সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযানে ৯ জেলায় র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে পৃথক পৃথক 'বন্দুকযুদ্ধে' ১১ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। সোমবার দিবাগত রাত ও মঙ্গলবার ভোরে এসব বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ-
নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বাচ্চু খান নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এসময় উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও বিদেশি অস্ত্র।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক উদ্ধারের জন্য অভিযান পরিচালনা করার সময় বাচ্চুসহ তিন মাদক ব্যবসায়ী দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে ও র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এসময় র্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই বাচ্চু নিহত হয় এবং বাকি দু’জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। র্যাব-১ এর কোম্পানি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন ও আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
দিনাজপুর:
দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার ভবানিপুর সীমান্ত এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রবাল হোসেন (৪০) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এসময় খুরশিদ আলম নামের পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও রামচন্দ্র নামের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। নিহত প্রবাল উপজেলার বাসুপাড়া গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে।
বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকলেছুর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক ব্যবসায়ী প্রবালকে আটক করতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এসময় পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে প্রবাল গুলিবিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, ৫টি হাত বোমা ও দু’টি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত প্রবাল পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক সম্রাট। তার বিরুদ্ধে মাদকের ৮টি মামলা রয়েছে বলেও জানান ওসি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ধন মিয়া (৩৫) নামে এক শীর্ষ মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোরে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে। ধন মিয়া উপজেলার মরিচাকান্দি গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে বাঞ্ছারামপুর থানায় চারটি মাদক মামলা রয়েছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১০ এর এডিশনাল এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, ভোরের দিকে ধন মিয়া ও তার স্ত্রী মাদকের চালান নিয়ে সোনারামপুর এলাকা হয়ে কোথাও যাবেন-এমন খবর পেয়ে র্যাবের একটি আভিযানিক দল ভোরে সোনারামপুর এলাকায় অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে মাদকের চালানসহ স্ত্রীকে নিয়ে প্রাইভেটকারে করে ধন মিয়া সেখানে পৌঁছে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে যান। এ সময় ধন মিয়া র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি করলে র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ধন মিয়া। এ সময় ওই প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়ে ১১ হাজার ৭শ’ পিস ইয়াবা, নগদ ৪৮ হাজার ৭শ’ টাকা ও একটি পিস্তল জব্দ করা হয়। এ সময় তার স্ত্রী আরজিনা বেগমকে আটক করা হয়েছে।
ফেনী:
ফেনীতে র্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সোমবার রাতে মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু (৪৯) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লেমুয়া নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার রুপকানিয়া গ্রামের হাজী আবদুল করিমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলায় ডাকাতি ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।
ফেনীস্থ র্যাব ক্যাম্পের অধিনায়ক সাফায়াত জামিল ফাহিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সোমবার দিবাগত রাতে র্যাব ফেনী ক্যাম্পের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফেনীর লেমুয়ায় অভিযান চালায়। এসময় শীর্ষ মাদক গডফাদার মঞ্জুরুল আলম মঞ্জুর নেতৃত্বে একদল মাদক ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে লেমুয়া এলাকায় পোঁছে। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা র্যাবকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ে। র্যাব অাত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুড়লে মঞ্জু গুলিবিদ্ধ হয়। বাকীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে র্যাব একটি বিদেশী পিস্তল, ৭ রাউন্ড গুলি, ৫টি খালি খোসা উদ্ধার করা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৫ লাখ পিস ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে আটক হয় মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু।
নেত্রকোনা:
নেত্রকোনায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম-আমজাদ হোসেন। সোমবার দিবাগত রাতে সদর উপজেলার মেদনী ইউনিয়নের বড়য়ারী এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বোরহান উদ্দিন জানান, সোমবার রাতে আমজাদকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে বড়য়ারী এলাকায় অভিযান চালানোর সময় তার সহযোগীরা পুলিশের ওপর গুলি চালায়। এসময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। এতে আমজাদ হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
নীলফামারী:
নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- শহরের নিচু কলোনী এলাকার জনি (৩৪) ও ইসলামবাগ এলাকার শাহিন (৩২)।
সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল জানান, আটক জনি ও শাহিনকে জিজ্ঞাসাবাদে করা হলে তারা জানায়, রাতে গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় জসিয়ার রহমান জসি ও নূর বাবু নামে দুইজন মাদকের বড় চালান নিয়ে আসবে। এরপর তাদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে জনি ও শাহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় সৈয়দপুর থানার ওয়াদুদ হোসেন ও মোকারম হোসেন নামে দুই পুলিশ আহত হয়েছেন।
কুমিল্লা:
কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও থানা পুলিশের সাথে 'বন্দুকযুদ্ধে' শরীফ ও পিয়ার নামে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। সোমবার রাত পৌনে ১টার দিকে জেলা সদরের বিবির বাজার অরণ্যপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযানকালে কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রুপ কুমারসহ অন্তত ৫ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ২ রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার, একটি পাজারো জিপ, ৫০ কেজি গাঁজা এবং ৫০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন ডেবারপাড় এলাকায় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শুক্কুর আলী (৪৫) নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মিমতানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় রেল স্টেশনের অদূরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ মাদক বিক্রেতা কামরুজ্জামান সাদু (৩৮) নিহত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানায় মাদক পাচারসহ ১২টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ই-জাহান