লাহর রাস্তায় বের হতে ইচ্ছুকরা নাম তালিকাভুক্ত করে সেখানে অবস্থান করছেন। কাকরাইলের মসজিদের মুরব্বিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইজতেমা শেষে তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় দীনের মেহনতে পাঠানো হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর