২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ২২:৩৮

প্রতারণার অভিযোগে গুজরাটে ৪ বাংলাদেশি গ্রেফতার

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

প্রতারণার অভিযোগে গুজরাটে ৪ বাংলাদেশি গ্রেফতার

ভারতের গুজরাট রাজ্যের এক অটোরিকশা (সিএনজি) চালকের সাথে প্রতারণার অভিযোগে ৪ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে গুজরাট পুলিশ, যদিও ওই চক্রের মূল হোতা পলাতক। গতকাল শনিবার ভদোদরা শহরের ভাসনা রোডের পঞ্চমুখি হনুমান মন্দিরের সামনে থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। আটক চার বাংলাদেশিই ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে ভারতের বিভিন্ন শহরে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি একাধিক ব্যক্তির সাথেও প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ। 

 

আটক ব্যক্তিরা হলেন মোহম্মদ মাতবর, আসলাম আকাউন, রনি মুন্সি এবং নুরজমাল মোল্লা। সিকান্দর নামে অন্য বাংলাদেশি নাগরিক পলাতক বলে জানা গেছে। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে সৌদি রিয়াল, মোবাইল ফোন ও সিমসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করা হয়েছে। 

পুলিশ সূত্রে খবর, আব্বাস আলি সৈয়দ নামে এক সিএনজি চালক গত বৃহস্পতিবার এই বাংলাদেশিদের শহর ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলে। যদিও তারা কেউই সেই সিএনজিতে চড়েননি, পরিবর্তে তাকে অর্থের লোভ দেখানো হয়। বাংলাদেশিরা ওই সিএনজি চালককে একটি কাপড়ের মধ্যে লুকোনো নোটের বান্ডিল দেখিয়ে বলে তাদের কাছে সৌদি রিয়াল আছে এবং তারা সেটাকে কম হারেই রূপান্তরিত করতে চায়। তার উত্তরে আব্বাস আলি ওই বাংলাদেশিদের জানায় তিনিই ওই সৌদি রিয়ালের বিনিময় করে দেবেন।
 
সেই মতো পরদিন শুক্রবার সকালে ওই সিএনজি চালক বাংলাদেশি নাগরিক সিকান্দারকে ফোন করেন এবং আব্বাসকে বলা হয় ১৫ হাজার রুপি নিয়ে তান্ডালজা এলাকায় বাসিল স্কুলের সামনে চলে আসতে। সেখানে পৌঁছনোর পর আব্বাস আলিকে আগের মতো কাপড়ে মোড়ানো নোটের বান্ডিল দেখায় এবং আব্বাস আলির কাছ থেকে ১৫ হাজার রুপি নিয়ে তাকে ওই কাপড়ের পুঁটলি দিয়ে দেওয়া হয়। তাকে বলা হয় বাংলাদেশিরা ওই জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত যেন সেটি খোলা না হয়। 

অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই জায়গা ত্যাগ করার পরই আব্বাস আলি যখন সেটি খোলেন, তিনি দেখতে পান যে সেখানে কেবলমাত্র তিনটি ভারতীয় নোট ও ১০০ সৌদি রিয়াল রয়েছে এবং বাকী সবটাই একই মাপের সাদা কাগজ। এরপরই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে স্থানীয় জে.পি.রোড পুলিশ থানায় একটি ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট (এফআইআর) দায়ের করেন। 

এরপর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে ভদোদরা পুলিশের প্রিভেনশন অব ক্রাইম ব্রাঞ্চ (পিসিবি)-এর সদস্যরা। তদন্তে নেমে ভাসনা রোড থেকে ৪ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করা হয়। 

পিসিবি’এর পুলিশ ইন্সপেক্টর এইচ এম ব্যাস জানান, ‘আমরা চারজনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের চারজনেরই পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পাঁচটি মোবাইল, ৩৬টি মোবাইল সিম কার্ড, ৩৬ হাজার ৭০০ রুপি ও ১০০ সৌদি রিয়াল(১০টি), ২০ মার্কিন ডলার(২৬টি) এবং ১০০ টাকার বাংলাদেশি নোট(৩টি), ২০ ও ৫ টাকার বাংলাদেশি নোট (১টি করে) এবং কাগজের বান্ডিল উদ্ধার করা হয়েছে’। 

তিনি আরও জানান, ‘এরা খুব নিপূণভাবে ওপরে ও নিচে আসল সৌদি রিয়াল কারেন্সি রেখে তার মাঝে সাদা কাগজ ভরে বান্ডিল তৈরি করতো, যাতে বাইরে থেকে কিছুই বোঝা না যায়। এভাবে আসল নোটের পরিবর্তে কাগজ দিয়ে তারা মানুষকে ঠকাতো। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সিকান্দার নামে এক ব্যক্তি পলাতক। আমরা তাঁর খোঁজে অভিযান চালাচ্ছি। অভিযুক্ত সিকান্দারের নামে ভারতীয় আধার কার্ড এবং প্যান কার্ডও উদ্ধার করা হয়েছে।  বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও তিনি কিভাবে আধার কার্ড, প্যান কার্ড তৈরি করে ফেললেন সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, আধারের ঠিকানা হিসাবে দেওয়া রয়েছে মুম্বাইয়ের থানে জেলার একটি জায়গার নাম। এই ঘটনায় বাংলাদেশি গ্যাংটির সঙ্গে ভারতীয় নাগরিকের যোগাযোগও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে ওই চার বাংলাদেশি স্বীকার করেছে যে কলকাতা, দিল্লি, বেঙ্গালুরু এবং সুরাটে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে এই ধরনের প্রতারণা করেছে।  


বিডি-প্রতিদিন/২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর