১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০৭:৫৮

স্পষ্ট নয় কারাবাসের সময়

এক সপ্তাহেও রায়ের কপি মেলেনি। আপিলে লড়তে প্রস্তুত দুদক। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে আপিল বিভাগেই

আরাফাত মুন্না

 স্পষ্ট নয় কারাবাসের সময়

বিদেশ থেকে এতিমদের জন্য আসা অর্থ আত্মসাতের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন এক সপ্তাহেরও বেশি সময়। চলতি সপ্তাহেও তার মুক্তির সম্ভাবনা দেখছেন না আইনজ্ঞরা। তারা বলেন, বৃহস্পতিবারও রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়া যায়নি। রবি বা সোমবার কপি পাওয়া গেলেও হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগে আবেদনগুলো নিষ্পত্তি হয়ে খালেদার মুক্তি পেতে বেশ সময় লাগতে পারে। তবে ঠিক কবে নাগাদ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী মুক্তি পেতে পারেন তা স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয় বলে তারা জানান। আইনজ্ঞরা আরও বলেন, বিচারিক আদালতের রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিল ও জামিনের আবেদন করবেন। তবে গতকাল পর্যন্ত রায়ের কপি না পাওয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে অস্পষ্টা থেকেই যায়। তারা বলেন, রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়া একটু সময় সাপেক্ষ বিষয়। চূড়ান্ত করণের আগে রায়ের কপি একাধিকবার সংশোধন হতে পারে। এ রায়টি যেহেতু একটু বড় (৬৩২ পৃষ্ঠা) সে ক্ষেত্রে অন্যান্য রায়ের তুলনায় সময় বেশি লাগতেই পারে। তারা আরও বলেন, এ মামলায় আসামি পক্ষ যেমন আপিল করবে, তেমনি দুদকের আইনজীবীও নিশ্চই কনটেস্ট করবেন। সে ক্ষেত্রে আপিল ও জামিন আবেদনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়াতে পারে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত। বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়ার পাশাপাশি তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানসহ মামলার অন্য পাঁচ আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। রায়ে খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য আসামিদের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। রায় ঘোষণার পর পরই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগার ভবনে। সেই দিন থেকে এখনো কারাগারেই রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এদিকে রায়ের দিনই সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তবে গতকালও রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাননি তারা। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, রবি অথবা সোমবার রায়ের কপি পেলে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিনের আবেদনও দাখিল করব।

এ বিষয়ে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রায় ঘোষণার পর দিন থেকেই আমরা প্রতিদিন সত্যায়িত অনুলিপির জন্য যোগাযোগ করছি। রায় ঘোষণার সাত দিন পার হলেও আমরা কপি পেলাম না।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারাগারে রাখতে ইচ্ছে করেই রায়ের কপি দিতে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। আর কপি না পাওয়ায় আপিল করা যাচ্ছে না। তাই ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) কবে মুক্তি পাবেন সে বিষয়টিও আমরা স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী রবি অথবা সোমবার রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি দেওয়া হবে বলে আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমাদের জানানো হয়েছে। তবে সেদিনও দিবে কি-না, সেটা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হলে প্রথমে রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পেতে হবে। অনুলিপি ছাড়া জামিন বা আপিল, কোনো আবেদনই করা যাবে না।’ রায়ের কপি দিতে ইচ্ছে করে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইচ্ছে করে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে এটা বলা যাবে না। বিচারিক আদালতের ছোটখাটো রায়ের কপি পেতেও এক সময় ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগত। সে হিসেবে এ রায়টি অনেক বড়, ৬৩২ পৃষ্ঠা। প্রতিটি লাইন বাই লাইন কমপেয়ার করতে একটু সময়তো লাগবেই। রায়ের কপি পাওয়ার পরই তারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) আপিল করতে পারবেন বলেও জানান সাবেক এই আইনমন্ত্রী।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রায়ের সার্টিফাইড কপি দেওয়ার জন্য কোনো নির্দৃষ্ট সময়সীমা নেই। এটা আদালতের ওপর নির্ভর করে। রায়ের অনুলিপি প্রস্তুত হওয়ার পর সবার স্বাক্ষর হলেই সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করা হয়।’ উচ্চ আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা রায়ের সত্যায়িত অনুলিপির জন্য আবেদন করেছি। তবে এখনো কপি হাতে পাইনি। তিনি বলেন, আসামিপক্ষ হাই কোর্টে আপিল করবে বলে শুনেছি। আমরাও সেইভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। তাদের আপিলে আমরাও কনটেস্ট করব। হাই কোর্ট খালেদা জিয়াকে জামিন দিলে আপিল বিভাগে যাবেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুদকের পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্যসচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী সরফুদ্দিন আহমেদ। এর মধ্যে তারেক রহমান বিদেশে অর্থ পাচারের এক মামলায় সাত বছরের সাজার রায় মাথায় নিয়ে ১০ বছর ধরে দেশের বাইরে পলাতক জীবন যাপন করছেন। একইভাবে কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানও পলাতক। রায়ের পর পলাতক এই তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

১০ বছর আগে সৌদি আরব থেকে এতিমদের জন্য আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আদালতে দাখিল করেন। এর প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার শুরু করেন। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর এ মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি শেষ হয়। এরপর ১৯ ডিসেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হয়। গত ২৫ জানুয়ারি উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন সমাপ্ত হলে ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন নির্ধারণ করেন বিচারক।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর