২২ এপ্রিল, ২০১৮ ১৩:১৬
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চিত্র

প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন বিমানের নারী কেবিন ক্রুরা

অনলাইন ডেস্ক

প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন বিমানের নারী কেবিন ক্রুরা

বিমানকে লাভজনক করতে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও তা সফল হচ্ছেনা। একাধিক সিন্ডিকেট নিজেদের স্বার্থে বিমানকে লোকসানের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে ধরা পড়লেও কর্তৃপক্ষ কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পাচ্ছে না। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে পুরুষ সহকর্মীদের হাতে বিমানের নারী ক্রুদের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলেও অভিযুক্তকে শাস্তির বদলে দেয়া হচ্ছে পদোন্নতি। ফলে প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে। 

ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছে না। উল্টো ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নারী বিমান ক্রুদের অভিযোগ, বিভিন্ন দেশে ফ্লাইটে যাওয়ার পর পুরুষ সহকর্মীরা তাদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে নির্যাতন করেন। এমনকি তাদের ধর্ষণের চেষ্টা পর্যন্ত করা হয়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, এক নারী ক্রু অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি এক নারী কেবিন ক্রু চাকরি ফেরত চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে আবেদন করার পাশাপাশি এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেন। ওই নারী বিমান ক্রু লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমি এফ/এসএস... আট মাস ধরে বিমান এয়ারলাইনসে কর্মরত আছি।  ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট বিজি-০১৫ ফ্লাইটে ঢাকা থেকে লন্ডনে যাওয়ার পর সহকর্মী চিফ পার্সার নুরুজ্জামান রনজু এবং এফ/এস সিনহা কর্তৃক অপ্রীতিকর অশালীন মর্মান্তিক আচরণের শিকার হয়েছি- যা কোনো নারী সহকর্মী হিসেবে কাম্য নয়। আমি চাইনি এ ঘটনা জানাজানি হোক। আমার পদমর্যাদা বা সম্মান নিয়ে কোনো কথা হোক। কিন্তু ঘটনাটি প্রকাশ হয়ে যায়। আমার সিনিয়র সহকর্মীরা আমাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে বেড়াচ্ছে। এবং বিভিন্ন অশ্লীল কথাবার্তা বলে যা আমার খারাপ লাগে। পরে বাধ্য হয়ে আমি লিখিতভাবে বিষয়টি জানাচ্ছি। তা ছাড়া লন্ডন থেকেই পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন মো. তোফায়েল আহম্মদকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

দীর্ঘ সাত মাস তদন্তের পর রনজুকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিমানের তদন্ত কর্মকর্তা। রনজুর বিরুদ্ধে দেওয়া প্রতিবেদনে তার ‘অশোভন, অনৈতিক আচরণ এবং আপত্তি করা সত্ত্বেও জোর করার’ বিষয়টি প্রমাণিত হয়। সাজায় স্পষ্টভাবে তাকে ‘পদাবনতি’ দেওয়ার কথা উল্লেখ ছিল। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বর্তমান উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. নুরুজ্জামান (রনজুু)।

২০১৫ সালের ২ জুন শাস্তিস্বরূপ তাকে ‘চিফ পার্সার’ থেকে ‘ফ্লাইট পার্সার’ পদে পদাবনতির (ডিমোশন) নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রশাসন পরিদপ্তর ও তদন্ত শাখার ওই প্রতিবেদন উপেক্ষা করে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে রনজুকে বিমানের ম্যানেজার পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। বিমানের এইচআর পলিসি অনুযায়ী একই পদে তিন বছর থাকার পর কোনো ব্যক্তিকে ঊর্ধ্বতন পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। রনজুকে মাত্র ৯ মাসের মাথায়  ২০১৭ সালের মার্চে ম্যানেজার ডিজিএম পদে পদোন্নতি দেয় বিমান কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ সম্পর্কে গত মঙ্গলবার রাতে রনজুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফোন না ধরলে পরে এসএমএস দিয়ে ফোন রিসিভ করার অনুরোধ জানানো হয়। রনজু ফিরতি মেসেজ দিয়ে প্রতিবেদককে জানান, তিনি মিটিংয়ে আছেন। পরে ফোন ব্যাক করবেন। কিন্তু তিনি ফোন ব্যাক করেননি। গত বুধবার পুনরায় তাকে ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু এবারও তিনি ফোন ধরেননি।

বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, কেবিন ক্রু ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এখন চাকরি ফিরে পেতে বিমান কর্মকর্তাদের দুয়ারে দুয়ারে বেড়াচ্ছেন তিনি। এ ঘটনায় রনজুকে শাস্তি দেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, বছরখানেক আগে আরেক কেবিন ক্রু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা সত্য। তবে অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। সূত্র: কালের কণ্ঠ

বিডি প্রতিদিন/২২ এপ্রিল, ২০১৮/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর