২৪ মে, ২০১৮ ১৫:৫০
'ট্রল' হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে

কিঞ্চিত প্রমাণ করতে পারলে সংসদ থেকে পদত্যাগ করব: বদি (ভিডিও)

অনলাইন ডেস্ক

কিঞ্চিত প্রমাণ করতে পারলে সংসদ থেকে পদত্যাগ করব: বদি (ভিডিও)

আবদুর রহমান বদি(ফাইল ছবি)

বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল 'একাত্তর'-এ মিথিলা ফারজানার উপস্থাপনায় একাত্তর জার্নালে গতকাল টেলিফোনে যোগ দেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। এ সময় তিনি মাদকবিরোধী অভিযান এবং মাদক নিয়ে তার অবস্থান সম্পর্কে কিছু বক্তব্য রাখেন। যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল হতে শুরু করেছে। একাত্তর জার্নালের সেই কথোপকথন নিচে তুলে ধরা হলো।

উপস্থাপক: একাত্তর জার্নালের পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

আবদুর রহমান বদি: জি, বলেন।

উপস্থাপক: মাদকবিরোধী যে অভিযান চলছে সেই ব্যাপারে আপনার অবস্থান কী? 

আবদুর রহমান বদি: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা মাদকবিরোধী যে নির্দেশনা দিয়েছেন তাতে আমি খুশি।

উপস্থাপক: এবং যেভাবে অভিযান চলছে সে বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

আবদুর রহমান বদি: যেভাবে অভিযান চলছে সেটা ভালোই চলছে।

সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা: দেশে যেকোনো সময় মাদক কিংবা ইয়াবার নাম উঠলেই আপনার নাম উচ্চারণ হয় কেন? 

আবদুর রহমান বদি: কক্সবাজারে চারটি নির্বাচিত আসন আছে। এর মধ্যে আমারই একমাত্র আসন, যেখানে আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। বিএনপি-জামায়াত ১৫ বছর আগ থেকে তারা আমার জনপ্রিয়তা নষ্টের জন্য ষড়যন্ত্র করে আসছে।

সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা: আপনার স্ত্রী একবার ইয়াবার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক হয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে-এটা কি সত্য? 

আবদুর রহমান বদি: সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা: আপনার চার ভাই সম্পর্কেও অভিযোগ আছে যে তারা সবাই মাদক ও ইয়াবার সঙ্গে জড়িত?

আবদুর রহমান বদি: আমার কোনো ভাই মাদক বা ইয়াবার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। আমার একটা ছোট বোন আছে শামসুরনাহার। এলাকার মাদক ব্যবসায় ধরা পড়েছে শামসুরনাহার জ্যোতি। সেই শামসুরনাহার জ্যোতির জায়গায় আমার বোনোর নাম প্রচার করেছে মিডিয়া।

উপস্থাপক: অনেকেই বলেন, আপনার এলাকায় দিয়ে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের চোরাচালান হয়। আপনি তো সেখানকার সদস্য সদস্য এ বিষয়ে আপনার কাছে কোনো তথ্য আছে কিনা?

আবদুর রহমান বদি: আমার এলাকা অরক্ষিত। শুধু আমার এলাকা নয়, ঘুমঘুম থেকে শুরু করে সব জায়গা অরক্ষিত আছে। সেটা নিয়ে নবম সংসদে রাষ্ট্রপতি ভাষণের ওপর আমি বক্তব্য দিয়েছি। অরক্ষিত এলাকাতে কাঁটাতারের বেঁড়া দিয়ে যাতে সংরক্ষিত করা হয়। এখন সেটা পাস হয়েছে।

উপস্থাপক: এই এলাকায় যে ধরনের মাদকের চোরাচালন হচ্ছে তাদের সঙ্গে কারা জড়িত? 

আবদুর রহমান বদি: যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সরকার তাদের তালিকা তৈরি করেছেন। বিভিন্ন সংস্থা তাদের তালিকা দিয়েছেন। সেই তালিকায় যাচাই করে, জরিপ করে যেটা হচ্ছে...।

উপস্থাপক: যেহেতু আপনার এলাকা, আপনি কি তালিকা তৈরি করতে সরকারকে সহায়তা করেছেন? 

আবদুর রহমান বদি: অবশ্যই, আমি তো সরকারকে সব সময় সাহায্য করি, যে কোনো সময় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা পর্যায়ে।

শওকত মাহমুদ: মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ২০১৫ সালে মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা দিয়েছিল তাতে আপনার নাম ছিল-বলা হয়েছিল আপনি মাদক ব্যবসায় জড়িত। আজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আপনার মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার বিষয়ে তার কাছে তথ্য রয়েছে। কিন্তু প্রমাণ নেই। এইসব বিষয়ে আপনার কি বক্তব্য?

আবদুর রহমান বদি: আমি কিছুদিন আগে রাষ্ট্রপতি ভাষণের ওপর একটি বক্তব্য দিয়েছি, বাংলাদেশের কোনো মিডিয়া, সাংবাদিক কিংবা প্রশাসনের কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে তেমন কোনো কিঞ্চিত পরিমাণ প্রমাণ করতে পারে, আমি সংসদ থেকে পদত্যাগ করে সংসদের পবিত্র রক্ষা করব বলে আমি ওয়াদা করেছি। আজকে নয়, ২০১৫ সালে মাদক ব্যবসায়ীর যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে মাদকের কোনো অফিস ছিল না। মাদকের কিছু কিছু কর্মকর্তা মাদকের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী করার কারণেই রিপোর্ট দেওয়া হয়।

শওকত মাহমুদ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আজকের মন্তব্যের বিষয়ে আপনার কী প্রতিক্রিয়া?

আবদুর রহমান বদি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেটা বলেছেন, কিছুদিন আগে আমি সংসদে চ্যালেঞ্জ করেছি। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়, আপনার সংস্থার কেউ যদি বলতে পারে মাদক ব্যাবসায়ীদের সাথে শুধু কথা বলেছে, কিংবা কারও কাছ থেকে টাকা নিয়েছে এবং কারও সাথে সম্পৃক্ত আছে- সেটা যদি কোনো সংস্থা বলতে পারে তাহলে আমি শাস্তি মাথা পেতে নেব এবং সংসদ থেকে পদত্যাগ করে চলে যাব।

শওকত মাহমুদ: আপনি কি অনুভব করেন-বাংলাদেশের মানুষের যে একটা ধারণা, সেই ধারণার মধ্যে আপনার নাম চলে আসে ইয়াবার সঙ্গে। প্রমাণ নেই, আপনি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত না। কিন্তু আপনি এটা কীভাবে নেন। বাংলাদেশের মানুষ মনে করে যে, আপনার নামটি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এটা আপনার মধ্যে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে?

আবদুর রহমান বদি: আমি উখিয়া-টেকনাফের জনপ্রতিনিধি। আমি যেখান থেকে নির্বাচিত হয়েছে, আমার এলাকার লোকজন জানে আমি জীবনে একটা সিগারেট খাইনি, গাঁজা খাইনি, মদ খাইনি, আড্ডা দেই না, পান খাই না-আমার চরিত্র সম্পর্কে তারাই এটা জানে। সুতরাং তারা আমার চরিত্র সম্পর্কে ভালো বলতে পারবে। কিছু মিডিয়া আছে, যারা ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদেরকে আটক করা হয়েছে। আপনারা জানেন, অনেক অনেক সাংবাদিক কারাগারে আছেন। আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি বিধায়, প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বিধায় এটা যড়যন্ত্র হয়েছে বিএনপি-জামায়ত এটাই যড়যন্ত্র করছে।

সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা: জেলা আইনশৃঙ্খলার যে বৈঠক হয়, যেখানে মাদক বিষয়ে কোনো এজেন্ডাই আপনি তুলতে দেন না-এই অভিযোগ একটি পত্রিকা করেছে।

আবদুর রহমান বদি : আইন-শৃঙ্খলার কমিটিতে মাদকের বিরুদ্ধে আমি সব সময় প্রতিবাদ করি...।

উপস্থাপক : আপনার এলাকায় কারা মাদক ব্যবসায়র সঙ্গে জড়িত? 

আবদুর রহমান বদি: সেটা সাংবাদিক এবং প্রশাসন জানেন-তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করেন। 

উপস্থাপক: কিন্তু আপনি তো সংসদ সদস্য, সেহেতু আপনার কাছেও তথ্য থাকার কথা। 

আবদুর রহমান বদি : আমার কাছে যে তথ্যগুলো আছে সেটা মিডিয়া ও প্রশাসনকে বলেছি। 

উপস্থাপক: এটাও তো একটা মিডিয়া এবং টেলিভিশন চ্যালেন। আপনি যদি আমাদের একটু বলেন?

আবদুর রহমান বদি : আপনার একটি কমিটি করে আমার এলাকায় আসেন, আমি একটা একটা হিসাব করে  বুঝিয়ে দেব।

উপস্থাপক: এই পুরো এলাকায় কেন আপনার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র হচ্ছে?

আবদুর রহমান বদি: কক্সবাজারে চারটি আসন আছে। তিনটি আসন বিএনপি নির্বাচিত করে নিয়ে যায়। কিন্তু উখিয়ার আসনটি নিতে পারে না আমার কারণে, আমার জনপ্রিয়তার কারণে। আমার এই জনপ্রিয়তার কারণে আমাকে ধ্বংস করার জন্য এই যড়যন্ত্র শুরু করেছে বিএনপি-জামায়তের যারা আছে তারাই। দেখুন আজকেও বিএনপির একজন হাইকমান্ড বলেছেন আমার নাম ধরে। 

সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা: এ পর্যন্ত আমার যে তালিকা পাচ্ছি তাতে আপনার বিরুদ্ধে ৯০টি মামলা কেন?

আবদুর রহমান বদি: বাংলাদেশের কোনো মিডিয়ার কাছে যদি কোনো তথ্য থাকে আপানারা প্রমাণ করুন, আমি কারও সাথে কথা বলেছি, কারও সাথে ঘুরেছি, কারও কাছ থেকে টাকা খেয়েছি কিংবা কারও সাথে সম্পৃক্ত আছি। অনেক লোক ধরা পড়েছে ৫ লাখ, ১০ লাখ, ১৫ লাখ ইয়াবা নিয়ে ধরে পড়েছে, তাদের ধরে নিয়ে এসে তাদের কাছ থেকে খোঁজ-খবর নেন বদি কোনো একটা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল কিনা।

সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা: আপনার এলাকায় মাদক বিষয়ে রিপোটিং করতে গিয়ে সাংবাদিকরা মারধরের শিকার হন। একাত্তর টিভির যে প্রতিনিধি ও ক্যামেরাম্যান-তাদের ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়েছিল এবং প্রতিনিধিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। আপনি কি এগুলো সম্পর্কে জানেন- কারা মাদকবিরোধী রিপোর্ট করতে গেলে সাংবাকিকদের ওপর হামলা করে?

আবদুর রহমান বদি: আমি এগুলো সম্পর্কে অবগত রাখি। যারা এগুলো করেছে তাদের এলাকাছাড়া করেছি খবর নেন। তাদের ঘরবাড়ি ছাড়া করেছি। তাদের বাবাকে দেয়নি, মাকে দেয়নি, তাদের পুরো গোষ্ঠীকে এলাকায় থাকতে দেয়নি।  

সবশেষে একটি অনলাইন পোর্টালে নিউজ পড়ে শোনানো হয়। যেখানে বদির ফুফাতো ভাইকে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। 

আবদুর রহমান বদি: কোন ভাই, কি করে না করে আপনারা কি মনে করেন সেটা বলেন? এখন আমার তো কোনো ভাই নেই, আমি একটাই ভাই। আমি এক ভাই, দুই বোন।

উপস্থাপক: মানে, আপনার কোনো আপন ভাই নেই তাই তো?

আবদুর রহমান বদি: না, না, না, আমি একজনই।

সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা: আপনার দুই সৎ ভাই আব্দুল আমিন ও ফয়সাল রহমান-শোনা যায় তারাও ওই ব্যবসায় জড়িত?

আবদুর রহমান বদি: আব্দুল আমিনের নামে টেকনাফ ও কক্সবাজারের মধ্যে, যে ব্যবসায়ী আব্দুল আমিন তার বিরুদ্ধে ১০/১৫টা মামলা আছে। সে কারাগারে গেছে, কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লুকিয়ে আছে। তাদেরকে বাদ আমার ভাইয়ের নামগুলো সেখানে দেওয়া হয়।


 
বিডি-প্রতিদিন/২৪ মে, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর