১৮ আগস্ট, ২০১৮ ০৮:২৬
নির্বাচনী ঈদে মাঠে প্রার্থীরা

৩০০ আসনে তৎপর আওয়ামী লীগের ১৫০০ প্রার্থী

রফিকুল ইসলাম রনি

৩০০ আসনে তৎপর আওয়ামী লীগের ১৫০০ প্রার্থী

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতি আসনে গড়ে পাঁচজন প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। কিছু আসনে একক প্রার্থী আবার কিছু আসনে ডজন প্রার্থীও রয়েছেন। ফলে গড়ে ৩০০ আসনে নৌকার টিকিট পেতে চান ১৫০০ প্রার্থী। এ বিপুল সংখ্যক প্রার্থী সারা দেশের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় যে যার মতো করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকি থাকায় নতুন মুখের পদচারণায় তৃণমূলে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিশেষ করে পবিত্র ঈদুল আজহাকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে তৃণমূল রাজনীতি। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের নানা রঙের পোস্টার-ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। তৃণমূলকে আস্থায় নিতে যে যার মতো দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।   

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই এবার কঠিন হবে। তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে চার স্তরের জরিপ মিলিয়ে দেখা হবে। সে কারণে বর্তমান এমপি কিংবা আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক ছাত্রনেতা— এসব যোগ্যতা থাকলেই নৌকার টিকিট পাওয়া যাবে না। যাকে মনোনয়ন দিলে জিতে আসার সম্ভাবনা বেশি, আগামী নির্বাচনে তাকেই দেওয়া হবে নৌকার টিকিট। ক্ষমতাসীন নেতারা বলেন, প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে যিনি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, তাকেই মনোনয়ন দেবেন শেখ হাসিনা। সে কারণে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখন তৃণমূলের দিকে ঝুঁকছেন। তারা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন। আসন্ন ঈদুল আজহায় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বেশি করে গরু-ছাগল কোরবানি দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এটাই শেষ ঈদ। সে কারণে ঈদকে গুরুত্ব দিচ্ছেন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।  

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থীরা রয়েছেন ফরিদপুর-১ আসনে। এ আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। এখানে মনোনয়ন চান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী সিরাজুল ইসলাম, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দিলীপ রায় ও কৃষক লীগের সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান দোলন। তারা সমানতালে এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

শরীয়তপুর-২ আসনের প্রতিটি গ্রাম, পাড়া মহল্লায় গণসংযোগ, কর্মিসভা করে চলেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম। কুমিল্লা-৪ আসনের বর্তমান এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী এবিএম গোলাম মোস্তফা, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ। চাঁদপুর-৩ আসনে বর্তমান এমপি ডা. দীপু মনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন। তারা দুজনই সমানতালে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়াও নৌকার টিকিটের প্রত্যাশায় আছেন মো. রেদওয়ান খান (বোরহান)। নোয়াখালী-৬ আসনে দলীয় এমপি বেগম আয়েশা ফেরদাউস ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী, মাহমুদ আলী রাতুল ও আমিরুল ইসলাম নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করে চলেছেন। চট্টগ্রাম-৬ আসনে দলীয় এমপি এবিএম ফজলে করিম ছাড়াও মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন নিয়মিত গণসংযোগ করছেন।   দিনাজপুর-১ আসনে বর্তমান এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপালের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় আছেন সাবেক ছাত্রনেতা আবু হোসাইন বিপু। গাইবান্ধা-৫ আসনের এমপি ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া ছাড়াও এই আসনে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি কর্মিসভা, আলোচনা সভা ও পথসভা করে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন তিনি। নওগাঁ-৫ আসনে ব্যাপক গণসংযোগ করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের ছেলে নিজাম উদ্দিন জলিল জন। নাটোর-৪ আসনে বর্তমান এমপি আবদুল কুদ্দুস নিয়মিত এলাকায় থাকছেন। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চান এমপিকন্যা যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী ও সাবেক ছাত্রনেতা আহমদ আলী মোল্লা। ঢাকা-২ আসনে গণসংযোগে ব্যস্ত আছেন উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। ঢাকা-৫ আসনে বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার পাশাপাশি তারপুত্র মশিউর রহমান সজল মোল্লা, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোয়ার হোসেন মনু গণসংযোগে তৎপর। ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জোর প্রচারণায় আছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। পিরোজপুর-১ আসনের এমপি এ কে এম আউয়াল ছাড়াও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলম ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না। সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে বর্তমান এমপি গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন দলীয় ও সরকারি কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণের পাশাপাশি এলাকায় গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই আসনে দলের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও বসে নেই। এদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা বিশিষ্ট শিল্পপতি লুত্ফর রহমান দিলু, কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুইট ও প্রয়াত এমপি ইসহাক আলীর পুত্র ইমন তালুকদার। পাবনা-৪ আসনে বর্তমান এমপি শামসুল রহমান শরিফ ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটন প্রচারণায় আছেন। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে এমপি আলী আজগর টগর ছাড়াও এই আসনে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পারছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হাসেম রেজা। মাগুরা-১ আসনে প্রতিটি গ্রাম ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ছাড়াও উঠান বৈঠক, সরকারের উন্নয়নগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে মতবিনিময় সভা করছেন তিনি। বাগেরহাট-৪ আসনে নিয়মিত গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ। খুলনা-৩ আসনে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এসএম কামাল হোসেন। সাতক্ষীরা-৪ আসনের বর্তমান এমপি এসএম জগলুল হায়দার ব্যতিক্রমী নির্বাচনী প্রচারণায় আছেন। তিনি কখনো কৃষক শ্রমিকদের সঙ্গে ভাত ভাগাভাগি করে খান, কখনো গভীর রাতে নিজ কাঁধে চাল, ডাল ও মুরগি নিয়ে হাজির হন অনাহারির বাড়িতে। আবার শ্রমিকদের সঙ্গে কৃষি কাজেও দেখা যায় তাকে। পটুয়াখালী-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজালের পাশাপাশি গণসংযোগ করছেন কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ হাওলাদার। বরিশাল-৩ আসনে নিয়মিত যাচ্ছেন সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার। ময়মনসিংহ-৫ আসনে জোর প্রচারণা শুরু করেছেন সাবেক এমপি শামসুল হকের ছেলে মোহাম্মদ তারেক। নেত্রকোনা-১ আসনে এবার নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন সাবেক এমপি মোস্তাক আহমেদ রুহী। নেত্রকোনা-২ আসনে নৌকার টিকিট চান সাবেক এমপি আশরাফ আলী খান খসরু, সাবেক ছাত্রনেতা চিত্রনায়ক রানা হামিদ। নেত্রকোনা-৩ আসনে বর্তমান এমপি ইফতিকার উদ্দিন পিন্টু ছাড়াও জোর প্রচারণায় আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। তিনি গত কয়েক বছর ধরেই সপ্তাহে দুই দিন নিয়মিত এলাকায় যাচ্ছেন এবং দলীয় কর্মসূচি ছাড়াও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরছেন। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আরও আছেন যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল, সাবেক এমপি মঞ্জুর কাদের কোরাইশী। নেত্রকোনা-৪ আসনে রেবেকা মমিনের পাশাপাশি নিয়মিত এলাকায় যাচ্ছেন সাবেক ছাত্রনেতা শফি আহমেদ। নেত্রকোন-৫ আসনে ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা তুহিন আহম্মদ খান দলীয় মনোনয়ন চান। কিশোরগঞ্জ-২ আসনে সোহরাব উদ্দিন এমপি ছাড়াও জোর প্রচারণায় রয়েছেন সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ। এ ছাড়াও এ আসনে নৌকা পেতে চান সাবেক ছাত্রনেতা ড. জায়েদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে সুকুমার রঞ্জন ঘোষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভুইয়া ডাবলু, সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম সরোয়ার কবির গণসংযোগে আছেন। নরসিংদী-৫ আসনে বর্তমান এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর পাশাপাশি সমানতালে গণসংযোগ, কর্মিসভা ও মতবিনিময় করে চলেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওছার ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর