১৯ এপ্রিল, ২০১৮ ১১:১০

কমনওয়েলথভুক্ত দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

অনলাইন ডেস্ক

কমনওয়েলথভুক্ত দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সংগৃহীত ছবি

কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে লন্ডনে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সরকারপ্রধানদের গোলটেবিল বৈঠকে বক্তৃতাকালে এ আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের বিশেষ করে এখানে উপস্থিত বিশ্বের ব্যবসা খাতের নেতৃবৃন্দকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। নিশ্চিত থাকুন, আপনারা এশিয়ার সবচেয়ে গতিশীল এফডিআই-বান্ধব সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা পাবেন।’ 

শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সরকার প্রধানদের এ গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। খবর-বাসস'র। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, কমনওয়েলথ দেশসমূহের ১৩ জন সরকার প্রধান গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথভুক্ত সকল দেশে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি খাতে একযোগে কাজ করার লক্ষ্যে কমনওয়েলথের বাস্তব সহযোগিতা কামনা করেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে, কমনওয়েলথভুক্ত সকল দেশে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি খাত একযোগে কাজ করার ক্ষেত্রে কমনওয়েলথ বাস্তব সহযোগিতা দিতে পারে।’ 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ কমনওয়েলথ ক্ষুদ্র ও দ্বীপ রাষ্ট্র (এসআইডিএস), এলএলডিসি, আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারে বিপুল সম্ভাবনা দেখতে পায়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৯ কোটি মধ্যবিত্ত ভোক্তা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ইইউ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপানের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার। যে কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে এশিয়ার পরবর্তী শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ কেন্দ্র হিসেবে রিব্র্যান্ডিং করছে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, টেকসই শিল্প বিনিয়োগের লক্ষ্যে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন তার সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার হয়ে আছে। 

অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটি হচ্ছে সার্বিক অর্থে স্বাধীনতা, মর্যাদা ও সুযোগের বিষয়। আমাদের সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আমরা আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান এবং প্রযুক্তির ব্যবহার জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’

তিনি জানান, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০১৫ সালে ২২ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে।চলতি অর্থবছরে দেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ৩শ’ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য আমার সরকারের গৃহীত নীতি-কৌশলসমূহ বাস্তব ফল দিচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বালাদেশ চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কমনওয়েলথ সদস্য দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে বেসরকারি অংশীদারিত্ব আশা করে। সরকার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় একশত অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে নারীসহ আমাদের দক্ষ জনবলের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। 

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দেশের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে। এ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান স্বল্প পুঁিজ নিয়ে শুরু করে পণ্য উৎপাদন করে দেশের অভ্যন্তরীন চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মূদ্রা আয় করছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নমীল দেশের জন্য এসএমই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং রফতানি বহুমুখীকরনে ক্ষেত্রে একটি চালিকা শক্তি।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার রফতানি বহুমুখিকরণের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এ সকল সেক্টরে ব্যাপক সহায়তা দিচ্ছে। সম্ভাবনাময় কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আমরা অর্থ, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তি, কাঁচামাল এবং বাজার ভিত্তিক তথ্য প্রদান করছি। সরকার এসএমই বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সিঙ্গেল ডিজিটে জামানতবিহীন ব্যাংক লোন দিচ্ছে এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য চাহিদা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিরও আয়োজন করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য নিয়ে এসএমই শিল্পের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ইলেক্ট্রোনিক কমার্সের উন্নয়নে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং মানব সম্পদ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির একটি মডেল হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। আমাদের সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে এসএমই একটি গুরুত্ব সেক্টর। এ কারণেই আমাদের সরকার এই সেক্টরের উন্নয়নে সহযোগিতা ও উৎসাহ যুগিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। 

শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বের জন্য বাংলাদেশ সবসময় আইন ও স্বচ্ছতা ভিত্তিক ইনক্লুসিভ এবং অবাধ বহুমুখী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে সহায়তা দিচ্ছে। আমরা দোহা উন্নয়ন রাউন্ড সংলাপের অগ্রগতি থমকে যাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে উন্নয়নশীল দেশের গ্রুপে যোগ দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তদুপরি ডব্লিউটিও-এর ১১তম মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় আমরা লক্ষ্য করেছি যে, বহুমুখী বাণিজ্য প্রসারের ক্ষেত্রে আশু কোনো অচলাবস্থা কেটে যাওয়ার আশাও ম্লান হয়ে যাচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/১৯ এপ্রিল ২০১৮/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর