১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ১৭:৪৪

আমাদের চা সারাবিশ্বে স্থান করে নিক : প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

আমাদের চা সারাবিশ্বে স্থান করে নিক : প্রধানমন্ত্রী

চায়ের বহুমুখী ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমরা চাই- আমাদের চা সারাবিশ্বে নিজের স্থান করে নিক, আরো উন্নত হোক।'

রবিবার সকালে বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ চা প্রদর্শনী ২০১৮-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ চা বোর্ড (বিটিবি) যৌথভাবে বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে তিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। দেশ-বিদেশের চা প্রেমীদের কাছে চায়ের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে এই প্রদর্শনীতে। 

চা গবেষণা ইনস্টিটিউট চায়ের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্যও গবেষণা আরও জোরদার করবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন ফ্লেভারযুক্ত চা ছাড়াও চা থেকে বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী, যথা- টি সোপ, টি শ্যাম্পু, টি টুথপেস্ট প্রভৃতি এবং খাদ্য সামগ্রী, যেমন- টি কোলা, চা-এর আচার প্রভৃতি উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে।

তিনি বলেন, চা উৎপাদনের জন্য যে দু'টি পাতা একটি কুঁড়ি আমরা নিচ্ছি, তাছাড়াও যে চা গাছটা থেকে যাচ্ছে তা বহুমুখীকরণে আমাদের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড চা ও চা জাত পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে মূল্য সংযোজিত বিভিন্ন ধরনের চা উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। সাতকড়া চা, লেমন চা, মশলা চা, জিনজার চা, তুলসি চা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তিনি বলেন, কেমিক্যাল ফার্টিলাইজার ও পেস্টিসাইডস ব্যবহার না করে অর্গানিক পদ্ধতিতেও চা উৎপন্ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন বাগানে সিটিসি ব্ল্যাক টি এর পাশাপাশি গ্রিন টি ও অর্থোডক্স টি তৈরি করা হচ্ছে। চায়ের মোড়কজাত ও বাজারজাতকরণে এসেছে নতুনত্ব।

বিভিন্ন কোম্পানি আকর্ষণীয় মোড়ক, সিলিন্ডার ও টি ব্যাগে চা বাজারজাত করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এসব ভ্যালু অ্যাডেড চা উচ্চমূল্যে বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হচ্ছে। চা গাছের পোকা মাকড় দমনে নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবন করাসহ ফ্লেভার্ড চায়ের বিষয়েও গবেষণা চলছে। এতে করে চায়ের উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি এর গুণগত মান আরও উন্নত হবে, সেটাই আমাদের আশা।

চা উৎপাদনের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি সেই বৃষ্টির পানি যেন বাগানে জমতে না পারে তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হয় উল্লেখ করে ধানের বিভিন্ন প্রজাতির মত ক্ষরা সহিষ্ণু বা অল্পবৃষ্টি সহিষ্ণু চা উৎপাদনের দিকেও সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

এবার দেশে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়াকে চা বাগানের মালিকদের জন্য সুখবর উল্লেখ করে তিনি চা শ্রমিকদের কল্যাণে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার জন্যও বাগান মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনিই পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ অঞ্চলে চা চাষকে উৎসাহিত করেছিলেন এবং সে সরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়াতেই এই পঞ্চগড়ে চা চাষের শুরু। আজকে এই চা ইংল্যান্ডের হ্যারডসেও পাওয়া যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী মাটির রকম ভেদে চায়ের স্বাদ ভিন্ন হয় উল্লেখ করে বলেন, আবার এক জায়গার চায়ের সঙ্গে আরেক জায়গার চা ব্লেন্ড করেও খাওয়া হয়। খুব কড়া চায়ের জন্য আসাম টি এবং সুগন্ধি চা হচ্ছে দার্জিলিং টি। শ্রীলঙ্কায় হয় মসলা চা, সর্দি-কাশিতে এটি খুবই ভালো শরীরের জন্য। আসামের সঙ্গে দার্জিলিং চা মিক্স করে খেতে ব্যক্তিগতভাবে তিনি পছন্দ করেন বলেও উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বোস এবং চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান আর্দাশিল কবির, বিটিবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। 

শেখ হাসিনা অনুষ্ঠান স্থল থেকে মতিঝিলে ৩০তলা বিশিষ্ট 'বঙ্গবন্ধু চা ভবন'-এর নির্মাণ কাজের ফলক উন্মোচন করেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে চায়ের নতুন জাত 'বিডি ক্লোন-২১' অবমুক্ত করেন এবং সাতটি ক্যাটাগরিতে চা উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেন। 

বিডি প্রতিদিন/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর