২৪ এপ্রিল, ২০১৮ ১১:৫৫

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অর্থমন্ত্রীর আহ্বান

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে:

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অর্থমন্ত্রীর আহ্বান

'স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তথাপি, আমাদের প্রত্যাশা, সাবলীল উত্তরণ নিশ্চিত করতে এবং উন্নয়ন ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উত্তরিত দেশগুলোর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াবে”।  জাতিসংঘে এ আশা পোষণ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সোমবার জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (ইকোসক) আয়োজিত ‘উন্নয়নে অর্থায়ন (এফএফডি) বিষয়ক ৩য় ফোরামে কান্ট্রি স্টেটেমেন্ট প্রদানকালে একথা বলেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।
 
বক্তব্যের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার যে অগ্রগতি সাধন করেছে এবং যে সকল নীতিমালা গ্রহণ করেছে তা তুলে ধরেন। 

মুহিত বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন সুবিধা এবং জনগণের জীবনের অন্যান্য মৌলিক অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতি সাধন করেছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে মর্মে তিনি উল্লেখ করেন। 

বিগত বছরগুলোতে জিডিপি ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের উপরে রয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “এখন আমাদের জিডিপির গড় ৭ শতাংশেরও বেশি। এর ফলে ২০০৫ সালের দারিদ্র্যসীমা ৪০ শতাংশ থেকে ২০১৬ সালে ২৩ শতাংশে এবং অতি দারিদ্র্যের হার ২৪.২ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে”।
বাংলাদেশ এবছর প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে এবং এক্ষেত্রে তিনটি নির্দিষ্ট ধাপে কাঙ্খিত মানদন্ডের চেয়ে অনেক বেশী ব্যবধান নিয়ে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী জানান, রাজস্ব প্রশাসনে কাঠামোগত সংস্কার শুরু করা হয়েছে। নতুন সরাসরি ট্যাক্স কোড ও নতুন কাস্টম আইন প্রণয়নেরও কাজ চলছে। সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে এতে স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতা আনা হয়েছে। ইলেক্ট্রনিকভাবে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা ও ই-জিপি’র সফল বাস্তবায়নের ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ‘সরকারি দপ্তরসমূহে ফলাফল-ভিত্তিক কর্মসম্পাদন ব্যবস্থা প্রবর্তন’, ‘ভূমি-ব্যবস্থাপনা জরিপ ও রেকর্ড সংরক্ষণের আধুনিকীকরণ’, প্রকল্প প্রণয়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং আর্থিক খাত স্থিতিশীল রাখার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।’

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে যেখানে নারী, বয়স্ক ও শারিরীকভাবে অক্ষমদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে আর যার থেকে বাদ পড়ছে না দেশের শেষ প্রান্তে থাকা মানুষটিও”। সরকার নারী ও শিশু সংবেদনশীল বাজেটও প্রণয়ন করে যাচ্ছে।

দেশের বেসরকারি খাতের সামর্থ্য বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে মুহিত বলেন, “বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ১২ টি হাই-টেক পার্ক স্থাপনসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে”।

অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি করেছে। বাজেটে জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দিতে ২০১৪ সালে প্রণয়ন করা হয়েছে জলবায়ু সংক্রান্ত আর্থিক কাঠামো।

রোহিঙ্গা সমস্যার কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে আশ্রিত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এই মিয়ানমারের নাগরিকেরা আমাদের উন্নয়নের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নিজভূমিতে তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় সমর্থন প্রত্যাশা করছি”।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে তিনি ‘আদ্দিস আবাবা অ্যাকশান এজেন্ডা’র পূর্ণ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। তাছাড়া এসডিজি’র সফল বাস্তবায়নে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে উত্তম সহায়তা দানের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও অর্থায়ন ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে হবে যার জন্য অবশ্যই রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন বলে দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী।

এছাড়া অর্থমন্ত্রী ‘এসডিজি’র জন্য উদ্ভাবনীমূলক অর্থায়ন: ইসলামিক অর্থব্যবস্থার ভূমিকা এবং ‘এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আর্থিক রূপান্তর: অর্থ-প্রযুক্তির বিপ্লব শীর্ষক দু’টি সাইড ইভেন্টে বক্তব্য রাখেন। উভয় ইভেন্টেই বাংলাদেশ ছিল সহ-আয়োজক।

‘এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আর্থিক রূপান্তর: অর্থ-প্রযুক্তির বিপ্লব’ শীর্ষক সাইড ইভেন্টে অর্থমন্ত্রী ছিলেন কী-নোট স্পীকার। অর্থ-প্রযুক্তির বিপ্লব বাংলাদেশে দরিদ্র্য ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের মূল ধারায় নিয়ে এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া তিনি মোবাইল ব্যাংকিং, ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলা, ডিজিটাল এজেন্ট ব্যাংকিং, ডিজিটাইজড্ পেমেন্ট, ক্ষুদ্রঋণ ও মাইক্রো ফাইনান্সসহ বাংলাদেশের  বিভিন্ন প্রযুক্তি নির্ভর অর্থ-ব্যবস্থার কথা তুলে ধরেন। ইভেন্টটিতে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা বিষয়ক মন্ত্রী বামব্যাং পি.এস. ব্রোডজোনেগোরো, আফগানিস্তানের অর্থ মন্ত্রী মুস্তফা মাসতুর এবং জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও ইউএনএসক্যাপের নির্বাহী সচিব সামসাদ আক্তার বক্তব্য প্রদান করেন।

এর আগে ইকোসকের উন্নয়নে অর্থায়ন বিষয়ক ৩য় ফোরামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের শুরুতে এসডিজি অর্থায়নে উন্নয়নশীল দেশসমূহকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোকে আরও সক্রিয় হবার আহ্বান সম্বলিত জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজের একটি ভিডিও বার্তা পরিবেশন করা হয়। উচ্চ পর্যায়ের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মিরোস্লাভ লাইচ্যাক, ইকোসকের সভাপতি ম্যারি চ্যাটারডোভা এবং ডেপুটি মহাসচিব আমিনা মোহাম্মদ বক্তব্য রাখেন।

এফএফডি’র চলতি কর্মসূচি আগামী ২৬ এপ্রিল শেষ হবে। এফএফডি’র এই ৩য় ফোরামে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বাংলাদেশ ডেলিগেশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বিডিপ্রতিদিন/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর