শিরোনাম
২২ মে, ২০১৮ ০৯:৫২
অপেক্ষার রাজনীতি ছাত্রলীগ-ছাত্রদলে

ছাত্রদলের অর্জন শুধু খালেদার হাজিরার দিনে শোডাউন

মাহমুদ আজহার

ছাত্রদলের অর্জন শুধু খালেদার হাজিরার দিনে শোডাউন

প্রায় চার বছর আগে যখন ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা নিয়মিত শিক্ষাঙ্গনে যাবেন। তারা ছাত্রদের মৌলিক অধিকারসহ তাদের সব দাবির পাশে থাকবেন। একই সঙ্গে সাংগঠনিক সব জেলা, মহানগর, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেবেন। কিন্তু গত চার বছরে ১১৪টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মাত্র ১৭টি জেলাসহ ৪৩টি শাখার কমিটি হয়েছে। ওই কমিটিগুলোও মেয়াদোত্তীর্ণ। অধিকাংশ আংশিক কমিটিই মেয়াদ শেষ করেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিভিন্ন মামলায় আদালতে হাজিরার সময় তারা শোডাউন দিয়েছে। তাদের অর্জন বলতে এটুকুই। অবশ্য জেলা-মহানগর, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রায় সবগুলোই গড়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ১০ বছর। কোনো কোনো সাংগঠনিক জেলা এক যুগও ছাড়িয়েছে। সেখানকার ছাত্রদল সভাপতি ৪০-৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে। ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাজিব আহসান জেলে রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান সদ্য কারামুক্ত। তারা অবশ্য বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যও। শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অর্ধশত মামলা ঝুলছে। তবে বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে যখন তাদের জায়গা করে দেওয়া হয়, তখনই দলের হাইকমান্ড থেকে বলা হয়েছিল, নতুন নেতৃত্ব আসছে ছাত্রদলে। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও চেয়েছিলেন ছাত্রদলের নতুন কমিটি। সেই অনুযায়ী কাজও চলছিল। কিন্তু বিএনপির ক্ষুদ্র একটি অংশ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বুঝিয়ে কমিটি দেওয়া থেকে বিরত রাখে। এখন দুই বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে ছাত্রদল।  রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর ছাত্রদলের ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ৭৪৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ ‘ঢাউস’ কমিটি গঠন করা হয়। ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, ৩৩৩টি সরকারি কলেজে এক যুগ আগে কমিটি হয়েছিল। এরপর আর কেউই কমিটিতে হাত দেননি। গাজীপুর, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, মেহেরপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায়ও একই অবস্থা। এখানকার ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা ৪০ ঊর্ধ্বে। গড়ে সব সাংগঠনিক জেলায় ৮-১০ বছর ধরে কমিটিবিহীন। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা ও পৌরসভা পর্যায়ে ছাত্রদলের কমিটি বলতে কিছু নেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রী নির্যাতন, টিউশন ফি বৃদ্ধিসহ কোটাবিরোধী আন্দোলনেও ছাত্রদলের কার্যকর কোনো ভূমিকা ছিল না। মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েই জানান দেয় ছাত্রদল। এ ছাড়া রাজপথের চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারণায় বেশি পছন্দ ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের। কোনো বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচি দুই চার মিনিট স্থায়ী না হলেও ফেসবুকে ছবিসহ কর্মসূচি জানান দেন ছাত্রনেতারা। ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারে রাজনীতিকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। ফেসবুকনির্ভর প্রচারণা থেকে ছাত্রদলসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোকে বেরিয়ে আসা উচিত। মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে নতুন করে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন বর্তমান কমিটির বড় অংশই। লন্ডনেও বিষয়টি জানানো হয়েছিল। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় বিষয়টি ঝুলে আছে। আগের কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানও সভাপতি হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও তারা দুজনই নির্বাহী কমিটির সদস্য। এ ছাড়াও ছাত্রনেতা এজমল হোসেন পাইলট, আলমগীর হোসেন সোহান, নাজমুল হাসান, আসাদুজ্জামান আসাদ, আবু আল আতিক হাসান মিন্টু, বায়েজীদ আরেফিন, মফিজুর রহমান আশিক, মামুন বিল্লাহ, ইসহাক সরকারও শীর্ষ নেতৃত্ব পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। একইভাবে মেহবুব মাসুম শান্ত, সৈয়দ মোহাম্মদ, আল মেহেদী তালুকদার, বাশার সিদ্দিকী, কাজী মোকতার, মিয়া মোহাম্মদ রাসেল, মিজানুর রহমান সোহাগ, নূরুল হুদা বাবু, করিম সরকার, গোলাম মোস্তফা, নাজিম মাহমুদ, এস এম কবির, মির্জা ইয়াসিন, মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়া, সৈয়দ মাহমুদ, আবদুর রহিম সেতু, আসাদুজ্জামান মিয়া, নাহিদুল ইসলাম সুহাদ, ওমর ফারুক মুন্নাও রয়েছেন শীর্ষ পদপ্রত্যাশী তালিকায়। যোগাযোগ করা হলে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের এই দুঃশাসনে ছাত্রদল যে টিকে আছে এটাই তো বেশি। সভাপতি জেলে। আমিও কিছুদিন হলো কারামুক্ত হলাম। তারপরও আমরা ৪৩টি ইউনিটের কমিটি দিতে পেরেছি। এটাও তো কম অর্জন নয়। এখন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব চাইলে আমরা থাকব না। দলের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর